FIFA World Cup Jersey: যে এক ডজন জার্সি মাতিয়েছিল বিশ্বকাপ
Football World Cup: জার্সি শুধুমাত্র কোনও কাপড়ের টুকরোর কোলাজ নয়। জার্সিকে বলা যেতে পারে স্মৃতির ভান্ডার। যা আনন্দের মুহূর্তের কারণে ও হৃদয়বিদারক হিসাবে থেকে যায় ইতিহাসের পাতায়।
সুপ্রিয় ঘোষ
বিশ্বকাপের মঞ্চে ফুটবলাররা নিজেদের দেশের জার্সি পরে মাঠে নামেন। সেই জার্সি তাঁদের জাতীয় ঐতিহ্যের কথাও মনে করিয়ে দেয়। দূরদর্শনের সামনে বা মাঠে বসে থাকা সেই দেশের সমর্থকের বুকটা আনন্দে ও গর্বে ভরে ওঠে। জার্সি শুধুমাত্র কোনও কাপড়ের টুকরোর কোলাজ নয়। জার্সিকে বলা যেতে পারে স্মৃতির ভান্ডার। যা আনন্দের মুহূর্তের কারণে ও হৃদয়বিদারক হিসাবে থেকে যায় ইতিহাসের পাতায়। জার্সি নিয়েই অনন্য এক কাহিনি তুলে ধরল TV9 Bangla।
১. নেদারল্যান্ডস ১৯৭৪
বিশ্বকাপের আইকনিক জার্সি খুঁজতে বসলে তালিকায় সবার উপরে থাকবে যোহান ক্রুয়েফের নেদারল্যান্ডসের জার্সি। যা পরে তারা ১৯৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল। এই বিশ্বকাপে ক্রুয়েফের ব্যক্তিগত স্পনসর ছিল পুমা। কিন্তু বিশ্বকাপে ডাচদের জার্সি স্পনসর করেছিল অ্যাডিডাস। ফলে ক্রুয়েফের জার্সিতে অ্যাডিডাসের ৩টি স্ট্রাইপের বদলে ২টি স্ট্রাইপ রাখা হয়েছিল। যা এক কথায়, আর কখনও হয়নি।
২. ইউএসএ ১৯৯৪
১৯৯৪ সালে আমেরিকার জার্সির মতো জার্সি আর কোনও বিশ্বকাপে দেখা গিয়েছিল কি না! অনেক মানুষের ভালবাসা পেয়েছিল কি না! তা বলা মুশকিল। ডেনিমের উপর আমেরিকানদের টান বা ভালবাসার কথা সর্বজনবিদিত। আর ১৯৯৪ সালের অ্যাওয়ে জার্সি তৈরি হয়েছিল সেই রংয়েই। তার উপর ছিল আমেরিকার পতাকার স্টার। এই জার্সির উপর মেরুন রংয়ে লেখা হয়েছিল জার্সি নম্বর ও লোগো।
৩. ফ্রান্স ১৯৯৮
ঠিক যে বছর প্রথম বার বিশ্বজয় করে ফ্রান্স, সেই জার্সি আরও মনে রেখেছে বিশ্বের অগুনতি মানুষ। অ্যাডিডাসের তৈরি রয়্যাল ব্লু রংয়ের সেই জার্সি, তার উপর আড়াআড়ি টানা একটি লাল ও তিনটি সরু সাদা স্ট্রাইপ। এই জার্সির ঢোলা হাতা ও সাদা শর্টস, এর সৌন্দর্য্য আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। মনে করা হয়, এটিই অ্যাডিডাসের তৈরি সবচেয়ে সুন্দর জার্সি।
৪. আর্জেন্টিনা ১৯৭৮
১৯৭৮-এ আর্জেন্টিনার বিশ্বজয় শুধু আর্জেন্টাইন ফুটবলের গৌরব হিসেবে দেখা হয়, এমনটা নয়। মিলিটারি শাসনে ধুঁকতে থাকা একটি দেশের মানুষকে নতুন করে লড়াই করতে শিখিয়েছিল এই কাপ জয়। আর এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সেই আইকনিক জার্সি, মনে রাখার মতো। আকাশী ও সাদা স্ট্রাইপের এই জার্সি বুকের বাঁদিকে ছিল ফুটবল ফেডারেশনের লোগো ও ডানদিকে অ্যাডিডাসের পুরানো লোগো।
৫. ইংল্যান্ড ১৯৬৬
১৯৬৬ সালে অ্যাওয়ে কিট পরে বিশ্বজয় করেছিল ববি মুরের ইংল্যান্ড। আর ইংল্যান্ডের সাদা রংয়ের হোম কিটের তুলনায় তারপর থেকে অনেক বেশি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল ইংল্যান্ডের এই লাল রংয়ের অ্যাওয়ে কিট। বিভিন্ন তুলনায় বহুবার এই জার্সি সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
৬. ডেনমার্ক ১৯৮৬
১৯৮৬-এর ডেনমার্কের জার্সি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়। লম্বালম্বি ভাবে লাল-সাদা স্ট্রাইপের এই জার্সি বেশ আকর্ষণীয় ছিল। এই জার্সির সঙ্গে লাল রংয়ের শর্টস পরতেন ড্যানিশরা, যা জার্সির আকর্ষণ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
৭. ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৮
বিশ্বকাপের সবচেয়ে আইকনিক জার্সি কোনটি? এই প্রশ্নের কোনও জবাব হয় না। কিন্তু ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া যে জার্সি পরে খেলেছিল, তা এখনও অনেক তালিকাতেই বিশ্বকাপের সেরা জার্সির মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও এই নিয়ে বিতর্ক সভা বসতে পারে। লাল-সাদায় চেক চেক এই জার্সিতে ক্রোয়েশিয়ার পতাকাকে তুলে ধরা হয়েছিল। আর এই জার্সি পরেই সেমিফাইনাল খেলেছিলেন দাভর সুকেররা।
৮. কলম্বিয়া ২০১৪
ঝকঝকে, চকচকে ও অভিজাত। ২০১৪ বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার জার্সিকে এইভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। কাঁচা হলুদ রংয়ের এই জার্সিতে কোনাকুনি ছিল গাঢ় নীল রংয়ের স্ট্রাইপ। উপরের দিকে একটা প্যানেল ছিল, যা জার্সির ডান কাঁধ থেকে নেমে এসেছিল লোগো পর্যন্ত। এর সঙ্গে সাদা শর্টস পরা কলম্বিয়ার খেলা দেখা সত্যিই চোখের জন্য আরামের ছিল।
৯. ইতালি ১৯৭৮
ইতালির জার্সি সব সময়ই অতি সাধারণ কিন্তু অভিজাত দেখতে হয়। ১৯৭৮-এর আজুরিদের জার্সিও ছিল এই একই রকম। আজুরি নীল রংয়ের জার্সি সঙ্গে সাদা শর্টস, যা এই জার্সিকে বানিয়েছিল ‘বেলিসিমো’ (Bellissimo), অর্থাৎ খুব সুন্দর।
১০. মেক্সিকো ১৯৭৮
মেক্সিকোর সবুজ রংয়ের সঙ্গে বারবার বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৮-এর বিশ্বকাপে মেক্সিকোর কিট তৈরি করেছিল লেভি’স। সাদা ভি-গলা ও সবুজ রঙয়ের এই জার্সির বুকের বাঁ দিকে ছিল লেভির লাল রংয়ের লোগো আর ডানদিকে মেক্সিকোর চিহ্ন।
১১. ব্রাজিল ১৯৮৬
জিকো, সক্রেটিস ও কারেকার পরা ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ব্রাজিলের জার্সি ছিল আদপে তাদের রেট্রো জার্সি। উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের এই জার্সিতে ছিল গাঢ় সবুজ রংয়ের কলার। এই বিশ্বকাপে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে গেলেও এটাই ছিল সেলেকাওদের মনে রাখার মতো জার্সির মধ্যে অন্যতম।
১২. নাইজেরিয়া ২০১৮
২০১৮ এর বিশ্বকাপে নাইজিরিয়ার হোম কিট ছিল একেবারে অন্যরকম। যা দেখে চমকিত হয়েছিল নাইজেরিয়ার ফ্যানেরা। লম্বা লাইন পড়েছিল নাইকির স্টোরের সামনে। প্রিঅর্ডারের রেকর্ড গড়েছিল এই কিট। ফ্লুরোসেন্ট সবুজ রংয়ের এই জার্সির উপর সাদা দিয়ে জিগজ্যাগ প্যাটার্ন আঁকা ছিল। আর এই জার্সির সাদা হাতায় কালো জিগজ্যাগ প্যাটার্ন করাছিল।
আগামী ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে কাতার বিশ্বকাপ। ৩২ দেশ নামবে খেলতে। ইতিমধ্যেই উন্মোচন হয়ে গিয়েছে ৩২ দেশের ৬৪ জার্সির। এবার দেখা যাক, খেলার বাইরে জার্সির লড়াইয়ে ফ্যানদের মনে জায়গা করে নেয় কোন দেশের কোন জার্সি।