
হ্যাশট্যাগ নিউ ইজরায়েল বা দ্য নিউ মোসাদ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ট্রেন্ডিং। তবে, গাজা নিয়ে নয়। ক্রিকেট নিয়ে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের জয়ের পরে বিসিসিআই-কে নিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কোট আনকোট দাদাগিরির সঙ্গে ইজরায়েল বা মোসাদের তুলনা। যাঁর মাথা থেকেই বেরক, ভাবনাটা কিন্তু বেশ। বিসিসিআই যা করল, যেভাবে গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে নিজের পথে চলতে বাধ্য করল, পাকিস্তানকে কার্যত আত্মসমর্পণ করালো – তারপরে ইজরায়েলের সঙ্গে তাদের তুলনা হলে আপত্তির কিছু আছে বলা যাবে না।
মোসাদ যেমন অপারেশন চালায়, বিসিসিআই সেভাবেই অপারেশন চালিয়েছে বলে দাবি নেটিজেনদের। তারা বলেছিল, পাকিস্তানে খেলব না। পাকিস্তান আয়োজক দেশ হয়েও মেনে নিতে বাধ্য হল। তাদের দুবাইয়ে এসে ভারতের সঙ্গে খেলতে হল। দুবাইয়ে ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পাক ক্রিকেট বোর্ডের কোনও প্রতিনিধিই থাকলেন না। সেখানে বিসিসিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে গেলেন আমীরশাহীর ক্রিকেট কর্তা। পাকিস্তানের নাম মুখেও আনলেন না। ট্রফি ভারতের হাতে ওঠার পর ক্ষোভ উগরে দিয়েছে পাক ক্রিকেট বোর্ড। অভিযোগ ভারত একই জায়গায় সব ম্যাচ খেলেছে বলে বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কয়েকজন ক্রিকেটারও পাক ক্রিকেট বোর্ডের সুরে গলা মিলিয়েছেন দেখে মজাই লাগল।
২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথা ভুলে গেলে চলবে? সেবার আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা একটা মাঠেই নিজেদের সব ম্যাচ খেলেছিল। সেঞ্চুরিয়নে। তারা ফাইনালে উঠলে সেটাও সেঞ্চুরিয়নেই খেলা হতো। টুর্নামেন্টে জয়ী হয়েছিল কিন্তু অস্ট্রেলিয়া। দেখুন, পাকিস্তানের ট্র্যাক রেকর্ডের জন্যই ওদেশে টিম পাঠানোর ঝুঁকি নেয়নি বিসিসিআই। একইসঙ্গে এটাও ঠিক যে ভারতকে বাদ দিয়ে কোনও টুর্নামেন্টের আয়োজনের কথা ভাবাও আইসিসি-র পক্ষে অসম্ভব। আইসিসি-র তহবিলে ৫৫ শতাংশ টাকা ভারতের মাধ্যমেই আসে। ভারতকে বাদ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হলে তাদের আয় ৮০ শতাংশেরও বেশি কমে যেত। একটা উদাহরণ দিই। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া, ফাইনালে নিউজিল্যান্ড – ভারতের এই দুই ম্যাচ ইতিহাসে ঢুকে পড়েছে। দেড়শো কোটির বেশি দর্শক খেলা দেখেছেন। ফাইনালে ৯০ কোটি, সেমিফাইনালে প্রায় উনসত্তর কোটি। এক বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল ছাড়া এই রেকর্ড আর কোথাও নেই। ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফ্রান্সের টানটান লড়াই দেখেছিলেন আড়াইশো কোটি দর্শক। দুনিয়ার কমবেশি একশোরও বেশি দেশে সেই ম্যাচ দেখা হয়েছিল। মনে রাখতে হবে, সেই তুলনায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দর্শক ছড়িয়ে শুধু এই উপমহাদেশ ও তার বাইরে হাতে গোনা কয়েকটা দেশে।