
স্বপ্ন যখন খুব বড় হয়, সেই স্বপ্নের পথে চলা খুব একটা সহজ হয় না। ওই অমসৃন পথে চলার সাহস দেখাতে পারে খুব কম মানুষ। এমন নয় যে পথে নামলেই সবাই সফল হয়। কেউ কেউ এত কিছু ভাবেন না। তাঁদের একটা লক্ষ্য থাকে, সাফল্যে পৌঁছনো। তিনিও বোধহয় তেমনই। মাত্র একটা ম্যাচ খেলেই আইপিএলে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের (Sunrisers Hyderabad) বোলার জিশান আনসারি (Zeeshan Ansari)। চলতি মরসুমে পয়েন্ট টেবলে বিশেষ ছাপ ফেলতে পারেনি সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আইপিএলে হায়দরাবাদের সূর্যোদয় এখনও না হলেও দিল্লির বিরুদ্ধে ডেবিউ ম্যাচে বোলিং করেই রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জিশান। ফাফ ডু প্লেসি, ফ্রেজার ম্যাকগার্ক এবং কেএল রাহুলের মতো বড় ব্যাটসম্যানদের আউট করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন জিশান। ম্যাচে একাই তিনটে উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। যদিও তার পরেও দলকে জেতাতে পারেননি।
বয়স ২৫। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। জিশানের বাবা একজন দর্জি। নিম্ন মধ্যবিত্ত এক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন জিশান। সংগ্রাম তাঁর চিরকালের সঙ্গী। যদিও পরিবার থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন সফল করার জন্য যথেষ্ট সমর্থন পেয়েছিলেন জিশান। যখন জিশান বয়সভিত্তিক দলে জায়গা পাননি, তখন তার বাবা একটু হতাশ হয়ে পড়েন। জিশানের পরিবার অনেক বড় ছিল এবং যদি সে চাকরি করত, তাহলে সে পরিবারকে সাহায্য করতে পারত। কিন্তু তাঁর বাবা তাঁকে ক্রিকেট খেলতে উৎসাহিত করতেন। কোচিং ফি, ক্রিকেট গিয়ার — এসবের জন্য অর্থ জোগাড় করাটা সহজ ছিল না। তিনি কাপড় সেলাই করেও তাঁর ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন।
১০-১১ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু হয় জিশানের। সেই সময় থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাঁর মধ্যে। প্রথম কোচ গোপাল সিংয়ের কথায়, জিশান কখনই ক্লান্ত হত না। তিনিই প্রথম জিশানকে স্পিন বোলিং শেখান। বাকিরা যখন ব্যাটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকত, জিশান তখন ঘন্টার পর ঘন্টা বল ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। নিজে নিজেই গুগলি শিখছেন। ভিন্ন অ্যাকশন ট্রাই করছেন। হঠাৎ করেই দিল্লি ক্যাপিটালস বিরুদ্ধে ম্যাচে জিশানকে নেওয়া হয়। প্যাট কামিন্সের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু জিশান তাঁর অধিনায়কের আস্থাকে সঠিক প্রমাণ করলেন এবং ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে দারুণ বোলিং স্পেল উপহার দিলেন দলকে।
এর আগে আনসারি ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন। সেই টুর্নামেন্টে ভারত রানার্সআপ হয়েছিল। সেই দলে ছিলেন ঋষভ পন্থও। ইউপি টি-টোয়েন্টি লিগের প্রথম আসরে ১২ ম্যাচে ৭.৬০ ইকোনমি রেটে ২৪ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হওয়ার পর আনসারি আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির নজর কেড়েছিলেন। হাই-স্কোরিং ফাইনালে, তিনি দুর্দান্ত বল করে মিরাট ম্যাভেরিক্সকে জয় এনে দেন। এই মরসুমে ৪০ লাখ টাকায় তাঁকে মেগা নিলাম থেকে দলে টেনে নেয় হায়দরাবাদ।
ঋষভ পন্থের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলার পর কিছুটা দেরিতেই যেন আইপিএল কেরিয়ার শুরু হল তাঁর। কিন্তু আইপিএলে এবার তাঁর আগমন বেশ চমকপ্রদই। যাকে হিন্দিতে বলে ‘দের সে আয়ে, পর দুরুস্ত আয়ে হ্যায়।’ শুরুটা দারুণ হয়েছে। এবার দেখার যে হায়দরাবাদকে পয়েন্ট টেবলে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে কতটা সাহায্য করতে পারবেন জিশান।