Kali Puja: কালীমূর্তিতে শক্তির আরাধনা ঠিক কত বছর ধরে বয়ে আসছে?

বঙ্গীয় দিনপঞ্জিতে দ্বিপান্বিতা অমাবস্যা বছরে দুই বার আসে প্রথমটি হল আশ্বিনের দীপান্বিতা অমাবস্যা যে দিনটি বাঙালি জনমানসে মহালয়া নামে অধিক খ্যাত।

Kali Puja: কালীমূর্তিতে শক্তির আরাধনা ঠিক কত বছর ধরে বয়ে আসছে?
কালীমূর্তি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 29, 2021 | 5:22 PM

বাংলায় শক্তিপূজোর ইতিহাস বেশ পুরনো।কালীপুজো কবে শুরু হয়েছে, কে শুরু করেছিলেন, সেই নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে বিস্তর। অনেকের মতে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগিশ বঙ্গদেশে প্রথম আজকের পরিচিত কালীমূর্তির অবতারনা করেন। আগমবাগিশের এই শক্তি সাধনার স্থানটি হলো নবদ্বীপ। মতান্তরে শান্তিপুর। বর্তমানে নবদ্বীপ ও শান্তিপুর উভয় শহরেই আগমবাগিশ মাতার পূজা হয়। একদা বাংলার জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নবদ্বীপই ছিল বাংলার শক্তি উপাসনার পীঠস্থান। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগিশ চৈতন্য সমসাময়িক ছিলেন। বাংলার বৈষ্ণব আন্দোলন শক্তি উপাসনার চেয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। বৈষ্ণব আন্দোলনে জোয়ার আসলেও বাঙালির মূল চরিত্র মানে মনশীলতায় শক্তি আরাধণা প্রেম থেকেই যায়।

চৈতন্য মহাপ্রভুও সেই মিশ্র মতাদর্শের প্রাণ পুরুষ ছিলেন। বৈষ্ণব বসন ধারণ করে অন্তরে কি ভীষণ পরিমান শাক্ত হওয়া যায় স্বয়ং চৈতন্য তাঁর মূঢ় প্রতীক। আজকের অনেক বাঙালিই জানেন না যে ওড়িশার দুর্গাপুজো প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো চৈতন্যের হাতেই। তিনিই বৈষ্ণব প্রভাবিত উৎকলের বুকে বঙ্গীয় শাক্ত সংস্কৃতি প্রবিষ্ট করান। কারণ, তাঁর মধ্যে নিহিত ছিল শাক্ত বীজ। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ চৈতন্য সমসাময়িক ছিলেন। পণ্ডিত আগমবাগিশ ছিলেন কালীউপাসক। বাঙলায় শক্তি আরাধনা আগেও হয়েছে কিন্তু কালীমূর্তির অবতারণা করে শক্তির আরাধনা সম্ভবত তাঁর হাতেই।

কথিত আছে নিদ্রারত আগমবাগিশ সপ্নাদেশে অবগত হলেন যে প্রত্যুষে নিদ্রাভঙ্গ হলে প্রথমে তিনি যে মহিলার দর্শন পাবেন সেই নারীর অনুকরণের হবে দেবী কালীর মূর্তি। কালী আরাধনার রীতি মেনে আজও নবদ্বীপ শহরে কালীপুজোর সকালেই মায়ের মূর্তি নির্মাণ করা হয় এবং পুজো শেষে ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই প্রতিমা নিরঞ্জন দেওয়া হয়। কালক্রমে, নবদ্বীপ থেকে এই উৎসব সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। আগমবাগিশ কালী আরাধনা করেছিলেন কার্তিকের দীপান্বিতা অমাবস্যায়। বঙ্গীয় দিনপঞ্জিতে দ্বিপান্বিতা অমাবস্যা বছরে দুই বার আসে প্রথমটি হল আশ্বিনের দীপান্বিতা অমাবস্যা যে দিনটি বাঙালি জনমানসে মহালয়া নামে অধিক খ্যাত। তাই অনেক বাঙালি গৃহেই মহালয়ার প্রত্যুষে ও সন্ধ্যে দীপ জ্বালিয়ে আজও আঁধার দূরীকরণের প্রথা চলে আসছে। আর দ্বিতীয়টি হল কর্তিকের দ্বিপানিতা অমাবস্যা বা কালীপুজো। সুপ্রাচীন কালথেকেই নবদ্বীপের পটপূর্ণিমা/রাস উৎসব একটি শাক্ত উৎসব রূপেই পরিগণিত হতে থাকে। রাস পূর্ণিমার দিন ২২-৩০ হাতের বৃহদাকার কালীমূর্তির আরাধনায় আজও সমগ্র নবদ্বীপবাসী মেতে ওঠেন।

বঙ্গদেশে নানা ধরনের কালীমূর্তির প্রচলন রয়েছে যেমন- দক্ষিনা কালী, বামা কালি, চিৎ কালী, শীর কালী,রক্ষা কালী, শ্মশান কালী, রণ কালী, ভদ্র কালী, গুহ্যকালী, শ্যামা কালী ইত্যাদি। প্রত্যেক রূপের পূজা পদ্ধতি আলাদা।

বাংলায় কালীপূজা জনপ্রিয়তা লাভ করে নদীয়া রাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায়। নদীয়া রাজ নিজে ঘোরতর শাক্ত ছিলেন। নবদ্বীপ তথা বাংলায় বৈষ্ণব ধর্ম যখন স্বতস্ফূর্ত ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তখন শাক্ত অনুরাগী নবদ্বীপবাসী কৃষ্ণচন্দ্রের দ্বারস্থ হন। লোকমুখে এও প্রচলিত শাক্ত পণ্ডিতদের অনুরোধে কখন সখন রাজা স্বয়ং পাইক বরকন্দাজ পাঠিয়ে বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার আটকানোর চেষ্টা করেছেন। কাজেই মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় শাক্ত আন্দোলন আবার গতি ফিরে পায়। রাজা কালীপূজায় উৎসাহ দিতেন। উদ্যোগী ও উৎসাহিদের পুরস্কারও ঘোষণা করেন। নবদ্বীপ থেকে কালীপূজা ক্রমশ বাংলার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। নবদ্বীপের রাসে পূর্ণিমাতে এলানিয়া কালীপূজার শুরু হয়।

তথ্য সৌজন্যে সপ্তডিঙ্গা

আরও পড়ুন: দক্ষিণেশ্বর মন্দির গড়তে সেই সময় কত টাকা খরচ হয়েছিল, জানেন?