Masik Shivratri 2022: শিবের অপর নাম ত্রিপুরারি- নীলকন্ঠ- পশুপতি! জেনে নিন মহেশ্বরের অজানা কথা
পৌরাণিক কাহিনিতে ইনি বিবিধ নামে পরিচিত। এঁর আদি নাম রুদ্র। বেদে রুদ্রের রূপ বর্ণনায় দেখা যায়- ইনি ধ্বংসকারী শক্তি, মর্তে ভয়ঙ্কর বৃষের মতো আর আকাশে লোহিত বরাহের মতো।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে-তিন প্রধান দেবতার (ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বা মহাদেব) অন্যতম। ইনি স্বয়ম্ভূ। ইনি ধ্বংসের অধিকর্তা। এঁর প্রধান অস্ত্র ত্রিশূল। ধনুকের নাম পিনাক। ইনি বিশ্ব ধ্বংসকারী পাশুপাত অস্ত্রের অধিকারী। মহাপ্রলয়কালে ইনি বিষাণ ও ডমরু বাজিয়ে ধ্বংসের সূচনা করেন। ইনি মহাযোগী, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, নির্গুণ ধ্যানের প্রতীক। ইনি রক্তমাখা বাঘছাল নিম্নাঙ্গে ধারণ করেন, কিন্তু উর্ধ্বাঙ্গ নগ্ন। তবে কখনো কখনো কৃষ্ণসার হরিণের চামড়া উত্তরীয় হিসাবে উর্ধ্বাঙ্গে পরিধান করেন। এঁর শরীর ভস্ম দ্বারা আবৃত। মাথায় বিশাল জটা। কপালের নিম্নাংশে তৃতীয় নেত্র, উধ্বাংশে অর্ধচন্দ্র ও কণ্ঠে সাপ ও কঙ্কাল মালা।
ইনি কঠোর তপস্যার দ্বারা অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। হিমালয়ের কৈলাসে ইনি সিদ্ধ, চারণ, কিন্নর, যক্ষ, রাক্ষস, অপ্সরা, গন্ধর্ব এবং প্রমথগণ পরিবেষ্ঠিত অবস্থায় বাস করেন। কুবের এঁর সম্পদ রক্ষা করেন। এঁর স্ত্রী সতী। গঙ্গাও তাঁর স্ত্রী ছিলেন বলে অন্যত্র জানা যায়। তাঁর দুই পুত্রের নাম কার্তিক, গণেশ এবং দুই কন্যার নাম লক্ষ্মী ও সরস্বতী। এঁর বাহন বৃষ ও সহচর নন্দী ও ভৃঙ্গী।
ব্রহ্মা একবার মহাদেবকে তাচ্ছিল্য করায়, ইনি নখ দিয়ে ব্রহ্মার একটি মাথা বিচ্ছিন্ন করেন। সেই থেকে ব্রহ্মার পাঁচ মাথার পরিবর্তে চারটি মাথা দাঁড়ায়। ইনি সকল দেবতা দ্বারা পূজিত হন। মহাভারতের মতে ব্রহ্মা থেকে পিশাচ পর্যন্ত সবাই তাঁর পূজা করেন।
পৌরাণিক কাহিনিতে ইনি বিবিধ নামে পরিচিত। এঁর আদি নাম রুদ্র। বেদে রুদ্রের রূপ বর্ণনায় দেখা যায়- ইনি ধ্বংসকারী শক্তি, মর্তে ভয়ঙ্কর বৃষের মতো আর আকাশে লোহিত বরাহের মতো। ইনি বিদ্বান, দেবতাদের কর্মস্রষ্টা ও স্বাক্ষী। ইনি মানুষের রোগ-শোকের কারণ। একই সাথে ইনি যখন ভয়ানক তখন রুদ্র, আর যখন কল্যাণকর তখন শিব। মহাকালরূপী রুদ্র সংহারকারক। প্রলয় শেষে ধ্বংসের মধ্য থেকেই তাঁর উৎপত্তি ঘটে। সে কারণে ইনি শিব, শঙ্কর বা ভৈরব নামে চিহ্নিত। জনন শক্তির পরিচায়ক হিসাবে শিবলিঙ্গ। এর সাথে যোনি প্রতীক যুক্ত হয়ে প্রজনন বা সৃষ্টিশক্তিরূপে হিন্দু ধর্মে পূজিত হয়। ধ্বংস ও সৃষ্টি উভয়েরই কারণ বলে ইনি ঈশ্বর। ইনি অল্পে সন্তুষ্ট হন বলে- এঁর নাম আশুতোষ। পশুদের অধিপতি বলে ইনি পশুপতি নামে খ্যাত।
সমুদ্র মন্থন করার পর, উত্থিত অমৃত দেবতারা গ্রহণ করার পর, অসুররা পুনরায় তা মন্থন করে। এই অতিরিক্ত সমুদ্র মন্থনজনীত কারণে হলাহল নামক বিষ উত্থিত হয়। এর ফলে সমগ্র চরাচরের প্রাণীকূল বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। এই বিষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেবতারা মহাদেবের শরণাপন্ন হলে, মহাদেব উক্ত বিষ শোষণ করেন। বিষের প্রভাবে তাঁর কণ্ঠ নীল বর্ণ ধারণ করেছিল বলে ইনি নীলকণ্ঠ নামে পরিচিত হন।
কথিত আছে- দেবতাদের জয় করার জন্য তারকাসুর এক হাজার বৎসর তপস্যা করেন। কিন্তু তিনি এর ফলে কোন বর লাভে ব্যর্থ হলেও- তাঁর মাথা থেকে এক ধরণের তেজ নিসৃত হতে থাকে। এই তেজ দেবতাদের দগ্ধ করতে থাকলে- দেবতারা ব্রহ্মার শরাণাপন্ন হন। তখন ব্রহ্মা তারকাসুরের কাছে এসে বর প্রার্থনা করতে অনুরোধ করেন। তারকাসুর ব্রহ্মার কাছে দুটি বর প্রার্থনা করেন। বর দুটি হলো- তাঁর চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ জন্মগ্রহণ করবে না এবং মহাদেবের ঔরসজাত পুত্রের হাতেই তাঁর মৃত্যু হবে। পরে মহাদেবের পুত্র কার্তিকেয় এই অসুরকে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এরপর তারকাসুরের তিন পুত্র- তারকাক্ষ, কমলাক্ষ ও বিদ্যুন্মালীকে হত্যা করে ত্রিপুরারি নামে পরিচিত হন।
আরও পড়ুন: Gods of Hinduism: স্রষ্টা হওয়া সত্ত্বেও হিন্দুধর্মে ব্রহ্মার পুজো করা হয় না, কারণ জানলে শিউরে উঠবেন