‘ঠাকুর আসবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’! চলে গিয়েছে দশমী। পার হয়েছে একাদশী, দ্বাদশীও! নিয়ম মেনে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে প্রতিমার। কোথাও ভাসান হয়েছে দশমীতে আবার কোথাও তারপরে। কোনও কোনও পুজো আবার ডাক পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী পুজোর কার্নিভালে। সুন্দর করে ট্যাবলো সাজিয়ে প্রদর্শনী করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া। শুধু কার্নিভালে নয় বাঙলার দুর্গাপুজো মানে কিন্তু কেবল মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জন নয়। বিসর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক রীতিনীতিও।
দশমী পুজোর শেষে প্রথম হয় ঘট বিসর্জন। এরপর আসে বরণের পালা। সধবা মহিলারা শাড়ি, গয়না, পায়ে আলতা পরে বরণ করে নেন দেবীকে। এবার যে যেতে হবে তাঁকে, ফিরতে হবে শ্বশুর বাড়ি কৈলাসে। বরণের পরেই সিঁদুর খেলার পালা। একটা সময় এই আচার কেবল সধবা মহিলাদের জন্য হলেও এখন ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়।
সিঁদুর খেলার শেষে শোভাযাত্রা করে প্রতিমা নিরঞ্জনের পালা। সেই শোভাযাত্রাও হয় দেখার মতো। কোথাও থাকে লাইটের গাড়ি,কোথাও ব্যান্ড পার্টি, কোথাও আবার থাকে ছৌ নাচের বন্দোবস্ত। পাড়ার সকলে মিলে একসঙ্গে ঢাকের তালে হাতে ধুনুচি নিয়ে নাচতে নাচতে বিসর্জন ঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা। এ যেন বাঙালির কাছে এক নস্টালজিয়া। তাই পুজোর মধ্যেও দশমীর গুরুত্ব অন্যতম। সারা বছর বাড়ি, অফিস, পরিবারের চিন্তায় মগ্ন থাকা মধ্যবিত্ত মানুষটিও এই দিন নিজের সব চিন্তা ভুলে, খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে মেতে ওঠেন মাকে বিদায় জানানোর উৎসবে সামিল হতে। তাই দশমী যে কতটা আনন্দের, তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।
বাড়ির মেয়ে যখন বড় হয়ে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়, তা পরিবারের কাছে যতটা আনন্দের ততটাই দুঃখের। উমাও তো বাড়ির মেয়েই। তাই সে যখন মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গলোকে গমন করেন তখন মন খারাপ তো হবেই। আনন্দ, নাচ, গানের মধ্যেও কোথাও যেন সর্বদা থাকে একটা বিষাদের সুর। তবে এতেই কিন্তু ভেঙে পড়েনা বাঙালি। বরং বুক বাঁধে আশায়। কারণ ওই যে কথাই বলে না ‘সব শেষেরই একটা নতুন শুরু থাকে’। এখানেও ঠিক তাই। দশমী মানেই কিন্তু পুজোর শেষ নয়। বরং বিসর্জনের শেষে বাড়ি ফিরে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে, শুভ বিজয়া জানানো। আর তারপরেই উদ্যমে পুজোর তোরজোড় করা। মা আসছে যে। ঘরে ঘরে আয়োজন চলে লক্ষ্মী পুজোর।
তা ছাড়া দুর্গাপুজোর প্রহর গোনাও শুরু হয়ে যায় সেই দশমীর দিন থেকেই। এখন থিম পুজোর যুগ। তাই পরের বছর পুজোয় কী হবে, তা এই বছর থেকেই ঘোষণা করে দেন অনেক পুজো কমিটিই। তাই দশমীর ঘুগনী আর মিষ্টি খেতে খেতেই যেন মন বলে ওঠে ‘আসছে বছর, আবার হবে’।