গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশে গারিনা ফ্রি ফায়ার নামক জনপ্রিয় অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার ব্যাটল রয়্যাল গেম ব্যান করা হয়। আর তারপরই ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া গেমের বিরুদ্ধে তেলেঙ্গানা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। পাবজির ক্লোন অ্যাপ ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া (Battlegrounds Mobile India) বা বিজিএমআই-এর আইনি স্টেটাস কী, তা জানতেই মূলত সেই জনস্বার্থ মামলাটি তেলেঙ্গানা হাইকোর্টে (Telangana High Court) দায়ের করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে পাবজি মোবাইল গেমটি ভারতে ব্যান করা হয়েছিল চিনের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার কারণে। পরবর্তীতে গেমটির নাম বদলে ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া হিসেবে তা আবার দেশে লঞ্চ করা হয় যা আসলে পাবজি-রই একটি ক্লোন অ্যাপ। এদিকে তেলেঙ্গানা হাইকোর্টে বিজিএমআই-এর বিরুদ্ধে এই জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের হওয়ার পর দেশের ব্যাটল রয়্যাল গেম প্রেমীরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, এটিও আবার ব্যান করা হবে না তো? গত বৃহস্পতিবার তেলেঙ্গানা হাইকোর্টে এই বিষয়েই উত্তর দিয়েছে কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক (Ministry Of Electronics And Information Technology)। ঠিক কী বলছে কেন্দ্র, ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া কি সত্যিই ব্যান করা হবে?
তেলেঙ্গানা হাইকোর্টে কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে যে, পাবজি মোবাইল অ্যাপ ও ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া অ্যাপটি সম্পূর্ণ আলাদা। সরকারের তরফে প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে আইনজীবী এন সামায়া বালান বলেন যে, কেবল মাত্র সরকারের হাতেই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কম্পিউটার অ্যাকসেস বন্ধ করার। পাশাপাশি কেন্দ্রের তরফে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এই গেমটি ব্যান করার মতো উদ্বেগজনক বিষয় এখনও পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি এবং কোনও দিক থেকে কোনও অভিযোগও আসেনি সেটিকে নিষিদ্ধ করার। সরকারের এমন আশাব্যঞ্জক উত্তর থেকেই মনে করা হচ্ছে যে, ভারতে ক্রাফ্টন-এর এই জনপ্রিয় ব্যাটল রয়্যাল টাইটেল বিজিএমআই বা ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া নিষিদ্ধ করার কোনও সম্ভাবনা নেই।
এদিকে গত মঙ্গলবার প্রহর নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া গেমটি ব্যান করার আহ্বান জানিয়েছিল ভারত সরকারের কাছে। ওই সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছিল, ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়াকেও ৫৪টি ব্যান করা চিনা অ্যাপের তালিকভুক্ত করুক কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি প্রহর আরও বলেছিল, “সরকারের তরফে ওই ৫৪টি অ্যাপের তালিকায় ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া গেমটি না রেখে ভুল করেছে।”
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রহরের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস অনুমোদিত স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। তাদের তরফে ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া ও তার পূর্বসূরি পাবজি মোবাইল এবং গেমগুলিতে চিনের প্রভাব সম্পর্কেও তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছিল। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের জাতীয় কনভেনার অশ্বিনী মহাজন দাবি করেছিলেন, “সম্প্রতি ৫৪টি চিনা অ্যাপ ব্যান করার যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে, তার জন্য আমরা শুভেচ্ছা জানাই। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সব ধরনের চিনা পণ্য বয়কট করার জন্য ভারতের জনগণের চলমান দাবির সঙ্গে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রহরের তরফ থেকে ভারত সরকারের কাছে এই মর্মে একটি চিঠি লিখেছিলেন সংস্থার জাতীয় কনভেনার ও প্রেসিডেন্ট অভয় মিশ্র। চিঠিতে তিনি দাবি করেছিলেন, “টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড ভারতে পাবজি লঞ্চ করেছিল। ২০২০ সালে যে সময়ে এই গেমটি দেশে ব্যান করা হয়েছিল, সে সময়ে তা প্রায় সবথেকে বেশি ডাউনলোডও হয়েছিল। তার এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভারতে পুনরায় পাবজি নিয়ে আসা হল, যা টেনসেন্টেরেই একটা সংস্থা ক্রাফ্টন এবং ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া নামে। আর এটি এমনই একটি পদক্ষেপ, যার উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্টতই ভারতের নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করা।”
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের কাছে ফ্রি ফায়ারের পর ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া ব্যানের আহ্বান জানাল আরএসএস
আরও পড়ুন: মার্চেই আসছে বিজিএমআই ১.৯ আপডেট, নতুন ফিচার্স কী কী থাকছে, জেনে নিন
আরও পড়ুন: ব্যাটলগ্রাউন্ডে এবার জুজুৎসু কাইসেন ইভেন্ট, ৩২ স্টেজ আনলক করতে পারলেই আকর্ষণীয় পুরস্কার