Republic Day 2022: প্রযুক্তি দুনিয়ায় ভারতের ৭ উদ্ভাবন, দিশা দেখাচ্ছে বিশ্বকে!

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়

Jan 26, 2022 | 3:25 PM

ভারতীয়দের দ্বারা তৈরি বা আবিষ্কৃত প্রযুক্তিগত এমনই কিছু জিনিস সম্পর্কে জেনে নিন, যেগুলি দেশে তো বটেই, অন্যান্য দেশেও সমাদৃত।

Republic Day 2022: প্রযুক্তি দুনিয়ায় ভারতের ৭ উদ্ভাবন, দিশা দেখাচ্ছে বিশ্বকে!
প্রতীকী ছবি

Follow Us

১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট দেশ স্বাধীন হয়েছিল। আর ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। সেই ১৯৫০ সাল থেকে ২০২২ সাল, ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হতে চলেছে ভারতে। মাঝখানের এতগুলো বছর চড়াই-উতরাই, নানাবিধ ঘটনার ঘনঘটার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে দেশ। নানা দিকে অভিনবত্ব আর উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে বিশ্বদরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ভারতবর্ষ। প্রযুক্তি বিশ্বে নামজাদা সংস্থাগুলির মাথায় ভারতীয়রাই। এদিকে দেশ এখন ডিজিটাল (Digital India), ৫জি প্রযুক্তি চালু হতে চলেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২০ সালে আত্মনির্ভর ভারতের ডাক দিয়েছিলেন। দেশে এখন বিদেশি স্মার্টফোন যেমন আসে, তেমনই আবার স্বদেশি স্মার্টফোনও তৈরি হয়, আবার বিদেশি সংস্থাগুলিও এ দেশে নিজেদের ব্র্যান্ডের ফোন তৈরি করছে। শুধু ফোন নয়। নানাবিধ গ্যাজেটস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি বা বাইকও তৈরি হচ্ছে দেশে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রযুক্তিগত দিক থেকে ভারতের (Technology And India) উদ্ভাবনী শক্তি কতটা প্রভাব ফেলছে? প্রযুক্তির এমন কোনও ফসল কি ভারতের রয়েছে, যা দেশেরই কারও মস্তিষ্কপ্রসূত। রয়েছে, অবশ্যই রয়েছে। ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতীয়দের দ্বারা তৈরি বা আবিষ্কৃত প্রযুক্তিগত এমনই কিছু জিনিস (Tech Innovation By Indians) সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যেগুলি দেশে তো বটেই, অন্যান্য দেশেও সমাদৃত।

১) আই-দিয়া

এই ডিভাইস তৈরি করেছিলেন আইআইটি বম্বের এক ছাত্র। আই-দিয়া ছোট, পোর্টেবল, সোলার পাওয়ার এলইডি লাইট এবং মোবাইল চার্জার হিসেবেও কাজে লাগানো যায়। এর তিনটি ভ্যারিয়েশন রয়েছে – আই-দিয়া বেসিক যা সবথেকে ছোট, আইদিয়া হোম যা বাড়িতে আলো জ্বালিয়ে রাখার কাজে লাগে এবং আই-দিয়া চার্জ যা মোবাইল চার্জার হিসেবে কাজে লাগতে পারে। ইলুমাইন্ড সোলারটেক প্রাইভেট লিমিটেড নামক একটি সংস্থা এই ডিভাইস বিক্রি করে থাকে। কঠিন আবহাওয়ার পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আই-দিয়া তৈরি করা হয়েছিল। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজন, খাবারের স্টল, স্বাস্থ্যকর্মী এবং রাস্তার হকাররা এই কম দামের আলো ব্যবহার করে অত্যন্ত উপকৃত হয়েছেন।

২) স্মার্টকেন

রাস্তায় খানাখন্দ, বা পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও এক সারমেয় বা একজন হকার – পথে চলার সময় সাধারণ মানুষের এসব বাধাবিঘ্নতা অতিক্রম করে চলতে অসুবিধা হয় না। সমস্যা হয় দৃষ্টিহীনদের। সেই তাঁদের কথা মাথায় রেখেই দেশে তৈরি করা হয়েছে স্মার্টকেন। এর সাহায্যে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা রাস্তার নানা বাধা তোয়াক্কা না করেই দ্রুততার সঙ্গে হেঁটে যেতে পারেন। স্মার্টকেন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যাতে বীভৎস ব্যাটারি ক্যাপাসিটি রয়েছে। দৃষ্টিহীন কোনও ব্যক্তি পথে চলার সময় সেখানে কোনও বাধা থাকলে চারটি ভিন্ন মোডে স্মার্টকেন ভাইব্রেট করতে পারে। ফলে সেই পথচারী আগাম সজাগ হয়ে যান এবং তার পথচলা সুন্দর হয়ে ওঠে। একটি সাধারণ লাঠির সঙ্গেই লাগানো থাকে স্মার্টকেন এবং একাধিক গ্রিপ সহযোগে তা ধরা যায়। আইআইটি দিল্লির পড়ুয়ারা এই ডিভাইস ডেভেলপ করেছেন। স্মার্টকেন ডেলিভারি করে সাকশম.ওআরজি নামক একটি সংস্থা।

৩) মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশন

জগদীশ চন্দ্র বসু কলকাতায় মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশনের প্রযুক্তিগত প্রদর্শনের মাধ্যমে বেতার যোগাযোগের বিকাশের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর উদ্ভাবনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল একটি পারদ সহকারী, যা আসলে রেডিয়ো রিসিভারের একটি উপাদান। পারদ ব্যবহার করে রেডিয়ো রিসিভারদের কার্যক্ষমতা এবং ব্যবহারযোগ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। বোস এই ধারণাটি পেটেন্ট করতে পারতেন, কিন্তু তার ফোকাস পণ্যের উপর ছিল, এটি থেকে লাভ করা নয়। তবে যাইহোক, বন্ধু এবং সহকর্মীদের চাপের কারণে তিনি একটি কঠিন অবস্থা ডায়োডের প্রথম পেটেন্ট ধারণ করেন, যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ সনাক্ত করতে সক্ষম। ডেমোনস্ট্রেশনের মধ্যে ছিল, একটি দূরবর্তী ঘণ্টা বাজানো, বারুদের বিস্ফোরণ বন্ধ করা এবং বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর চেয়ারম্যানের শরীরে তরঙ্গ প্রেরণ করা। দেশে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এখন মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে এমন ব্যাকহল নেটওয়ার্কই ব্যবহৃত হচ্ছে।

৪) ইউএসবি ইন্টারফেস

কোনও ডিভাইস সংযোগ করার জন্য ইউএসবি ইন্টারফেসের বিকল্প আর কিছু নেই। এই ইউএসবি স্ট্যান্ডার্ডের সহ-উদ্ভাবক এক ভারতীয়, নাম অজয় ভাট। ইনটেলে দীর্ঘ দিন তিনি কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে নন-ইউরোপিয়ান কান্ট্রি ক্যাটেগরিতে ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে ইনটেলের একটি বিজ্ঞাপনে অজয় ভাটকে দেখানো হয়েছিল। অফিসের দিকে রকস্টারের মতো এগিয়ে যাচ্ছিলেন অজয় ভাট চরিত্রের অভিনেতা। মানুষ যে জামা পরছে, তাতে তাঁর নাম। তাঁর একটা অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য রীতিমতো ভিড়ভাট্টা। পিসিআই এক্সপ্রেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেভেলপমেন্টের কাজের সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন ভাট।

৫) ইনটেল পেন্টিয়াম চিপ

ইনটেল পেন্টিয়াম চিপ ডেভেলপ করেছিল একটি ভারতীয় দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিনোদ ধাম। এই বিনোদ সেই চিপগুলি ডেভেলপ করেছিলেন, যেগুলি ইনটেল, এএমডি এবং কোয়ালকম ব্যবহার করে। তাঁকে বলা হয় ‘ফাদার অফ পেন্টিয়াম’ বা ‘পেন্টিয়ামের পিতা’। ১৯৭১ সালে দিল্লির সেমিকন্ডাক্টার কোম্পানি কন্টিনেন্টাল ডিভাইসে কাজ করার মধ্যে দিয়ে নিজের কেরিয়ারের শুরু করেছিলেন বিনোদ। চিপটি বিকাশের জন্য ধামের উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রাহক এবং সফ্টওয়্যার প্রকাশকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল এবং 147টি বৈশিষ্ট্যের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন যেগুলি ওই সব সংস্থার মূল চাহিদা ছিল। এই বৈশিষ্ট্যগুলি অন্তর্ভুক্ত করে প্রডাক্ট লঞ্চের পরেও ইনটেল সেই পণ্যটিতে ব্যয়বহুল পরিবর্তন কিন্তু করেনি। মানুষের সেবা করতেন বিনোদ, বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় দানও করেছেন।

৬) ফাইবার অপ্টিক্স

নারিন্দার সিং কাপানিকে বলা হয় ফাইবার অপ্টিক্সের জনক। ১৯৫৬ সালে ফাইবার অপ্টিক্স টার্মটি তিনিই নিয়ে এসেছিলেন। একজন স্কুল শিক্ষক কাপানিকে বলেছিলেন যে, আলো কেবল মাত্র সরলরেখায় চলতে পারে। ফাইবার অপ্টিক্স কেবেল ডেভেলপ করার মধ্যে দিয়ে সেই শিক্ষককে ভুল প্রমাণিত করে ছেড়েছিলেন কাপানি। ২০০৯ সালে ফরচুন ম্যাগাজ়িনের একটি রিপোর্ট থেকে ফাইবার অপ্টিক্সের জনক নারিন্দার কাপানি সম্পর্কে এমনই সব তথ্য জানা গিয়েছিল। ফাইবার অপ্টিক্স কমিউনিকেশনের তাত্ত্বিক দিকগুলির উপর বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন এবং বক্তৃতাও দিয়েছিলেন। কাপানি, শিখ শিল্পের একজন সংগ্রাহক এবং তিনি তার ডায়নপ্টিক ভাস্কর্যের প্রদর্শনী করেছেন।

৭) বাইনারি

বাইনারি ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন ভারতীয় গণিতজ্ঞ এবং সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ পিঙ্গলা। ৫০০ থেকে ০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দের মধ্যে রচিত হয়েছিল চন্দহশাস্ত্র। সেখানেই বাইনারি সম্পর্কে প্রাচীনতম ধারণার বর্ণনা করা হয়েছে। সেই একই টেক্সটে ফিবোনাচি সিকোয়েন্সের প্রাথমিক ধারণাও বর্ণিত হয়েছিল। বাইনারি, বেশির ভাগ আধুনিক গণনার ভিত্তি তৈরি করে এবং কম্পিউটার দ্বারা ব্যবহৃত ভাষা হিসাবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। দুটি অবস্থার মাধ্যমে তথ্য সঞ্চয় এবং প্রেরণ করার একটি উপায় হল বাইনারি – অন ও অফ, যেগুলি ০ এবং ১ নম্বর দ্বারা রিপ্রেজ়েন্ট করা হয়।

তথ্যসূত্র: ফার্স্টপোস্ট

আরও পড়ুন: প্রযুক্তি দুনিয়ার ‘রাশ’ এই ১৬ ভারতীয়ের হাতে! সুন্দর পিচাই-সত্য নাদেলা বাদে বাকিদের চেনেন?

আরও পড়ুন: এবার মহাকাশে স্থাপন করা হচ্ছে ফিল্ম স্টুডিয়ো, সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে স্পোর্টস এরিনাও…

আরও পড়ুন: অর্ধেক হবে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম! নতুন চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে এলেন IIT গবেষকরা

Next Article