
অভিষেক সেনগুপ্ত
ক্যাপ্টেন কাকে বলে? আপোসহীন। এক পকেটে টিমলিস্ট থাকতে পারে তাঁর। অন্য পকেটে পদত্যাগপত্র। স্বপ্ন দেখাবেন নেতা। বিশ্বাসে মিলিয়ে দেবেন বিশ্বকাপ। খুনে মেজাজে তৈরি করবেন দল। সারা বিশ্ব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে সাফল্য, ধারাবাহিকতা। ইতিহাসের সর্বোচ্চ মার্গে তুলে নিয়ে যাবেন দলকে। কঠিনতম পরিস্থিতিতেও ঠান্ডা মাথায় টানবেন দলকে। ট্রফির স্বাদ পেয়েও থেকে যাবেন নির্লিপ্ত। ইমরান খান, অর্জুন রণতুঙ্গা, রিকি পন্টিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, স্টিভ স্মিথ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মনসুর আলি খান পাতৌদি— পর পর কত নাম! দুর্ধর্ষ ক্যাপ্টেনদের তালিকাতেও কি বিরল হতে পারেন কেউ?
ক্যাপ্টেন মানে দলের মস্তিষ্ক, হৃদয়, অঙ্ক, নোটবুক, অভিভাবক, হাত-পা— সব! কেউ কেউ নেতার হটসিটে বসেও স্বার্থপরহীন ক্রিকেট খেলে যেতে পারেন! দল জিতলেও তাঁর ফর্ম নিয়ে কাটাছেঁড়া চলবে। দল হারলে কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন একা। সাফল্যটুকু তুলে রাখবেন বাকিদের জন্য। তাঁর জন্য থাকবে কাঁটার মুকুট। রোহিত শর্মা এই প্রজন্মের সেরা ক্যাপ্টেন। ক্রিকেট ইতিহাসেও অন্যতম সেরা কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতীয় ক্রিকেটকে সাবালক করেছিলেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি সেই ভারতকেই তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন সাফ্যলের মঞ্চে। তাঁর আমলেই তিনবার আইসিসি টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন ভারত। ২০০৭, ২০১১ আর ২০১৩-র পর যেন দরজা খুলতে খুলতে বন্ধ হয়ে যাওয়া। ধোনির পর আর এক ক্যাপ্টেন দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, ট্রফি জেতার জন্য দম লাগে। স্পর্ধা দরকার। সব বাধা ভেঙেচুরে দিতে পারে একটা টিমের সীমাহীন সাহস। ধোনির আসনে বসতে না পারলেও রোহিত শর্মা ইতিহাসই তৈরি করে গেলেন।
রবি-রাতে কি টিভির সামনে বসেছিলেন শমা মহম্মদ? একসপ্তাহে ‘মোটা’ থেকে রোগা হতে পারে না কেউ। রোহিতের ভুঁড়ি কমেনি। কিন্তু খেতাব যে বাড়ল? এবার কী বলবেন কংগ্রেস নেত্রী? যিনি বা যাঁরা ফর্ম নিয়ে দুর্ভাবনা লিপিবদ্ধ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাঁরাই বা কী ভাবছেন? জুন থেকে মার্চ— ৯ মাসে জোড়া আইসিসি ট্রফি দিয়ে গেল ভারতের এক ‘মোটা’ ক্যাপ্টেন। এমন সাফল্য যিনি দিতে পারেন, তিনি মেদবহুল কি না, জানার দরকার পড়ে কি? যেটা জেনে রাখা দরকার, বিরাটের মতো রোহিতেরও চতুর্থ আইসিসি ট্রফি।
৭৬ রানের ইনিংসটা যেন তুলে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য। সারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটাও হাফসেঞ্চুরি ছিল না। ঝড় তুলেছেন সাময়িক। দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ছন্দহারা, ছন্নছাড়া এক ক্যাপ্টেনকে নিয়ে চর্চার শেষ ছিল না। কিন্তু যিনি পারেন, তিনি পারেন। ফাইনালেই পারেন। দুবাইয়ের পিচ মন্থর। থমকে আসছে বল। স্পিন তৈরি করছে প্রতিরোধ। পেসারদের বলও যেন তুলতে পারছে না গতি। ব্যাটসম্যানদের বদ্ধভূমিতে দাঁড়িয়েও রোমাঞ্চকর দেখাল রোহিতকে। সাবলীল। বিস্ফোরক। আগুনে মেজাজ। এই তো রোহিত। যা কিছু টিমের জন্য। যা কিছু সাফল্যের নামে। যা কিছু দেশের জন্য।
তাঁকে কেউ মোটা বলার পর কী প্রতিক্রিয়া ছিল রোহিতের? বরাবর নীরব তিনি। শুধু ৯ মাসের মেয়াদটাই মাথায় রেখেছিলেন। এই ৯ মাসে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য রেখে গেলেন জোড়া সন্তান! এর থেকে ভালো জবাব আর কী হতে পারে?