কুস্তি-বক্সিংয়েই কি অপরাধ জগতের হাতছানি? দীপক পাহালের গল্প জানেন?

দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাবের আখাড়া, রিংগুলো থেকেই কি অপরাধ জগতের হাতেখড়ি শুরু? বক্সিং, কুস্তির মতো শারীরবৃত্তীয় খেলাগুলোর কি স্বাভাবিক ঝোঁক থাকে অন্ধকার জগতের দিকে? সাগর ধনকড় খুনের মামলায় ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদ সুশীল কুমারের জড়িয়ে পড়ার পর এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। খোঁজ নিতে গিয়ে টিভি নাইন বাংলা পেল এমন আরও এক আশ্চর্য ঘটনা। এক সময়ের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হরিয়ানার বক্সার দীপক পাহাল এখন মোস্ট ওয়ান্টেড গ্যাংস্টার।

কুস্তি-বক্সিংয়েই কি অপরাধ জগতের হাতছানি? দীপক পাহালের গল্প জানেন?
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Updated on: May 26, 2021 | 3:00 PM

অভিষেক সেনগুপ্ত

সুশীল কুমারের (Sushil Kumar) পদ্মশ্রী সম্মান কেড়ে নেওয়া উচিত। রেলের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হোক। রেসলিং (Wrestling) ফেডারেশনের চুক্তি থেকে বাতিল হোন। এতেই শেষ নয়, কুস্তিগির সাগর রানা ধনকড়ের বাবা-মা দাবি তুলছেন, যে জঘন্য অপরাধ করেছেন সুশীল, তাঁর ফাঁসি হওয়া উচিত।

সুশীল কুমার— মাত্র দু’মাস আগেও টোকিও অলিম্পিকে (Tokyo Olympics) তিনি নামবেন কিনা, তা নিয়ে অঢেল প্রশ্ন। যাঁকে সামনে রেখে অলিম্পিক পদকের স্বপ্ন দেখত কচিকাঁচারা। সেই তিনিই এখন দেশের পয়লা নম্বর অপরাধী। কেন সুশীল খুনের ঘটনায় জড়ালেন? তদন্তে নেমে অপরাধ জগতের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ খুঁজে পাচ্ছে দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। কালা জাঠেড়ি থেকে নীরজ বাওয়ানার মতো গ্যাংস্টারদের সঙ্গে রীতিমতো ওঠাবসা ছিল কুস্তিগিরের। অবৈধ ফ্ল্যাট নির্মাণ, জমি দখল এমনকি তোলাবাজিতেও জড়িয়ে ছিলেন তিনি।

সুশীল কি নিছক একটা ঘটনা? অর্থ আর ক্ষমতার মোহ তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল অন্ধকার জগতে? দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাবের আখাড়া, রিংগুলোতে যদি খোঁজ নেওয়া যায়, তা হলে দেখা যাবে অপরাধ জগতের হাতেখড়ি শুরু ওইসব জায়গা থেকেই! বক্সিং, কুস্তির মতো শারীরবৃত্তীয় খেলাগুলোর যেন স্বাভাবিক ঝোঁক রয়েছে অন্ধকার জগতের প্রতি। সুশীল নিছক ঘটনা নয় বোধহয়। এক সময়ের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হরিয়ানার বক্সার দীপক পাহালের গল্পও অনেকটা এই রকম। যে এখন মোস্ট ওয়ান্টেড গ্যাংস্টার। খুন, তোলাবাজি, ডাকাতি, রাহাজানিতে সিদ্ধহস্ত সে। তার খোঁজ দিতে পারলে ২ লক্ষ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।

সোনেপতের গানায়ুর গ্রাম থেকে উঠে আসা দীপকের (Deepak Pahal)। বক্সিংকে (Boxing) কেরিয়ার হিসেবে নিতে চেয়েছিল। বিজেন্দর সিংয়ের মতো আন্তর্জাতিক স্তরে অবিশ্বাস্য সাফল্যের খোঁজে একজোড়া গ্লাভস হাতে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার। রিংয়ে দ্রুত সাফল্যও পেয়েছিল। ঠান্ডা মাথা, বিপক্ষকে নজরের সামনে রাখা, রিং সম্পর্কে চমত্‍কার ধারণা, ঘাতক জ্যাব-আপারকাটে পারদর্শী, আগ্রাসী আর ফোকাসড। এমন বক্সার যে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যাবে, কোচরাও বুঝতে পেরেছিল। দীপক নিজের রাস্তা ধরে মসৃণ এগোতে শুরু করেছিল। মাত্র ১৫ বছর বয়সে জুনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নও হয়ে যায় সে, ৫৭ কেজি বিভাগে। অমিত ফাঙ্গাল, মণীশ কৌশিক— যাঁরা টোকিও গেমসের টিকিট পেয়েছেন, তাঁদের গ্রুপেরই সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ ছিল দীপক পাহাল। সোনেপতের সাইয়ে তখন ১০ ঘণ্টা করে প্র্যাক্টিস করে সে। রিও অলিম্পিকের স্বপ্নপূরণের জন্য।

কপাল এক এমন জিনিস, কখনও আলোর দিকে নিয়ে যায়, কখনও অন্ধকারে। অনেক সময় পরিস্থিতির শিকার হয় সে। দীপকের গল্প কিছুটা তেমনই। ২০১২ সালে ভারতীয় বক্সিং সংস্থার অনুমোদন কেড়ে নেয় সরকার, নির্বাচনে গরমিলের জন্য। ভারতের অসংখ্য বক্সার সেই সময় থেকেই হারিয়ে যেতে থাকে। দীপকও তাদের একজন। ধীরে ধীরে অন্ধকার জগতে পা বাড়ানো শুরু। জিতেন্দর সিং একা গোগি হরিয়ানার কুখ্যাত গ্যাংস্টার। তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আর এক গ্যাংস্টার কুলদীপ মান, যার ডাকনাম ছিল ফাজ্জা। দিল্লি পুলিশের অনকাউন্টারে যে মারা গিয়েছে কয়েক মাস আগেই। এই দু’জনই দীপককে নিয়ে আসে অপরাধ জগতে।

কেন কুস্তিগির, বক্সাররা পা বাড়াচ্ছেন অন্ধকার জগতের দিকে? দিল্লি পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘যে সব প্লেয়ার স্পোর্টিং কেরিয়ার খুব বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না, তারা কিছু বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এইরকম বক্সার আর রেসলারই টার্গেট হয়ে ওঠে গ্যাংস্টারদের। এদের দিয়ে যে কোনও কাজ করানো যায়। সাহসীও হয়। স্বাভাবিক আগ্রাসনটা এরা তখন অপরাধ জগতের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে।’

ঠিক এই ভাবনা থেকেই গোগি আর ফাজ্জা গডফাদার হয়ে ওঠে দীপকের। গানায়ুর গ্রাম, জাতীয় চ্যাম্পিয়নের পদক, রিংয়ের সাফল্য পিছনে ফেলে সে হাঁটতে শুরু করে অন্ধকার জগতের দিকে। দিল্লি হাসপাতাল থেকে কয়েক মাস দু’জন কুখ্যাত অপরাধীকে নিয়ে পালানোর সময় পুলিশের নজরে আবার পড়ে দীপক। অপরাধ জগতে সেই যে ‘বক্সার’ নামের গ্যাংস্টার হয়ে উঠেছে, গোপনে সেই চালাচ্ছে গ্যাং, এই সব তথ্য হাতে আসে পুলিশের। কিন্তু মোস্ট ওয়ান্টেড দীপক এখনও ফেরার।

বক্সিং কোচরা, যাঁরা বড় করেছিলেন দীপককে, তাঁরা এখনও আক্ষেপ করেন। বলেন, ‘একটা ভুল পদক্ষেপ ছেলেটার জীবন নষ্ট করে দিল।’ দীপকের মতো ছেলেরা ‘ভুল’ করে। অন্ধকার থেকে তাদের আলোয় ফিরিয়ে নিয়ে আসার মতো লোক থাকে না। বরং আরও বেশি অন্ধকারেই ঠেলে দেওয়া হয় তাদের।

কিন্তু সুশীল? তাঁর মতো অ্যাথলিট কেন দীপকের মতো ভুল করবেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: WTC ফাইনালে রিজার্ভ ডে নিয়ে ভাবছে আইসিসি