
সব মিলিয়ে চার বার। দীর্ঘ ৯ বছর পর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। অনেকেই মনে করছেন তিন মাথাই পুরোপুরি বদলে দিয়েছে আরসিবিকে। আইপিএলের জন্মলগ্ন অর্থাৎ ২০০৮ সাল থেকে অন্যতম আলোচিত দল বেঙ্গালুরু। এর প্রধান কারণ হতে পারে, সুপারস্টারদের সমাবেশ! আরসিবি বলতে এটাই বোঝাতো।
প্রতি মরসুমেই আরসিবির টিম দেখে মনে হত, চ্যাম্পিয়ন হওয়া জলের মতো সহজ। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। শুধু তারকা ক্রিকেটার থাকলেই যে ট্রফি জেতা যায় না, বার বার প্রমাণ হয়েছে। এবারও ট্রফি আসবেই, গ্যারান্টি নেই। তবে বিশ্বাসটা তুলনামূলক বেশি। তার মানে কি এবার টিমে আরও বেশি সুপারস্টার রয়েছেন? তা নয়। বরং উল্টো। নামে সুপারস্টার নয়, কিন্তু প্রতিটি পজিশনের জন্য সেরা বিকল্প।
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মো বোবাত। আরসিবি টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে ক্রিকেট ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ করেছিল। পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে তিনি যে ভালো রেজাল্ট দিতে পারেন, ইংল্যান্ড বোর্ডে থাকাকালীন সেটা করে দেখিয়েছেন। আরসিবির হয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে কোচিং টিমে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও দীনেশ কার্তিক।
আইপিএলের মেগা অকশনে অনেক ক্ষেত্রেই আরসিবির সিদ্ধান্ত অবাক করেছে। লোকেশ রাহুল, ঋষভ পন্থ, শ্রেয়স আইয়ারের মতো ভারতীয় ক্রিকেটারদের তারা টার্গেট করতেই পারত। আরসিবি তা করেনি। সমর্থকরাও অবাক হয়েছিলেন। এমন কিছু প্লেয়ারের দিকে ছুটেছে আরসিবি, যাঁরা সেই অর্থে পরীক্ষিত নয়। জীতেশ শর্মা, সূয়াশ শর্মা, ক্রুনাল পান্ডিয়া, রোমারিও শেপার্ড, ফিল সল্ট। আর যাই হোক, তাঁদের কেউ ম্যাচ উইনার হিসেবে দেখেনি। এখানেই যেন বাজিমাত করেছে আরসিবি।
এখানেই শেষ নয়, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো বোলার, যাঁর কেরিয়ার বলা যায় শেষের দিকে। জশ হ্যাজলউড, যাঁকে চোটের জন্য বেশির ভাগ সময়ই পাওয়া যায় না। এমন ক্রিকেটারদের জন্য আরসিবির ঝাঁপানো অনেকের কাছেই অবাক লেগেছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্তগুলোই যেন টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরসিবি এ বার তারকা নির্ভর নয়। এমনকি বিরাট কোহলির মতো সুপারস্টার আউট হলেও সমর্থকরা হাল ছাড়ছেন না।
প্রতিটি ম্যাচে কেউ না কেউ ম্যাচ উইনার হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে তাদের অ্যাওয়ে ম্যাচের কথা বলতে হয়। এ মরসুমে সাতটি অ্যাওয়ে ম্যাচের মধ্যে সবকটিতেই জিতেছে আরসিবি। প্রথম কোয়ালিফায়ারে পঞ্জাব কিংসকে একপেশে লড়াইয়ে হারিয়েছে। আর তাতে নায়ক কারা? জশ হ্যাজলউড, যশ দয়াল, সূয়াশ শর্মা, ভুবির মতো বোলার। আর বিরাট কোহলির আউটের পর ফিল সল্টের সেই দুর্দান্ত ইনিংস। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে মায়াঙ্ক আগরওয়াল, জীতেশ শর্মার পারফরম্যান্স।
কার্যত প্রতি ম্যাচে আলাদা আলাদা উইনার। ক্রিকেট যে টিম গেম, তা ফাইনালের দৌড় অবধি প্রমাণ করতে পেরেছে আরসিবি। কিন্তু ওই যে, ট্রফি না এলে এই সাফল্যগুলো আগের মতোই ঢাকা পড়ে যাবে। অপেক্ষা শুরু হবে নতুন মরসুমের।