কলকাতা: ছেলে বেলা থেকেই একটা কথা শেখানো হয়। পড়াশোনা করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে। খেলাধুলা করেও যে আয় করা যায়, এর ঝুরি ঝুরি উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু এমন কাহিনিও আছে, যেখানে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের রুটি-রুজি জোগারে বেছে নিতে হচ্ছে নানা পেশা। রাজ্য় স্তরের এক হকি খেলোয়াড় পরমজিৎ কুমারের ঘটনাও তাই। সদ্য শেষ হয়েছে হকি বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হল বিশ্বকাপ। ভারতীয় দল অবশ্য কোয়ার্টার ফাইনালের ক্রসওভার ম্যাচেই বিদায় নেয়। ঠিক তখনই প্রকাশ্য়ে এল রাজ্য স্তরে হকি খেলা একজনের বেহাল পরিস্থিতির কথা। প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় এখন মালবাহক। তাঁর আয়, ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রকে যেন লজ্জায় ফেলে দেয়। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
পরমজিৎ কুমারের প্রতিভার অভাব ছিল না। কিন্তু একটা সময় হকি স্টিক ছাড়তে হয়। কাঁধে তুলে নিতে হয় দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্ব পালনেই মালবাহকের কাজ করতে বাধ্য হন। কাঁধে একেকটা বস্তা যেন সেই দায়িত্বের তারণায়। পেটের দায়ে। ৫০ কেজির বস্তা তোলা সহজ নয়। কিন্তু যখনই ক্লান্তি আসে, মনে পড়ে বাড়িতে এক পাঁচ বছরের সন্তান রয়েছে। স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (সাই), পঞ্জাব স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ড, পঞ্জাব রাজ্য দলের হয়ে খেলেছেন এবং পদকও জিতেছেন পরমজিৎ কুমার। জুনিয়র স্তরে হকিতে পদক জয়ের পাশাপাশি জাতীয় দলেও ঠাঁই পেয়েছিলেন। সালটা ২০০৭। মাঝের সময়ে বদলে গিয়েছে সবকিছু। এখন তাঁর পরিচয়, ফরিদকোট মন্ডির মালবাহক। দিনে প্রায় ৪৫০ বস্তা ওঠানো-নামানো করতে হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে! সেই দিনগুলি আয়ের কোনও পথ নেই।
পরমজিতের ছোট্ট বাড়িতে একঝাঁক পদক এবং ট্রফি রয়েছে। সব এখন কার্যত অলঙ্কার হয়েই রয়ে গিয়েছে, অহংকার হয়ে ওঠেনি। পরমজিৎ বলছেন, ‘রোজ একই রুটিন। ট্রাকে চালের বস্তা তোলা আর নামানো। প্রতি বস্তার জন্য় ১.২৫ টাকা পাই। যেখানে কাজ করি, হকি খেলা সম্পর্কে ওদের তেমন ধারনা নেই। তবে যখন ওরা জানতে পেরেছে, আমার পিঠ চাপড়ে দিয়েছে। আমার কাছে সেটাই অনেক বড় প্রাপ্তি। বাড়ি ফিরে পাঁচ বছরের ছেলেটাকে দেখি, ও প্লাস্টিকের স্টিক, বল দিয়ে হকি খেলে। আমার জীবনে যাই হোক, ওর যেন এমন পরিস্থিতি না হয়, সেটা পরিবর্তন করাই আমার লক্ষ্য।’