Ranji Trophy 2023: ‘বঙ্গ ক্রিকেটে পছন্দ মতো দল হয়, প্রয়োজন মতো নয়’
Bengal vs Saurashtra, Ranji Trophy Final: তিন বছর আগে রাজকোটের ফাইনালে সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন অর্পিত বাসভড়া। আর প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন জয়দেব উনাদকাট। ইডেনের ফাইনালে দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা উনাদকাট আর প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ অর্পিত।
কলকাতা : অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সুমন্ত গুপ্ত, সুদীপ ঘরামি, আকাশ ঘটক। রঞ্জি ফাইনালে এঁদের অবদান ঠিক কী? দুই ইনিংসে ঈশ্বরণের ঝুলিতে ১৬ রান। রঞ্জি অভিষেক হওয়া সুমন্ত গুপ্তর দুই ইনিংস মিলিয়ে রান ২। সুদীপ ঘরামির সংগ্রহ ১৪। পেস বোলিং অলরাউন্ডার আকাশ ঘটক প্রথম ইনিংসে ১৭ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪। হাত ঘোরালেন মাত্র ৭ ওভার। রঞ্জি ফাইনাল হারের পর একরাশ হতাশা বঙ্গক্রিকেটমহলে। সুদীপ ঘরামির ক্ষেত্রে তবু বলা যায়, ফাইনালের আগে অবধিও ধারাবাহিক পারফরম্য়ান্স করেছেন। ফাইনালে সামান্য হলেও চেষ্টা দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই গোটা টুর্নামেন্ট থেকে বাংলার প্রাপ্তি ঠিক কী? উত্তর অজানা। এখনও ব্যাট হাতে ত্রাতা সেই ৩৮ বছরের ‘বুড়ো’ অনুষ্টুপ মজুমদার। এখনও দলের স্বার্থে হাঁটুতে চোট নিয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করে যান সাইত্রিশের মনোজ তিওয়ারি। উঠতি প্রজন্মের ক্রিকেটাররা আদৌ কি বাংলা দলের আবেগের গুরুত্ব বুঝছেন? এরও উত্তর অজানা। অন্যান্য রাজ্যগুলি যখন দেখাচ্ছে সাপ্লাই লাইন কী ভাবে তৈরি করতে হয়, বাংলা তখনও পিছিয়ে। এখনও ম্যাচ বাঁচাতে লড়তে হয় অনুষ্টুপকে। এখনও আঙুলে চোট নিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে হয় বাংলা ক্রিকেটের নীরব যোদ্ধাকে।
ঠিক কোন অঙ্কে ফাইনালের মতো মঞ্চে সুমন্ত গুপ্তকে খেলানো হল, তার যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলার কোচ-ক্যাপ্টেন ‘আস্থা’র কথা বলে ঢেকে দিচ্ছেন সুমন্তকে। কিন্তু রামপুরহাটের ক্রিকেটারকে ফাইনালে খেলানোর ঝুঁকি কেন নেওয়া হল তার সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও বঙ্গ ক্রিকেটমহলের অনেক সমালোচকের মুখেই শোনা গেল অনেক কথা। ৩২ বছর বয়সে সুমন্তকে খেলানোর পিছনে নাকি রয়েছে কোনও তৃতীয় পক্ষের হাত! যদিও এই তৃতীয় পক্ষ কে বা কারা তা সামনাসামনি বলতে চান না কেউই।
অভিমন্যু ঈশ্বরণ বড় মঞ্চে আর কবে রান করবেন? ইন্ডিয়া ‘এ’ দলে খেলছেন ঠিকই, কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ পেতে হলে আসল মঞ্চে পারফর্ম করতে হয়। সেমিফাইনাল বা ফাইনাল এলেই অভিমন্যুর ব্যাটে রানের খরা চলতে থাকে। আর সুদীপ ঘরামি, আকাশ ঘটকদের তো মাঠের চেয়ে বেশি মাঠের বাইরেই মন!
মনোজ তিওয়ারি, অনুষ্টুপ মজুমদার আর কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা। বাংলা ক্রিকেটে এই তিনজনের যা অবদান এবং যা আবেগ তাঁর ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না তরুণ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মধ্যে। ৩ বছর আগও রঞ্জি ফাইনালে হারের পর অনুষ্টুপ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট দিয়ে কবীর সুমনের একটি গানের লাইন লিখেছিলেন- ‘বারবার আসি আমরা দু’জন/বারবার ফিরে যাই/আবার আসব আবার বলব/শুধু তোমাকেই চাই’… ৩ বছর পরও সেই দূরত্ব ঘোচাতে পারলেন না রুকু। পরের বছর রঞ্জি খেলবেন কী না তা এখনও ঠিক করেননি। কিন্তু যা পরিস্থিতি এই দল থেকে মনোজ, অনুষ্টুপরা সরে গেলে হয়তো প্লেট গ্রুপে নেমে যাবে বাংলা!
অর্পিত বাসভড়া, চিরাগ জানি, জয়দেব উনাদকাটরা বছরের পর ঘরোয়া ক্রিকেটে শাসন করে যান। তিন বছর আগে রাজকোটের ফাইনালে সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন অর্পিত বাসভড়া। আর প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন জয়দেব উনাদকাট। ইডেনের ফাইনালে দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা উনাদকাট আর প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ অর্পিত। অভিমন্যু, সুদীপরা কি আদৌ শিখছেন? কান পাতলে শোনা যাচ্ছে একটা কথা। বঙ্গ ক্রিকেটে ‘পছন্দমতো দল হয়, প্রয়োজনমতো নয়।’