Durga Puja 2023: সিংহ-ই কেন দেবীর বাহন? শাস্ত্র ও পুরাণেও রয়েছে অলৌকিক তথ্য
Goddess Durga: অনেকেরই মনে প্রশ্ন তৈরি হয়ে থাকে, দুর্গার বাহ সিংহ কেন? শ্রীচণ্ডীতে সিংহকে মহাসিংহ, ধূতসট নামে উল্লেখ করা হয়েছে। দুর্গাপুজোর সময় সিংহকেও অন্য মাত্রা পুজো করা হয়ে থাকে। দেবীপুরাণে উল্লেখ রয়েছে, সিংহের শরীরের বিভিন্ন স্থান বিষ্ণু, শিব, দুর্গার মতো দেবদেবীরা অবস্থান করে থাকেন।

বাংলায় দুর্গার যে মৃন্ময়ী মূর্তি দেখা যায়, তা ভারতের আর অন্য কোনও কোথাও দেখা যায় না। বাঙালি মতে, দেবী দুর্গাকে বাড়ির মেয়ে হিসেবেই মানা হয়। কৈলাশ পর্বতে স্বামী মহাদেবের ঘর থেকে মর্ত্যে বাপের বাড়িতে ৪দিন আসেন। মেয়ের মতো করে স্নেহ-যত্নে ও বিশেষ আচার মেনে আরাধনা ও সেবা করা হয়। এমন প্রথা অত্যন্ত বিরল। গোটা বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তি দেখা যায়, তা পরিবারসমন্বিতা দেবীর মূর্তি। যেখানে দেবী দুর্গা সিমহাবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী রূপে দেখা যায়। দেবীর মাথার মুকুটে শোভা পায় মহাদেবের মুখ। দশভুজার পায়ের নীচে অবস্থান করে বাহন সিংহ ও মহিষাসুর। দেবী দুর্গার ডানদিকে শোভা পায় দেবী লক্ষ্মী ও নীচে গণেশ। অন্যদিকে, বামপাশে থাকে দেবী সরস্বতী ও নীচে কার্তিক। সকলেই নিজ নিজ বাহনের উপর অধিষ্ঠান করে থাকেন। আবার বাংলায় এই মূর্তি অনেকসময় আলাদাও হয়ে থাকে। কারণ বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় দুর্গার এক বিশেষ মূর্তি দেখা যায়। বি্শেষ করে বিষ্ণুপুরের ভিন্ন স্থানে দেবীর ডানদিকে থাকেন গণেশ ও লক্ষ্মী, বাঁদিকে কার্তিক ও সরস্বতী। পরিবারের সঙ্গেই থাকেন শিব ও দেবীর দুই সখী। জয়া ও বিজয়া। সাধারণত বাংলায় সপরিবারে দুর্গা পূজিত হয়ে থাকে।
অনেকেরই মনে প্রশ্ন তৈরি হয়ে থাকে, দুর্গার বাহ সিংহ কেন? শ্রীচণ্ডীতে সিংহকে মহাসিংহ, ধূতসট নামে উল্লেখ করা হয়েছে। দুর্গাপুজোর সময় সিংহকেও অন্য মাত্রা পুজো করা হয়ে থাকে। দেবীপুরাণে উল্লেখ রয়েছে, সিংহের শরীরের বিভিন্ন স্থান বিষ্ণু, শিব, দুর্গার মতো দেবদেবীরা অবস্থান করে থাকেন। ধ্য়ানমন্ত্রে, সিংহকে বিষ্ণুর একটি রূপ বলে মনে করা হয়। তাই দুর্গার বাহনকে বিষ্ণুরূপী সিংহ বলেও মনে করা হয়ে থাকে। এছাড়া কালিকাপুরাণ অনুসারে, দুর্গার বাহন হওয়ার লড়াইয়ে মহাদেব শবদেহ, ব্রহ্মা রক্তপদ্ম, বিষ্ণু সিংহ রূপে রূপ ধারণ করেছিলেন। এছাড়া মার্কেণ্ডেয় পুরাণ মতে, হিমায় প্রথম দুর্গাকে সিংহ প্রদান করেন। শিবপুরাণ অনুসারে, শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গাকে সিংহ প্রদান করেন। পুদ্মপুরাণে এও উল্লেখ রয়েছে, দুর্গার অত্যন্ত ক্রোধ থেকেই সিংহের সৃষ্টি হয়েছিল। আবার দেবীপুরাণ মতে, বিষ্ণুই দু্গার বাহন হিসেবে সিংহের রূপ ধারণ করেছিলেন। জঙ্গলের রাজ তো বটেই, সিংহ সব দেবদেবীর বাহনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
শাস্ত্র অনুসারে, সিংহ হল রজোগুণের এক শক্তিশালী উচ্ছ্বাসের প্রতীক। শুধু তাই নয়, সিংহ হল মানুষের পশুত্ববিজয়েরও প্রতীক। তবে এখন দেবীর মূর্তির নীচে সিংহ দেখা যায়, তা আগে বাংলায় এমন মূর্তি দেখা যেত না। ঘোড়ার মতো সিংহের মূর্তি দেখা যেত। কোথাও একটি আবার কোথাও দুয়ের অধিকও সিংহ দেখা যেত। পরবর্তীকালে দুর্গার বাহন হিসেবে আফ্রিকার জঙ্গলের সিংহের মতো দেখতে মূর্তি দেখা যায়। দুর্গাপুজোর সময় আলাদ করে বাহন পুজোরও চল রয়েছে।
দুর্গার বাহন নিয়েও রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। পুরাণ মতে, শিবকে স্বামী হিসেবে পেতে হাজার বছর ধরে কঠিন তপস্যা করেছিলেন দেবী পার্বতী। তপস্যার কারণে দেবী অন্ধকারে একসময় মিশে গিয়েছিলেন। তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব পার্বতীকে বিয়ে করতে রাজিও হয়ে যান। তবে বিয়ের একদিন পর পার্বতীকে কালী বলে সম্বোধন করায় অপমানিত হয়ে কৈলাস ত্যাগ করে ফের তপস্যায় মগ্ন হয়ে যান তিনি। তপস্যারত দেবীকে একা দেখতে পেয়ে শিকার করার ইচ্ছায় এক ক্ষুধার্ত সিংহ ধীরে ধীরে তার দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু দেবী এমন কঠিন তপস্যায় মগ্ন থাকেন যে দেবীর সামনে চুপ করে বসে পড়েন। বসে বসে সিংহ ভাবে কখন তপস্যা ভেঙে দেবী উঠে পড়বেন। কখন দেবীকে হত্যা করে ক্ষুধা মেটাবেন। এরমধ্যে বহু বছর কেটে যায়। কিন্তু সিংহ তার নিজের জায়গা থেকে একবিন্দু নড়ে না। এদিকে দেবী পার্বতীর তপস্যা সম্পন্ন হওয়ার পর ফের মহাদিদেব আবির্ভূত হলে পার্বতীকে গৌরবর্ণা বলে সম্বোধন করেন। তাই দেবী দুর্গার অপর নাম গৌরী। তবে গঙ্গায় যখন পার্বতী স্নান করে ওঠন, তখন অন্ধকারের দেবী শ্যামা বা কালী আবির্ভূত হন। তাঁকে কৌশিকী বলা হয়ে থাকে। পাশাপাশি এতবছর ধরে দেবীর পাশে সিংহ অপেক্ষা বসেছিল, সেই সিংহই বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন দেবী পার্বতী।
