Surajit Sengupta: সুরজিতের প্রয়াণ ফুটবল জগতে এক অপূরনীয় ক্ষতি, বলছেন প্রাক্তন ফুটবলাররা

করোনার (COVID 19) সঙ্গে দীর্ঘদিনের লড়াই থেমে গেল ময়দানের শিল্পীর। বাংলার অন্যতম সেরা ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্তর প্রয়াণে শোকের ছায়া ফুটবল দুনিয়ায়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। ক্রীড়াজগতে আজ সত্যিকার অর্থেই এক অপূরণীয় ক্ষতি।

Surajit Sengupta: সুরজিতের প্রয়াণ ফুটবল জগতে এক অপূরনীয় ক্ষতি, বলছেন প্রাক্তন ফুটবলাররা
সুরজিৎ সেনগুপ্ত (ছবি-টুইটার)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 17, 2022 | 4:22 PM

কলকাতা: ময়দানের বহু লড়াইয়ে সফল হওয়া সুরজিৎ সেনগুপ্ত (Surajit Sengupta) জীবনের লড়াইয়ে হেরে গেলেন। করোনার (COVID 19) সঙ্গে দীর্ঘদিনের লড়াই থেমে গেল ময়দানের শিল্পীর। বাংলার অন্যতম সেরা ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্তর প্রয়াণে শোকের ছায়া ফুটবল দুনিয়ায়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। ক্রীড়াজগতে আজ সত্যিকার অর্থেই এক অপূরণীয় ক্ষতি। শোকে কাতর প্রাক্তন ফুটবলাররা। শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও।

টুইটারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “আজ আমরা হারালাম অভিজ্ঞ তারকা ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্তকে। ফুটবল ভক্তদের হার্টথ্রব এবং একজন অসামান্য জাতীয় ক্রীড়াবিদ হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন নিখুঁত ভদ্রলোক। তিনি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবেন। গভীর সমবেদনা জানাই।”

প্রাক্তন ফুটবলাররাও গভীরভাবে শোকাহত সুরজিৎ সেনগুপ্তর প্রয়াণে। জেনে নিন সুরজিৎের প্রয়াণে বাংলার ক্রীড়ামহল থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসছে…

গৌতম সরকার – খবরটা বিশ্বাস হচ্ছে না। তবে ওর অবস্থা খারাপ ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। এত ম্যাচ, এত খেলা, সেই খিদিরপুর ক্লাব থেকে শুরু করেছিলাম আমি-সুরো। আমাকে দাদা বলত। এক আধ বছরের বড় ছিলাম হয়তো। কিন্তু ও এত ভালোবাসত তা বলার নয়। ওকে শিল্পী ফুটবলার বললে কম বলা হবে। ও খুব ভালো তবলা বাজাতে পারত, ওর গানের গলাও ছিল ভীষণ ভালো। সব সময় নিজের প্রতিভা দিয়ে মাতিয়ে রাখত। আমার মনে এখনও রয়েছে ১৯৭৮ সালের সন্তোষ ট্রফিতে শ্রীনগরে ও অ্যাপেন্ডিক্স নিয়ে খেলেছিল। ডক্টর নৃপেন দাস সেই সময় ওকে বলেছিল, তুই যাবি সবার জন্য খেলতে। ও আমার রুমমেট, রুম পার্টনার ছিল। ওর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আগামী ১০০ বছরেও সুরজিতের মতো খেলোয়াড় আসবে না। খিদিরপুর থেকে শুরু, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, বাংলা, ভারতবর্ষের হয়ে কত ম্যাচ ও বলে বলে ও গোলে গোলে হারিয়েছে তাবড় তাবড় দলকে। উইং প্লে যেটা আমরা বলি আক্ষরিক অর্থে ফুটবলে, সেটা আর আমরা পাব বলে মনে হয় না। সবাই যাবে এক দিন না একদিন। তবে এই অসময়ে যাওয়াটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ও এমন কিছু বিরাট রোগে আক্রান্ত হয়নি, যার জন্য ওকে চলে যেতে হবে। তবে এই কোভিড, এই মারণরোগ ওকে নিয়ে গেল। কিন্তু বার বার ওর কথা মনে পড়ছে। কতবড় শূন্যতা সৃষ্টি হল, তা বলে বোঝানো যাবে না। সুরজিৎ সত্যি একটা অনন্য চরিত্র। খেলার মাঠে, বাইরেও সেটা বেশ টের পাওয়া যেত। আমি জানি না ওর স্ত্রী, ওর পরিবারকে কীভাবে সমবেদনা জানাবো। আমি ঈশ্বরের কাছে এটাই প্রার্থনা করব, সুরজিৎের এই বিদায়ী আত্মার যেন শান্তি হয়।

প্রশান্ত বন্দোপাধ্যায় – সুরজিৎদার সঙ্গে আমার ১৯৭৬ থেকে পরিচয়। কারণ ১৯৭৬ সালে যখন আমি ইস্টবেঙ্গে সই করি, তখন সুরজিৎদা ইস্টবেঙ্গলে ছিল। সেই থেকে আমাদের পরিচিতি হয়। আমার এখনও মনে আছে ১৯৭৯ সালে আমি যখন ইস্টবেঙ্গলের ক্যাপ্টেন ছিলাম যখন, তখন খুব ভালো একটা টিম হয়েছিল। সারা ভারতবর্ষ থেকে ভালো ভালো প্লেয়ারগুলোকে নিয়ে ইস্টবেঙ্গল সই করিয়েছিল। এমনকি সেই টিমে আমি ক্যাপ্টেন থাকলেও জুনিয়র ছিলাম। তবে টিমটা খুব হেভিওয়েট টিম ছিল। এমনকি সেই বছরে শেষ বছর সুভাষ ভৌমিকও ছিল। ফলে সুরজিৎদার সঙ্গে সেই বছর প্রচন্ড বেশি ক্লোজ হয়ে গিয়েছিলাম। ফলে সেই বছর অনেক দ্বন্দ্ব হয় টিমের মধ্যে। যদিও সেটা অন্য কথা। পরবর্তীকালে ৮০ সালে আমরা একসঙ্গে মহমেডানে সই করি। এবং সুরজিৎদাও আমাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু অনেক মানুষের কাছে এখনও ভুলটা রয়ে গেছে, যে সুরজিৎ সেনগুপ্ত সব প্লেয়ারদের নিয়ে গিয়েছিল। আসলে এটা একদম মিথ্যে। একেবারে ঠিক নয়। আসলে ওরকম একটা প্লেয়ারের এমনটা করার কোনও মানে ছিল না। এত ভালো একটা প্লেয়ার ছিল ও, মনে হত একটা ভালো ফুটবলারের মধ্যে যা যা প্রয়োজন তা সুরজিৎদার মধ্যে ছিল। তাঁর পাসিং কোয়ালিটি, তাঁর স্পিড, তাঁর বল কন্ট্রোলিং সব কিছু মিলিয়ে তিনি ছিলেন অভূতপূর্ব। তাঁর খেলা দেখার জন্য মানুষ দূর দূর থেকেও রাত জেগে থাকতে পারত। সুরজিৎ সেনগুপ্তর মতো একটা রাইট উইঙ্গার, পজিটিভ রাইট উইঙ্গার, যেভাবে বল ধরে খেলে, এবং উইং থেকে কীভাবে গোল করতে হয়, সেটা সুরজিৎদাই দেখিয়েছিল।

আলভিটো ডি’কুনহা – আজকে একটা খুবই দুঃখের দিন। সুরজিৎদা আর আমাদের মধ্যে নেই। আমি ওর পরিবারকে বিনম্র সহানুভুতি জানাতে চাই। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি। এই বছরটা আমাদের জন্য খুব খারাপ যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই আমরা প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ সুভাষ ভৌমিককে হারিয়ে ফেললাম। আর আজ সুরজিৎদাকে হারালাম আমরা। সুরজিৎদাকে খুব একটা খেলতে দেখিনি আমি। তখন আমি বাচ্চা ছিলাম। গোয়াতে ছিলাম। আর সুরজিৎদা আমাদের থেকে অনেক সিনিয়র। কিন্তু সুরজিৎদার নাম ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে আমি অনেক শুনেছি। ওকে নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। শুধু ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি তিনি ছিলেন না, তিনি ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি ছিলেন। আমরা ওকে খুব মিস করব। ফুটবল জগতের জন্য এটা অপূরনীয় ক্ষতি।