Mood Swings during Periods: পিরিয়ডের সময় মুড সুইংয়ের মাত্রা পাহাড়প্রমাণ হয়? জানুন কারণ ও প্রতিকার
মাসিকের সময় মহিলাদের মেজাজ দ্রুত বদলে যায়, যেমন হঠাৎ রাগ, কান্না বা অস্থির লাগে। আর এগুলোকে 'মুড সুইং' (Mood Swings) বলা হয়। এটি সাধারণত মাসিক পূর্ববর্তী লক্ষণ বা প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS)-এর অংশ।

প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন মহিলাদের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ঠিক যে সময়টায় তাঁদের মাসিক চলে। পিরিয়ডের জন্য কখনও হয় পেটে ব্যথা, কখনও আবার লাগে বিরক্তি। আসলে মাসিকের সময় মহিলাদের মেজাজ দ্রুত বদলে যায়, যেমন হঠাৎ রাগ, কান্না বা অস্থির লাগে। আর এগুলোকে ‘মুড সুইং’ (Mood Swings) বলা হয়। এটি সাধারণত মাসিক পূর্ববর্তী লক্ষণ বা প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS)-এর অংশ।
মুড সুইং কেন হয়?
পিরিয়ডের আগে এবং চলাকালীন মুড সুইং-এর জন্য দায়ী প্রধান কয়েকটি কারণ নিয়ে ব্যাখ্যা করা হল।
১. ইস্ট্রোজেন (Estrogen) হরমোনের পতন: মাসিকের ঠিক আগে এই হরমোনটির মাত্রা দ্রুত কমে যায়। ইস্ট্রোজেন মস্তিষ্কের সেরোটোনিন (Serotonin – যা মেজাজ ভাল রাখতে সাহায্য করে) লেভেলের উপর প্রভাব ফেলে, ফলে মেজাজ খারাপ হয়।
২. প্রোজেস্টেরন (Progesterone) হরমোনের পরিবর্তন: প্রোজেস্টেরন হরমোনও মাসিকের আগে হঠাৎ কমে যায়। এই হরমোনটি শান্ত থাকার অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত। এর অভাবে উদ্বেগ বা অস্থিরতা বাড়ে।
৩. সেরোটোনিন হ্রাসের প্রভাব: সেরোটোনিন একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার যা মেজাজ, ঘুম এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এর মাত্রা কমে গেলে বিষণ্ণতা এবং খিটখিটে মেজাজ দেখা দেয়।
৪. পিএমএস (PMS) বা পিএমডিডি (PMDD): বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুড সুইং PMS-এর একটি অংশ। তবে, গুরুতর ক্ষেত্রে এটি প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ডিস্ফোরিক ডিসঅর্ডার (PMDD) হতে পারে, যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন।
৫. শরীরের ক্লান্তি ও ব্যথা: পিরিয়ডের সময় তলপেটে ব্যথা (Cramps), মাথাব্যথা, এবং ক্লান্তি মুড সুইংকে আরও বাড়িয়ে তোলে। শারীরিক অস্বস্তি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
৬. স্ট্রেস হরমোন (Cortisol) বৃদ্ধি: শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা কর্টিসোল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা উদ্বেগ ও অস্থিরতা বাড়ায়।
৭. রক্তে শর্করার তারতম্য: অনেক মহিলার পিরিয়ডের আগে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। রক্তে শর্করার দ্রুত উত্থান-পতন মুড সুইং-এ প্রভাব ফেলতে পারে।
৮. ঘুমের অভাব: হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে বা ইনসমনিয়া দেখা দিলে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৯. থাইরয়েড বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে, এই হরমোনের তারতম্য থাইরয়েড বা অন্যান্য অন্তঃস্রাবী গ্রন্থিজনিত সমস্যায় ভুগলে আরও তীব্র হতে পারে।
মুড সুইং মোকাবিলার টিপস –
এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য যে কোনও মহিলা নিম্নলিখিত ৯টি পদক্ষেপ নিতে পারেন।
১. নিয়মিত ব্যায়াম: হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম বা যোগাভ্যাস করুন। এটি এন্ডরফিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা মেজাজ ভাল রাখে।
২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলুন। ফল, সবজি এবং গোটা শস্য বেশি করে খান।
৩. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল কমানো: পিরিয়ডের আগে চা, কফি এবং অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত করুন, কারণ এগুলো উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন রাতে ৭-৮ ঘণ্টা নির্বিঘ্নে ঘুমোতে হবে।
৫. জল পান: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন।
৬. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: মেডিটেশন, ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা পছন্দের শখের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমান।
৭. ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট: চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
৮. ডায়েরি লেখা: আপনার মেজাজের পরিবর্তনগুলি এবং উপসর্গগুলি একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন, যাতে আপনি প্যাটার্নটি বুঝতে পারেন।
৯. পেশাদার সাহায্য: যদি মুড সুইং এতটাই তীব্র হয় যে আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে (PMDD-এর লক্ষণ), তবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
