Durga Puja 2022: ২২৯ বছর আগে আরেক রামের হাতে অকাল বোধন হয়েছিল হাওড়ায়
Howrah News: হাওড়া জেলার প্রায় ২৫০ বছরের পুরানো পুজো, শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশে। আরেক রামের হাতে শুরু হওয়া সেই অকাল বোধনের গল্প TV9 বাংলায়
হাওড়া: রামরাম আত্মহত্যা করবেনই। আর তাঁকে বাঁচাবেনই বৃদ্ধা। সুদীর্ঘ টানাপোড়েনের পর শেষ পর্যন্ত জিতল জীবন। কিন্তু এই এত্তটুকু কম বয়সে জীবনের প্রতি কীসের এত অনীহা? বুড়ির প্রশ্নের জবাবে রামরাম কারণ হিসাবে যা জানালেন তা সংক্ষেপে অসহনীয় অর্থনৈতিক দুর্দশা। ঘটনার স্থান- হাওড়ার কোনার নিকটবর্তী খসমরা এলাকা। কাল- আনুমানিক ১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দ। পাত্র- শ্রী রামরাম ঘোষ। পাত্রী- (যেন দৈব প্রেরিত) জনৈক সধবা বৃদ্ধা।
তা জীবন তো আপাতত বাঁচল। কিন্তু একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত তো দরকার। তবে লর্ড কর্ণওয়ালিস নয়, এ ক্ষেত্রে বন্দোবস্ত করতে এগিয়ে এলেন জীবন বাঁচানো সেই বৃদ্ধা। দারিদ্র ও দুর্গতি নাশের জন্য দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পুজোর কথা রামরামকে বলেন তিনি। কিন্তু অর্থ কোথায়? আরে এখানেই তো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত! রামরামকে নিয়ে সেই বৃদ্ধা এরপর সোজা হাজির হলেন বর্ধমানের মহারাজের সভায়। বৃদ্ধা নিজের সঞ্চয়ের ১০০১টি মুদ্রা রাজাকে দিলেন এবং এর বিনিময়ে মহারাজ রামরামকে জীবন ধারণ এবং মাতৃ পূজার জন্য হাওড়ার খসমারা এলাকাতেই ১০০ একর জমি দেন। উল্লেখ্য, সে সময় হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বর্ধমানের মহারাজের রাজত্বের অংশ ছিল। এতটুকু পড়ে যদি ওই সধবা বৃ্দ্ধাকেই ছদ্মবেশী দুর্গা মনে হয়, তাহলে খুব একটা দোষ নেই। কারণ, পরবর্তীতে তাঁকে আর রামরামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শোনা যায়নি।
তা জমিজমা তো হল। এবার পুজোর জন্য বৈদিক পুরোহিত খুঁজে পেতে নাজেহাল হলেন রামরাম। এর মধ্যে আবার স্বয়ং মা দুর্গা রামরামকে স্বপ্নাদেশ দিলেন, হাওড়ারই জগৎবল্লভপুরেরর নিজবালিয়া গ্রামের সিংহবাহিনীর সেবাইত মুখোপাধ্যায় পরিবারের নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণই যেন তাঁর ভদ্রাসন প্রতিষ্ঠা করেন (পূজা করেন)। সেই মতোই উদ্যোগী হলেন রামরাম। ঘোষ পরিবারে প্রথম পুজো গোলপাতা দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীকালে পূজার জন্য নির্মিত হয় একটি অস্থায়ী বেদী। পরবর্তীকালে তৈরি হয় নাটমন্দিরও।
এতটুকু বলার পর হাওড়া জেলার অন্যতম প্রাচীন বনেদি খসমরার ঘোষ পরিবারের প্রবীণ/প্রবীণারা জানাচ্ছেন, আনুমানিক ১৭৬৫ থেকে ১৭৭০ সালের মধ্যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল বটে কিন্তু তার কোনও লিখিত নথি নেই। বরং ১৭৯৪ সালে পুজোর জন্য নাটমন্দির তৈরি করা হয়েছিল তা খোদাই করা আছে। আর সেই সূত্র ধরেই এই পরিবারের পুজোর প্রাচীনত্ব হিসেব করা হয়। সেই হিসাবে এ বছর এই পুজো ২২৯ বছরে পা দিল।
এই পরিবারে পূজিতা দেবী দুর্গার কিছু অলৌকিক কাহিনীও শোনা যায়। যেমন,কোনও এক সময়ে দেবীর মণ্ডপটি বর্তমানে যে স্থানে রয়েছে সেখান থেকে অন্যত্র সরাতে হয়েছিল। কিন্তু দেবীর ফের স্বপ্নাদেশে তা আর করা হয়নি। এই পরিবারে দুর্গাপুজো কালিকাপুরাণ মতে সম্পন্ন হয় এবং সন্ধিপুজোর পদ্ধতি আবার দেবীর স্বপ্নাদিষ্ট পথে। আগাগোড়া পুজোতে বৈদিক আচমন করা হলেও সন্ধিপুজোয় দেবীকে চামুণ্ডা রূপে পুজোর ক্ষেত্রে তান্ত্রিক আচমন করা হয়। আগে পুজোতে ছাগ বলি দেওয়া হলেও ২০১৮ সালে পুজোর ২২৫তম বর্ষ থেকে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে।
জানা যায়, এই ঘোষ পরিবার আগে বসবাস করত বর্ধমান জেলায়। এই পরিবারের লম্বোদর ঘোষের পুত্র দামোদর ঘোষ ও প্রপৌত্র রামরাম ঘোষ দুর্ভিক্ষের সময়ে রুজি রোজগারের তাগিদে প্রথমে কলকাতায় আসেন। পরে সেখানে জীবিকা নির্বাহ দুঃসহ হয়ে উঠলে রামরাম ঘোষ সপরিবারে কলকাতা ছেড়ে পায়ে হেঁটে উপস্থিত হন হাওড়া জেলার কোনা এলাকায়। কিন্তু কোনা তৎকালীন সময়ে বন্যাপ্রবণ হওয়ায় রামরাম ঘোষ আরও এগিয়ে গিয়ে খসমরা গ্রামে বসবাস শুরু করেন।
আর সেখানেই দুঃসহ দারিদ্রের জ্বালা থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা এবং তারপরের কাহিনী তো আগেই পড়ে ফেললেন। যাক তাহলে হাওড়া জেলায় রামের অকাল বোধনের কাহিনীই তো দাঁড়াল, কী বলেন!