ভাদ্র ও মাঘমাসের শুক্লাচতুর্থীকে গণেশ চতুর্থী বলা হয়। হিন্দু বিশ্বাসে এই দিনটি গণেশের জন্মদিন। গণেশ চতুর্থী সংক্রান্ত একটি কিংবদন্তী হিন্দুসমাজে প্রচলিত, একবার গণেশ চতুর্থীতে প্রতি বাড়িতে মোদক ভক্ষণ করে ভরা পেটে ইঁদুরে চেপে ফিরছিলেন গণেশ। পথে ইঁদুরের সামনে একটি সাপ এসে পড়লে সে ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। এতে গণেশ পড়ে যান ও তার পেট ফেটে সব মোদক রাস্তায় পড়ে যায়। গণেশ উঠে সেগুলি কুড়িয়ে পেটের মধ্যে পুরে পেটের ফাটা জায়গাটি ওই সাপ দিয়ে বেঁধে দেন। আকাশ থেকে চন্দ্র তা দেখে হেসে ফেলেন। তাই গণেশ শাপ দেন যে চতুর্থীর দিন চাঁদ কেউ দেখবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গণেশ অত্যন্ত মোদকপ্রিয় দেবতা। অন্যমতে, এই দিনে শিব গণেশকে লুকিয়ে কার্তিকেয়কে একটি ফল দিয়েছিলেন। চন্দ্র তা দেখে হেসে ফেলেন বলে শিব চন্দ্রকে অভিশাপ দেন।
‘গণেশ’ নামটি একটি সংস্কৃত শব্দবন্ধ। ‘গণ’ ও ‘ঈশ’ শব্দদুটির সন্ধির মাধ্যমে এই শব্দটির উৎপত্তি। ‘গণ’ শব্দের অর্থ একটি গোষ্ঠী, সমষ্টি বা বিষয়শ্রেণি এবং ‘ঈশ’ শব্দের অর্থ ঈশ্বর বা প্রভু। তামিল ভাষায় গণেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল ‘পিল্লাই’।‘পিল্লাই’ শব্দের অর্থ ‘শিশু’ এবং ‘পিল্লাইয়ার’ শব্দের অর্থ ‘মহান শিশু’। শ্রীলঙ্কার সিংহল বৌদ্ধ অঞ্চলগুলিতে গণেশ ‘গণ দেবিয়ো’ নামে পরিচিত। সেখানে বুদ্ধ, বিষ্ণু, স্কন্দ ও অন্যান্য দেবতার সঙ্গে গণেশের পূজাও প্রচলিত আছে। প্রাক-বৈদিক ও বৈদিক যুগের দেবতাদের মধ্যে গণেশের গুণাবলি বিদ্যমান ছিল। কিন্তু সেই গুণাবলি গণেশের উপর আরোপ করে পৃথক দেবতা রূপে তার পূজা প্রথম প্রসার লাভ করে গুপ্তযুগে।
গণেশ উত্সব প্রায় ১০দিন ধরে চলে। রঙ ও আনন্দের এক মহামিলনের উত্সব। এই ১০দিনের উত্সব জুড়ে মোদকের সুস্বাদু স্বাদ না নিলে তা অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে। তামিলভাষায় মোদককে কোজাকাত্তাই, কন্নড়ে মোধাকা ও কদুবু ও তেলেগুতে কমদুম নামে পরিচিত। হিন্দু পৌরাণিত কাহিনি অনুসারে, গণেশ লাড্ডু , মোদক ও অন্যান্য সব মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হল মোদক। তবে জানেন কী, গণেশ পুজোর সময় কেন ২১টি মোদক ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়?
পৌরানিক কাহিনি অনুযায়ী, একদিন ঋষি অত্রি গণেশকে ভোজনের জন্য আমন্ত্রিত করেন। ঋষি অত্রির স্ত্রী অনুসূয়া আহার পরিবেশন করলে ভোজন শুরু করেন গণেশ। কিন্তু কিছুতেই গণেশের ক্ষুধা নিবৃত্তি হয় না। তাই দেখে অনুসূয়া চিন্তিত হয়ে পড়েন। বাড়িতে কোনও অতিথি তিনি নারায়ণ স্বরূপ। তাঁকে অতৃপ্ত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া অপরাধ। তখন অনুসূয়া ভাবেন গণেশকে তৃপ্ত করতে কিছু মিষ্টি দেন। সেই সময় অনুসূয়ার কাছে অনেকগুলি মোদক প্রস্তুত করা ছিল। সুস্বাদু মোদক খেয়ে গণেশের মন ও পেট দুই-ই ভরে যায়। তিনি প্রসন্ন হয়েছেন তা হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ও গণেশকে শান্ত করতে শিব ২১ বার ঢেকুর দিয়েছিলেন।
কাহিনি অনুসারে, যখন ভগবান শিব ২১ বার ঢেকুর তোলেন এবং দেবী পার্বতী জানতে পারলেন যে মোদক তাঁদের দুজনকে সন্তুষ্ট করেছে, তখনই তিনি একটি ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে গণপতির ভক্তরা সর্বদা তাঁকে ২১ টি মোদকের ভোগ চরান। তারপর থেকে গণেশ পুজোয় মোট ২১টি মোদক সাজিয়ে ভোগ হিসেবে অর্পন করা হয়।
আরও পড়ুন: Ganesh Chaturthi 2021: ঐতিহ্য মেনে গণেশ পুজোয় কী কী ভোগ দেওয়া হয়, তার রেসিপি জেনে নিন…
আরও পড়ুন: সামনেই গনেশ চতুর্থী! বাড়িতেই বানান মহারাষ্ট্রের জনপ্রিয় মালাই মাওয়া মোদক