ছুটি নিল সাহসী কলম, ৬৭-তে প্রয়াত ক্রীড়া সাংবাদিকতার মহীরূহ ধীমান দত্ত
Sports News-Obituary: মাত্র ২০ বছর বয়সে ক্রীড়াসাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ধীমান দত্ত। তিন বছরের মাথায় ক্রীড়া সম্পাদক। সে সময় বাংলা খবরের কাগজের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ ক্রীড়া সম্পাদক। আজও সেই রেকর্ড অক্ষত।

আটের দশকের শুরুতে খবরের কাগজের দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলেছিল খেলার পাতা। তার আগে সাত, কখনও বা পাঁচ-ছয়ে ‘লুকিয়ে’ থাকতো খেলা নামক সবচেয়ে বড় বিনোদন। আটের দশকে এই খেলাই প্রথম ‘দিনের’ আলো দেখল আজকালের হাত ধরে। আটের দশকের মাঝামাঝি এক ঝকঝকে যুবকের উত্থান। ওই খেলার পাতার অভিভাব হিসেবে। ঝড়ঝড়ে লেখা, অন্যরকম ভাবনা, খবরের ভিতরের খবরের অনুসন্ধান, আপোষহীন লড়াই। ওই যুবক অচিরেই আজকালের খেলার পাতাকে যে কোনও খবরের কাগজের প্রথম পাতার সমতুল্য করেছিলেন। সেই খেলার পাতার ক্রীড়া সম্পাদক ধীমান দত্ত প্রয়াত হলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৭।
মোহনবাগান গ্যালারিতে আগুনে পোস্টার লিখতেন সে সময়। যা চোখে পড়ে গিয়েছিল আজকাল-এর দীর্ঘ দিনের সম্পাদক অশোক দাশগুপ্তর। আনন্দবাজারের ক্রীড়া সম্পাদক মুকুল দত্তর ছেলেকে চিনতে ভুল করেননি। মাত্র ২০ বছর বয়সে ক্রীড়াসাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ধীমান দত্ত। তিন বছরের মাথায় ক্রীড়া সম্পাদক। সে সময় বাংলা খবরের কাগজের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ ক্রীড়া সম্পাদক। আজও সেই রেকর্ড অক্ষত।
সে সময় ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের দাপট। ভারতীয় ফুটবল বলতে এই দুই দলেরই রমরমা। আর বেশ খানিকটা মহমেডান স্পোর্টিং। ক্রীড়াসাংবাদিক হিসেবে অগুণতি খবর করেছেন। ক্রীড়া সম্পাদক হয়ে আমূল বদলে ফেলেছিলেন নিজেকে। সব অর্থেই যেন দলের ক্যাপ্টেন। দলবদলের খবর থেকে তারকাদের হাঁড়ির খবর, সব মিলত আজকালের খেলার পাতায়। দেশ থেকে বিদেশ, সহকর্মীদের সর্বত্র পাঠাতেন। অচিরেই আজকাল হয়ে উঠেছিল সর্বভারতীয় খেলার কাগজ। সুভাষ ভৌমিক থেকে সুব্রত ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য থেক কৃষাণু দে, নানা প্রজন্মের তারকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তাঁর। শুধু ফুটবল নয়, ক্রিকেটেও সমান বিচরণ ছিল ধীমান দত্তর। চাঁচাছোলা ভাষায় যেমন সমালোচনা করতে পিছপা হতেন না, তেমনই বিশ্লেষণাত্মক লেখায় ছিলেন পারদর্শী।
ধীমান দত্তর হাত ধরে ময়দানে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য ক্রীড়া সাংবাদিক। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে তিনি শিখিয়েছেন খেলার সাংবাদিকতার অ-আ-ক-খ। তাঁদেরই উত্তরসূরি হিসেবে রেখে গেলেন ধীমান দত্ত। অবসরের পরও দু-বছর আজকালের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব সামলছেন। তবে শারীরীক অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন। শেষ কয়েক মাস সে ভাবে কথাও বলতে পারতেন না। এ দিন সকালে ধীমান দত্তর যাবতীয় লড়াই থেমে গেল। তিনি চলে গেলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর কলম চিরকাল মনে রাখবে কলকাতা ময়দান।





