Happy Birthday Sachin Tendulkar : কী ভাবে ‘ঈশ্বর’ হলেন সচিন তেন্ডুলকর?

Sachin Tendulkar : কেউ কেউ তারকা হওয়ার জন্য জন্মান। কেউ কেউ মহাতারকা হতে পারেন। কেউ কেউ হিসেব-নিকেষ উল্টে দিয়ে কিংবদন্তি হয়ে যান। আবার কেউ কেউ কিংবদন্তিদের কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। সচিন তেন্ডুলকর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠতে পেরেছিলেন।

Happy Birthday Sachin Tendulkar : কী ভাবে 'ঈশ্বর' হলেন সচিন তেন্ডুলকর?
কী ভাবে 'ঈশ্বর' হলেন সচিন তেন্ডুলকর?Image Credit source: গ্রাফিক্স: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 24, 2023 | 2:21 PM

অভিষেক সেনগুপ্ত

৫০-এ পা দিলেন সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar) জীবনের ক্রিকেট ম্যাচে হাফসেঞ্চুরির (Birthday) জন্য সারা বিশ্বের নানা মহলের প্লেয়ার, সতীর্থরা মাস্টার ব্লাস্টারকে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিয়েছেন। খেলা ছেড়েছেন অনেক দিন। কিন্তু আজও রেকর্ডের খাতায় মলিন তিনি। খেলা ছেড়েছেন অনেক দিন, কিন্তু আজও প্রাসঙ্গিক থেকে গিয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর। তাঁর সময়ের তো বটেই, বর্তমান প্রজন্মও তাঁকে আইডল করে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নপূরণের রাস্তায় ছুটে চলেছেন। যতদিন ক্রিকেট থাকবে, ততদিন ডন ব্র্যাডম্যান থেকে যাবেন। সচিন তেন্ডুলকরের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। শুধু রেকর্ডের জন্য? না। ক্রিকেটকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। মা-ঠাকুমাদের ‘পাশের বাড়ির ছেলে’ হয়ে ওঠার জন্য। সচিন মানে, স্বপ্নপূরণের আধার। সচিন মানে সেই চিরকালীন আবেগ, আবেদন, আব্দার। সচিন ক্রিজে আছেন মানে, বিশ্বাস অটুট, ভারত ম্যাচটা জিততে পারে! সচিন ঢুকে পড়েছিলেন রন্ধ্রে, ধমনীতে। শুধু ভারতবাসীর? না, সীমানা ছাড়িয়ে উপমহাদেশের। ক্রিকেট খেলিয়ে সব দেশের। সচিন কী ভাবে হয়ে উঠলেন ক্রিকেট ঈশ্বর? বিস্তারিত TV9 Bangla Sports এ।

উত্থান-পতনের জীবন। আলো-অন্ধকারের জীবন। এমন দীর্ঘ জীবন-সরণিতে কেউ কেউ হঠাৎ ভেসে ওঠেন। আবার হারিয়েও যান। ধীরে চলো, দূরে চলো— নীতি যাঁরা নেন, তাঁরা হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যান এভারেস্টের মাথায়। সচিন তেমনই। ভালোবেসে ক্রিকেটের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন নিজেকে। পঞ্চাশে পা দিয়েও সেই সাধনা থামবে না। হয়তো খেলবেন না, কিন্তু খেলার প্রতি আবেগ, ভালোবাসা থেকে যাবে। হাতের ব্যাটনটা অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাবেন, আমৃত্যু।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। ঝাঁকড়া চুলের এক বাচ্চা ছেলে পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলতে নামছেন। উল্টো দিকে ভয় ধরিয়ে দেওয়া পেস বোলাররা। ভয় পেলেনও। ক্রিজে আসা মাত্র ১৬ বছরের ছেলেটাকে বাউন্সারে অভ্যর্থনা জানাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তিনি পড়ে গেলেন মাটিতে। নাক ফেটে রক্ত পড়ছে। সাদা টি-শার্ট ভিজে যাচ্ছে রক্তে। ১৬ বছরের কারও সঙ্গে এমন হলে কী হতে পারত? হয়তো মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসত সে। কিন্তু কী আশ্চর্য, ১৯৮৯ সালের ওই দিন ছেলেটা রক্ত মুছে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘না, আমি খেলব।’

কেউ কেউ তারকা হওয়ার জন্য জন্মান। কেউ কেউ মহাতারকা হতে পারেন। কেউ কেউ হিসেব-নিকেষ উল্টে দিয়ে কিংবদন্তি হয়ে যান। আবার কেউ কেউ কিংবদন্তিদের কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। সচিন তেন্ডুলকর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠতে পেরেছিলেন। সব ধরণের ক্রিকেটে ১০০টা সেঞ্চুরি করা অলীক কল্পনা। তা যে বাস্তব হতে পারে, কুড়ি বছরের কেরিয়ারে দেখিয়েছিলেন। স্রেফ ক্রিকেট খেলেই যে ভারতরত্ন পাওয়া যায়, সচিনের আগে কে জানত!

স্কুলে রোজ মারামারি করা একটা ছেলেকে ক্রিকেটে দেওয়া হয়েছিল, যাতে শান্ত হতে পারে। দাদা অজিত তেন্ডুলকর ওই বাচ্চাকে নিয়ে যেতেন শিবাজী পার্কের মাঠে। রমাকান্ত আচরেকরের কোচিংয়ে। বুক সমান ব্যাট, শরীরের থেকে বড় ব্যাট, কোনও রকমে আঁকড়ে ধরে রাখা গ্লাভস সঙ্গী করে নেটে নামত সে। তারপর যেন পাল্টে যেত বাচ্চাটা। অবলীলায় মারত কভার ড্রাইভ, পুল, হুক, স্কোয়্যারকাট। তাকে ছাড়া বিস্ময়বালক আর কাকে বলা হবে! ১৯৮৮ সালে সেই বাচ্চার প্রথম দর্শন মিলল। বিনোদ কাম্বলির সঙ্গে জুটিতে সারদাশ্রম বিদ্যামন্দির স্কুলের হয়ে হ্যারিস শিল্ডের ম্যাচে ৬৬৪ রান করেছিলেন। সচিন একাই করেছিলেন ৩২৫ নট আউট। বাকিটা শুধু ইতিহাস নয়, একটা গোটা দেশের সংস্কৃতি, বিশ্বাস, স্বপ্নপূরণ।

২৪ বছরের কেরিয়ারে ভারতের হয়ে সব ধরণের ফর্ম্যাটে ৩৪৩৫৭ রান করেছেন সচিন তেন্ডুলকর। টেস্টে সর্বচেয়ে বেশি রান তাঁরই। সবচেয়ে বেশি ৫১টা সেঞ্চুরিও। ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টেস্টও (২০০) খেলেছেন। সবচেয়ে বেশি ওয়ান ডে-ও (৪৬৩) খেলেছেন সচিন। তাঁর ৪৯টা সেঞ্চুরি ওয়ান ক্রিকেটে আর কারও নেই। ওয়ান ডে ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও তাঁরই ছিল। ছ-ছ’টা বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০১১ সালে বহু প্রতিক্ষীত বিশ্বকাপ জয়। উইজ়ডেন তাঁকে ছাড়া সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার আর কাকে বাছতে পারত। এই ক্রিকেট খেলতে গিয়েই হারিয়েছিলেন বাবাকে। এই ক্রিকেটই আবার সব ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। মরুঝড়, সচিন আলা, কভার ড্রাইভ, বুস্টের বিজ্ঞাপন— স্মৃতির ঝুলিতে কত কত কী!

ঈশ্বর একদিনে তৈরি হন না। রক্ত-মাংসের মানুষকে ঈশ্বর হয়ে উঠতে আরও সময় লাগে। কয়েক দশক, কয়েক যুগ, সিকি কিংবা হাফসেঞ্চুরি। সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের ঈশ্বর হয়ে উঠতে লেগেছে ২৪ বছর!