Garena Free Fire Ban: চিনা গেম না হয়েও ভারতে ফ্রি ফায়ার কেন নিষিদ্ধ? কেনই বা গুগল ও অ্যাপল তাদের অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে নিল?
গারিনা ফ্রি ফায়ার তো চিনা গেম নয়। এই গেমের ডেভেলপার সংস্থার নাম সি লিমিটেড, যারা চিনের নয়। আর সেই কারণেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, চিনা গেম না হওয়া সত্ত্বেও কেন গারিনা ফ্রি ফায়ার ভারতে ব্যান করা হল?
উইকেন্ড শেষ হতেই দেশের ব্যাটল রয়্যাল গেমারদের জন্য দুঃসংবাদ! এদিন কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফ থেকে এক ধাক্কায় মোট ৫৪টি মোবাইল অ্যাপ ব্যান (Chinese App Ban In India) করা হয় যেগুলি চিনা বলে দাবি করা হয়েছে। দেশের নিরাপত্তায় অ্যাগুলি আঘাত হানছে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। এই ৫৪টি অ্যাপের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল গারিনা ফ্রি ফায়ার (Garena Free Fire)। সোমবার সকালে থেকেই গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store) এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে গায়েব হয়ে যায় ফ্রি ফায়ারের প্রতিটি ভার্সনই, যেখানে সরকার কেবল মাত্র ফ্রি ফায়ার ইলুমিনেট অ্যাপটি ব্যান করেছে। কিন্তু গারিনা ফ্রি ফায়ার তো চিনা গেম নয়। এই গেমের ডেভেলপার সংস্থার নাম সি লিমিটেড, যারা চিনের নয়। আর সেই কারণেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, চিনা গেম না হওয়া সত্ত্বেও কেন গারিনা ফ্রি ফায়ার ভারতে ব্যান করা হল?
ভারতের গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে গারিনা ফ্রি ফায়ার গায়েব হওয়ার পর সরকারের তরফে চিনা অ্যাপ ব্যানের তালিকা প্রকাশিত হতেই গেমাররা বিষয়টি নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যান। কিন্তু কারও মাথায় ঢোকে না যে, চিনা গেম না হয়েও কেন গারিনা ফ্রি ফায়ার ব্যান করা হল। কারণ, গারিনা ফ্রি ফায়ারের প্যারেন্ট কোম্পানি অর্থাৎ পাবলিশার সংস্থার নাম সি লিমিটেড এবং এই সংস্থাটির হেডকোয়ার্টার সিঙ্গাপুরের। গেমে রেজিস্ট্রেশনও রয়েছে সিঙ্গাপুরই। এ বিষয়ে সরকারের তরফে নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না দেওয়ার কারণেই মূলত ধন্দ্বের আরও অবকাশ। কিন্তু এই সি লিমিটেড সংস্থার যিনি মালিক, সেই ফরেস্ট লি জন্মেছিলেন চিনে। পরবর্তীতে তিনি সিঙ্গাপুরে চলে আসেন। গারিনা ফ্রি ফায়ার ব্যানের ক্ষেত্রে সেটিও একটি সঙ্গত কারণ হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভারতে চিনা অ্যাপ ব্যানের প্রথম ওয়েভ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। সে বার পাবজি মোবাইল-সহ আরও ১০০টিরও বেশি চিনা অ্যাপ ভারতে ব্লক করা হয়েছিল। আবার পাবজি মোবাইলও চিনের গেম নয়। সেটি দক্ষিণ কোরিয়ার। কিন্তু ভারতে পাবজি মোবাইলের ডিস্ট্রিবিউশন সংক্রান্ত দায়িত্বভার ছিল চিনা সংস্থা টেনসেন্ট গেমস-এর হাতে। সরকারের তরফে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছিল, সেই কারণেই ভারতে তা ব্যান করা হয়। পরবর্তীতে চিনা টেনসেন্টের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন নামে ভারতে পাবজি কামব্যাক করে। এদিনের ৫৪টি অ্যাপ মিলিয়ে ভারতে এখনও পর্যন্ত চিনা অ্যাপ ব্যানের সংখ্যা দাঁড়াল ৩২৪। যদিও গারিনা ফ্রি ফায়ার ব্যানের কারণ পরিষ্কার নয়।
এদিকে ভারতে গুগল প্লে স্টোরে যখন ফ্রি ফায়ার বেপাত্তা, ঠিক তখনই আশ্চর্যজনক ভাবে ফ্রি ফায়ার ম্যাক্স কিন্তু এখনও ডাউনলোডের জন্য উপলব্ধ। যদিও ভারতের অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে গারিনা ফ্রি ফায়ার এবং গারিনা ফ্রি ফায়ার ম্যাক্স দুটোই তুলে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে চিনা অ্যাপ ব্যানের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতে গারিনা ফ্রি ফায়ার ম্যাক্সের নামও নেই। সেখানে কেবল মাত্র গারিনা ফ্রি ফায়ার ইলুমিনেট ভার্সনের নাম রয়েছে।
তবে কয়েকদিন আগেই একটি বিতর্কে জড়িয়েছিল গারিনা ফ্রি ফায়ার। পাবজি মোবাইলের ডেভেলপার সংস্থা ক্রাফ্টন অভিযোগ করেছিল যে, গারিনা ফ্রি ফায়ারের সবকিছু পাবজি মোবাইল থেকে কপি করা হয়েছে। এই মর্মে সংস্থাটি একটি মামলাও রুজু করে। অভিযোগ, ফ্রি ফায়ারের একাধিক এলিমেন্ট যেমন, ভেহিকলস, ল্যান্ডস্কেপ, ম্যাপে বিভিন্ন লোকেশনের নাম, অস্ত্রশস্ত্র, এমনকি স্কিন পর্যন্ত পাবজি সংক্রান্ত গেমগুলি অর্থাৎ পাবজি ব্যাটলগ্রাউন্ডস, পাবজি মোবাইল, ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া, গেম ফর পিস এবং পাবজি নিউ স্টেট-এর হুবহু সঙ্গে মিলে গিয়েছে।
পাবজি কর্তৃপক্ষ শুধু যে গারিনা ফ্রি ফায়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল এমনটা নয়। সেই সঙ্গে একটা কপি করা গেমকে গুগল এবং অ্যাপল তাদের প্লে স্টোরে কেন রেখে প্রোমোট করছে, তা নিয়ে এই দুই সংস্থার বিরুদ্ধেও মামলা করেছে পাবজির ডেভেলপার ক্রাফ্টন। চিনা গেম না হয়েও কেন ভারতে গারিনা ফ্রি ফায়ার ব্যান হল, সেই তথ্য এখনও অধরা। একমাত্র সরকারের দিক থেকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা এলেই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে অ্যাপল এবং গুগল তাদের প্লে স্টোর থেকে গেমটি সরাতে পারে কপিরাইট সংক্রান্ত পাবজি মোবাইল কর্তৃপক্ষের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই।
আরও পড়ুন: আবার প্রচুর মানুষ অ্যাঙ্গরি বার্ডস খেলতে শুরু করেছেন, গেমের এই ৩ ভার্সন এখন সুপারহিট!
আরও পড়ুন: প্রতারণার জন্য ভারতে ফের ২ লাখ অ্যাকাউন্ট ব্যান করল বিজিএমআই ডেভেলপার ক্রাফ্টন