
কলকাতা: কত প্রশ্নই তো ওঠে! জবাব আর কে দেয়! অবসর নিয়ে গত কয়েক মাসে যে টন টন কাগজ, গুচ্ছ গুচ্ছ শব্দ উড়েছে। ছন্দ নেই। বয়স হয়েছে। রান পাচ্ছে না। গতির পিচে বেমানান। তারুণ্যের হাতে ব্যাট দিয়ে দিক! সব প্রশ্নের উত্তর এক বিকেলে দিয়ে দিলেন। বয়স প্রায় ৩৯। কিন্তু ব্যাট এখনও কথা বলে। এবং কী আশ্চর্য সমাপতন। যে সিডনিতে টেস্ট কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর, সেই সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডই মাথা নত করে কুর্নিশ করল ওয়ান ডে ফর্ম্যাটের এই প্রজন্মের কিংবদন্তিকে। তিনি আর কেউ নন, রোহিত শর্মা। ৩৩তম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি এল তাঁর ব্যাট থেকে। কেরিয়ারের ৫০তম সেঞ্চুরি। অনাস্থার এমন জবাব কবে আর এভাবে দিয়েছেন কেউ?
জবাব কেউ কেউ তুলে রাখেন, সময়ের জন্য। একদিকে যখন সদ্য প্রাক্তন অধিনায়ক সেঞ্চুরির পথে এগোচ্ছেন, তখন উল্টো দিকে কিং। পর পর দুটো ম্যাচে শূন্য করেছেন। বিরাট অ্যাডিলেডেই অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছেন কিনা, তা নিয়ে চর্চার শেষ নেই। সেই বিরাট কোহলিও দেখালেন, ফুরিয়ে গিয়েছেন তিনি, বলার সময় আসেনি। বলবেন তিনিই, সময় হলে। সিডনিতে এই বিরাটের হাত থেকে বেরোল ৭৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। ঝকঝকে, দায়িত্বশীল, ত্রুটিহীন। ৮১ বল নিয়ে ৭টা চার দিয়ে সাজিয়েছেন ইনিংস। একটা প্রশ্ন কোথাও যেন মাথা তুলে দাঁড়াল, রোহিত আর বিরাট পারফর্ম না করলে কি ভারত জিততে পারে না?
তিন ম্য়াচের সিরিজে ১-২ হেরেছে দল। প্রথম ম্যাচে মাত্র ৮ করে ফিরেছিলেন। তখন গেল-গেল রব উঠে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্য়াচে অ্যাডিলেডে পারফর্ম করেছিলে। তাও রোহিতকে নিয়ে বলা হচ্ছিল, সেঞ্চুরি তো এল না! এল, রাজকীয় ঢঙে। ১২৫ বল খেলেছেন। ধৈর্যশীল একদিকে, অন্যদিকে আগ্রাসন। দুইয়ের চমৎকার মিশেলে সাজালেন নট আউট ১২১ রানের ইনিংস। ১৩টা চার ও ৩টে ছয় দিয়ে। স্টার্ক, হ্যাজলউড, জাম্পা— সবাই ছিলেন। কিন্তু তিনি খেললেন মানে তো বাকিরা নীরব। আরও ভালো করে বললে, রোহিত-বিরাট খেললেন, রো-কো ঝলসে উঠলেন, ভারত জিতবে না, হয় নাকি! অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাট করে ২৩৭ করেছিল। ৬৯ রানের মাথায় ক্যাপ্টেন গিল ফিরে যান। তারপর আর ভারতকে চাপে ফেলতে পারেননি অজি বোলাররা।
রোহিতের ৫০তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির ১২টা এসেছে টেস্ট থেকে। ৫টা টি-টোয়েন্টি এবং ৩৩টা ওয়ান ডে। রোহিতই একমাত্র ব্যাটার, যাঁর ৫ বা তার বেশি সেঞ্চুরি রয়েছে তিনটে ফর্ম্যাটে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নবম সেঞ্চুরি এল।
একদিকে রোহিত, অন্যদিকে বিরাট— যেভাবে দুই তারকা ব্যাট করলেন সিডনিতে, আপাতত ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি অবসরের প্রসঙ্গ ধামাচাপা পড়ল। সেই সঙ্গে ২০২৭ সালের বিশ্বকাপের জন্য জোরালো দাবিও পেশ করে রাখলেন রো-কো।