AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

সত্যি কথা বললেই কেন ‘টিক টিক’ করে ডাকে টিকটিকি? বারাসতের মেয়ের জন্যেই কি আজও এমনটা হয়!

প্রচুর মানুষ মনে করেন কোনও কথা বলার সময় হঠাৎ টিকটিকি ডেকে উঠলে, তা যে সত্যি কথা, সেটা প্রমাণিত হয়। এই ধরুন কোনও ব্যক্তি একটি বিষয়ে সম্ভবনা বা ভবিষ্যতে হতে পারে এমন কিছু নিয়ে কথা বলছেন, তার মাঝে হঠাৎ 'টিক টিক' করে শব্দ করে উঠল টিকটিকি। তা হলে?

সত্যি কথা বললেই কেন 'টিক টিক' করে ডাকে টিকটিকি? বারাসতের মেয়ের জন্যেই কি আজও এমনটা হয়!
সত্যি কথা বললেই কেন 'টিক টিক' করে ডাকে টিকটিকি? বারাসতের মেয়ের জন্যেই কি আজও এমনটা হয়!
| Updated on: Mar 08, 2025 | 7:52 PM
Share

প্রচুর মানুষ মনে করেন কোনও কথা বলার সময় হঠাৎ টিকটিকি ডেকে উঠলে, তা যে সত্যি কথা, সেটা প্রমাণিত হয়। এই ধরুন কোনও ব্যক্তি একটি বিষয়ে সম্ভবনা বা ভবিষ্যতে হতে পারে এমন কিছু নিয়ে কথা বলছেন, তার মাঝে হঠাৎ ‘টিক টিক’ করে শব্দ করে উঠল টিকটিকি। তা হলে? এই পরিস্থিতিতে পড়লে অনেকেই মনে করেন, যে কথা বলার সময় টিকটিকি শব্দ করেছে, সেটি সত্যি হবে। আর এখানেই যোগ রয়েছে খনার উপাখ্যানের। কে এই খনা? জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী বাঙালি নারী ছিলেন খনা। বাঙালি লোকসংস্কৃতিতে এখনও অমৃতবাণীর মতো খনার বচনের প্রচলন রয়েছে। বাংলা সাহিত্যের আদি কীর্তির মধ্যে পড়ে খনার বচন। এ বার ফেরা যাক সত্যি কথা বলার সময় টিকটিকি ডাকা এবং খনার তার সঙ্গে সত্যই কোনও যোগ রয়েছে কিনা সেই প্রসঙ্গ।

কাকতালীয় ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খনা নামের এক বিদুষী মহিলার লোককাহিনি। প্রচলিত মত অনুসারে, খনার জন্ম হয়েছে এখনকার পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের দেউলি গ্রামে। খনার বাবার নাম অনাচার্য। খনা বেড়ে উঠেছিলেন রাজা ধর্মকেতুর শাসনকালে। খনার সঙ্গে বরাহ-মিহিরের এক যোগ রয়েছে।

বরাহ এবং মিহির কে? উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্যের শাসনকালে রাজ জ্যোতিষী ছিলেন বরাহ। আর তাঁর পুত্র ছিলেন মিহির। মিহিরের জন্মের পর বরাহ ভবিষ্যৎ গননা করে দেখেছিলেন, ছেলের আয়ু মাত্র ১ বছর। এরপর আশাহত হয়ে মিহিরকে একটা তামার পাত্রে শুইয়ে সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেন তিনি। সেই পাত্র ভাসতে ভাসতে এসে থামে সিংহল দ্বীপে। সেখান থেকে সিংহলের রাজা তাঁকে তুলে লালন পালন করেন।

পরবর্তীতে এই মিহিরের সঙ্গে খনার বিয়ে হয়। আর তাঁরা থাকতে শুরু করেন বঙ্গদেশে। পরে তাঁরা উজ্জয়িনীতে এসে বরাহের সঙ্গে দেখা করেন। বরাহ তাঁর ছেলের আয়ু নিয়ে করা গননার কথা বললে, খনা তা ভুল প্রমাণিত করেন। এরপর বরাহ অবাক হয়ে ভাবতে থাকেন খনার শক্তি সম্পর্ক। এরই মাঝে এক জোৎস্নারাতে রাজা বিক্রমাদিত্য আকাশের দিকে তাকিয়ে নক্ষত্রের সংখ্যা জানতে চান। বরাহ এবং মিহির সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও খনা অনায়াসে সেই প্রশ্নের উত্তর দেন। খনার এই বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে রাজা বিক্রমাদিত্য মুগ্ধ হয়ে খনাকে তাঁর রাজসভার দশম রত্ন হিসেবে সম্মানিত করবেন মনোস্থ করেন। কিন্তু পুত্রবধুর খ্যাতি মেনে নিতে পারেননি বরাহ।

একজন নারী পাণ্ডিত্যে তাঁকে অতিক্রম করে যাবে! আত্মমগ্ন বরাহ এরপর মিহিরকে তাঁর স্ত্রী তথা খনার জিভ কেটে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। বাবার আদেশ শুনে মিহির চমকে উঠেছিলেন। কিন্তু খনা শান্ত হয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁকে যেন ৭দিন সময় দেওয়া হয়। সেই সময়ের মধ্যে তিনি দেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষদের জন্য অনর্গল কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান। এই ৭দিন ৭ রাত্রির অনর্গল বচনই খনার বচন নামে পরিচিত।

৭ দিন শেষ হওয়ার পর খনার জিভ কেটে নেওয়া হয়। আর খনার সেই কাটা জিভ খেয়ে ফেলে একটি টিকটিকি। ফলে সে খনার জ্ঞান লাভ করে। কিন্তু সে তো কথা বলতে পারে না। তাই মানুষ সত্যি কথা বললে শব্দের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় যে কোন কথাটি সঠিক। কথিত আছে ওই টিকটিকি বংশ বিস্তার করে। আর বর্তমানকালের সমস্ত টিকটিকিই ওই টিকটিকিটির উত্তর প্রজন্ম। বৈজ্ঞানিকভাবে টিকটিকির ডাকা এবং সেই সময় বলা কথা সত্যি হওয়ার কোনও ব্যাখা নেই। তবে এই লোককাহিনি বেশ প্রচলিত।