5G IN USA: বিমান চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে 5G? ভয় নাকি অহেতুক ভাবনা?
আমেরিকায় 5G পরিষেবা রোল আউট নিয়ে একাধিক সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে আর মাত্র হাতে গোনা কয়েক দিনের মধ্যেই সেখানে 5G চলে আসবে।
ফ্লাইট টেক-অফ এবং অবতরণের সময় যাত্রীদের একটাই কথা শুনতে হয়, সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ করে রাখতে হবে। কারণ এটি ফ্লাইট ডেকের যন্ত্রগুলির রিডিংকে প্রভাবিত করে। এখনও পর্যন্ত মাত্র দুটি ঘটনার কথা শোনা গিয়েছে। দুটি ঘটনাতেই উঠে এসেছে, মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার উচ্চতার কারণে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যদিও একটি বড় অংশ, এই ধরনের কোনও তত্ত্ব অস্বীকার করে এবং এই ধরনের ঘটনাকে আজগুবি বলে অভিহিত করে। তাও অনেক যাত্রীই এই সতর্কতা উপেক্ষা করে বিমানে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে থাকে।
তবে খুব শীঘ্রই চিত্রটি সম্পূর্ণ ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। কারণ বোয়িং এবং এয়ারবাস ককপিট ফ্লাইট ডেকে 5G-র প্রভাবকে খুব গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু 5G পরিষেবা C ব্যান্ডে কাজ করে, তাই এটি উচ্চতা পরিমাপের রিডিংয়ের উপর গভীর ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। সেই সঙ্গে মেঘ এবং কুয়াশার সময় বিপর্যয়ও সৃষ্টি করতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে বিমানবন্দরগুলিতে বিমান চলাচলে বড় বিলম্বের কারণ হতে পারে 5G নেটওয়ার্ক। রয়টার্স নিউজ এজেন্সির একটি প্রতিবেদনে বোয়িং সিইও ডেভ ক্যালহাউন এবং এয়ারবাস আমেরিকার সিইও জেফ্রি নিটেলের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এটিঅ্যান্ডটি ( AT&T) এবং ভেরিজোন কমিউনিকেশনস তাদের 5জি ওয়্যারলেস পরিষেবা চালু করার জন্য পূর্ব নির্ধারিত ৫ জানুয়ারির দিনটি স্থগিত করেছে। বিমান চলাচলের ফ্রিকোয়েন্সি এবং 5G প্রায় অভিন্ন হওয়ায়, ওভারল্যাপের ক্ষেত্রে পাইলট ভুল ডেটা পাওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। আর সেই কারণেই তা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এখানে মনে রাখা দরকার যে, এই মাসে আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এই আশঙ্কা প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট নির্দেশিকা জারি করেছে। এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। কারণ বেতার শিল্প এই আশঙ্কাগুলিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দাবি করা হয়েছে, ফ্রিকোয়েন্সিতে হস্তক্ষেপের কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
অন্য দিকে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফ্লাইট বিলম্বের কারণে এয়ারলাইনগুলি প্রায় ২.১ মার্কিন ডলার বিলিয়ন ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ যখন অল্টিমিটার সন্দেহজনক হয়, তখন পাইলটরা বিভ্রান্ত হতে পারেন এবং কম দৃশ্যমানতার সময় অবতরণ থেকে দূরে থাকতে পারেন। এখানে উল্লেখ্য, একটি সিনেটের শুনানির সময় সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি কেলি বলেছিলেন, “আপনি যদি আমাদের জিজ্ঞাসা করেন যে, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ কী, তা হল 5G।”
শূন্য দৃশ্যমানতার সময়, পাইলট অল্টিমিটার থেকেই বিমানের উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা পান। কিন্তু এফএএ-এর (FAA) নির্দেশের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ পাইলটদের এই ধরনের পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে অবতরণ না করতে বলা হয়। কারণ 5G পরিষেবায় হস্তক্ষেপের ফলে বিমান অবতরণে বড়সড় সমস্যা হতে পারে। FAA-র তরফ থেকে বলা হয়েছে, কম দৃশ্যমানতার সময় হাজার হাজার মার্কিন বিমান সংস্থা স্বয়ংক্রিয় অবতরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করবে না। বিশেষ করে যদি তারা এমন কোনও এয়ারস্ট্রিপে অবতরণ করেন যেখানে 5G হস্তক্ষেপ বা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অলটিমিটার রিডিং নিয়ে ধন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
কোভিড অতিমারির পরে যখন বিমান সংস্থাগুলি টিকে থাকার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছে, এমনকি ওমিক্রনও ভয় দেখাচ্ছে, এমনই একটা সময়ে 5G-র উদ্বেগ এই বিপর্যস্ত এয়ারলাইন সেক্টরের কফিনে শেষ পেরেক হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে।
Verizon এবং AT&T-এর মতো অপারেটররা গ্যারান্টি দিচ্ছে যে 5G-সম্পর্কিত সমস্ত ভয় একবারে ভিত্তিহীন। যদিও FAA তাদের যুক্তি মানতে অস্বীকার করছে। ওয়্যারলেস অপারেটরদের অভিমত যে, ইলেকট্রনিক আইটেম ব্যবহারে একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। যদিও নেতিবাচক প্রভাব দেখানোর জন্য কোনও চূড়ান্ত প্রমাণ ছিল না। উল্লেখযোগ্যভাবে, তারা ইতিমধ্যে 5G চালু করতে এক মাস বিলম্ব করেছে এবং আমেরিকান বিমান শিল্পের মনোভাব নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত তারা। এখন ইউরোপও এই একই সময়ে তাদের এয়ারলাইন্সকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার কথা আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে।
পাইলট এবং বিমানের সরঞ্জামগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ফ্লাইট ডেকে বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। প্রথমত, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেওয়া উচিত যে 5G থেকে কোনও বিপদ নেই। অন্যথায় এই অবিশ্বাসটি বিমান শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য ভাল হবে না। 5G প্রযুক্তির প্রতিরক্ষায়, প্রায় ৪০টি দেশ ইতিমধ্যে এই স্পেকট্রামটি ব্যবহার করছে, যেখানে 5G সংকেত এবং বিমান চলাচলের সরঞ্জাম একই ব্যান্ডে কাজ করে। আমেরিকান এয়ারলাইন্সগুলো প্রতিনিয়ত খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও কোনও রকম চাপ বা বিপদ ছাড়াই এসব দেশে উড়ে যায়। তাহলে এখন কেন এত দুশ্চিন্তা, সেই প্রশ্নই উঠছে বিশেষজ্ঞ মহলে।
কিন্তু এটাও একটা বাস্তবতা যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এভিয়েশন সেক্টরে যা হয়, তা একভাবে বৈশ্বিক মাপকাঠিতে পরিণত হয়। যদিও ইউরোপ তার নিজস্ব একটি সমান্তরাল নিরাপত্তা সংস্থা তৈরি করার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি ইউরোপ এই বিষয়ে নিজেকে রক্ষা করার সময় যুক্তিসঙ্গত সতর্কতাও অবলম্বন করেছে। আপনি কি এমন একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে চান, যেখানে ঝড়ের মধ্যে আটকে থাকা একটি বিমান 5G সিগন্যাল অলটিমিটারে সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং বিমানটি পাইলট যে উচ্চতায় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ঠিক সেই উচ্চতায় উড়ছে না?
যদিও এভিয়েশন ও ওয়্যারলেস ইন্ডাস্ট্রির বড় খেলোয়াড়রা এই সমস্যার সমাধানে কিছুটা হলেও একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু এখন যেহেতু 5G মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হতে মাত্র দুই সপ্তাহ দেরি, সে ক্ষেত্রে বিমান ও ওয়্যারলেস শিল্পের প্লেয়ারদের মধ্যে কোনও ঐক্যমত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপের মতোই মেসেজিং অ্যাপ লঞ্চ করল ভারতীয় সেনাবাহিনী, ফিচার্স জেনে নিন
আরও পড়ুন: এবার eSIM সাপোর্টেড স্মার্টওয়াচ নিয়ে এল ভিভো, দাম ও ফিচার্স জেনে নিন
আরও পড়ুন: দু টুকরো 3D প্রিন্টেড প্লাস্টিক এক ঘণ্টায় জুড়ে দিলেন ইঞ্জিনিয়াররা, স্রেফ আলোর সাহায্যে