ছবি দেখলে যেমন একটা মানুষের একটু হলেও মন পড়া যায়, তেমনই বিভিন্ন সংস্থার লোগো (Logo) থেকে বোঝা যায় সেই সংস্থার উদ্দেশ্য। ঠিক যেমনটা অ্যাপল লোগোর (Apple Logo) ক্ষেত্রে। অ্যাপল বরাবরই তার প্রিমিয়াম সেগমেন্টের প্রডাক্টের জন্য জনপ্রিয়। কম দামের পণ্য এই সংস্থার থেকে আশাই করা যায় না। তার সবথেকে বড় কারণ হল, গ্রাহকের অভিজ্ঞতায় কখনও আপোস করতে চায় না কুপার্টিনোর কোম্পানিটি। ইদানিং আবার স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের তথ্য নিরাপত্তা নিয়েও একটা ভয় কাজ করে। সেই দিকটাও মাথায় রেখে অ্যাপল তার ফোন থেকে শুরু করে ম্যাকবুক সবেতেই গ্রাহকের তথ্য নিরাপত্তার দিকটা নিশ্চিত করে। কয়েক দশক ধরে অভাবনীয় এবং অনবদ্য সব প্রডাক্ট লঞ্চ করে বিশ্বের সবথেকে মূল্যবাণ সংস্থাও এখন অ্যাপল, বাজারে যাদের মূলধন ২.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমেরিকান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজ়াইনার, বিজ়নেস ম্যাগনেট এবং ইনভেস্টর স্টিভ জবস এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, এত নাম করা, এত টাকার কারবার করা একটা সংস্থার লোগোতে একটা আধ-খাওয়া অ্যাপল (Half-eaten Apple) কেন থাকে?
অ্যাপলের বিভিন্ন প্রডাক্টে যেমনটা দেখা যায়, তেমন একটি হাফ-খাওয়া আপেলই হল স্টিভ জবসের সংস্থার লোগো। কিন্তু ১৯৭৬ সালে আজকের এই টেক জায়ান্টটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন তার লোগো ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। আজ থেকে প্রায় ৪৬ বছর আগে শুরুর লগ্নে অ্যাপলের লোগোতে ছিল, একটি আপেল গাছের নীচে বসে আছেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে ওই আধ-খাওয়া আপেলের লোগোটির ডিজ়াইন করেন জনপ্রিয় ডিজ়াইনার রব জ্যানফ। প্রাথমিক ভাবে সেই আধ-খাওয়া অ্যাপলের লোগোটি ছিল রামধনু রঙের।
সম্প্রতি কোডজেসচার নামক একটি পোর্টালের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, অ্যাপলের এমনতর লোগোর কারণ সম্পর্কে। সেই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে অ্যাপল লোগো ডিজ়াইনার রব জ্যানফের একটি সাক্ষাৎকারে। অ্যাপল লোগোর এই ডিজ়াইনার জানিয়েছিলেন যে, ওরকম একটা আধ-খাওয়া আপেল দেওয়ার অর্থ ছিল স্কেল ডেমনস্ট্রেট করা। অর্থাৎ, ওটি যে আপেল এবং তা টমেটো বা চেরি নয়, লোকে যেন একবার দেখার পরই বিষয়টি বুঝতে পারেন। পাশাপাশি এই লোগো দেওয়ার পিছনে ছিল আরও একটি কারণ। রব জ্যানফ বলেছিলেন, একটা আপেল সবাই ক্রয় করতে পারেন এবং কামড়ও দিতে পারেন – বিশ্বের সব মানুষের কাছে একটা আধ-খাওয়া লোগোর মাধ্যমে এই বার্তাটাও পৌঁছে দেওয়া ছিল তাঁর এবং স্টিভ জবসের আর একটা উদ্দেশ্য।
তবে শুধু অ্যাপল নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টেক সংস্থা তাদের লোগো নিয়ে একাধিক পরিবর্তন করেছে। যদিও মূল লোগো একই রাখা হয়েছে এবং তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই সামান্য কিছু পরিবর্তনও করা হয়েছে। ঠিক যেমন গুগল-এর ক্ষেত্রে। ২০১৫ সালে গুগল তার লোগোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করে। পাশাপাশি গুগল ক্রোমেরও নিয়ম করে বিভিন্ন সময়ে লোগো বদলেছে। আপার এই সফ্টওয়্যার জায়ান্টের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রেও কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
যদিও অ্যাপেলের প্রথম লোগোটি রামধনু রঙা হলেও তার ক্রম কিন্তু ‘বেনীআসহকলা’ (বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল) আকারে রাখা হয়নি। অর্থাৎ রামধনুর ক্ষেত্রে পরপর যে রংগুলি দেখা যায়, অ্যাপল লোগো প্রাথমিক ভাবে রামধনু রঙা করা হলেও রঙের ক্রমান্বয় ওলটপালট করা হয়েছিল। পাতা উপরের দিকে থাকার ফলে লোগোতে সবুজ রং প্রথমে ছিল। পরে ১৯৯৮ সালে অ্যাপল লোগোর একটাই রং রাখা হয়। নীল, ধূসর বিভিন্ন এক রঙা হতে হতে অ্যাপল লোগোর রং এখন কালো।
অনেকে আবার এ-ও দাবি করে থাকেন যে, অ্যাপল লোগোতে একটা আপেলে কামড়ের মাধ্যমে কম্পিউটার উৎসাহীদের জন্য একটা হাইপ তৈরি করা যে, এই সংস্থাটি কম্পিউটিং এবং টেলিকমিউনিকেশন সেগমেন্টের ডেটার একটি ইউনিট। যদিও এই তত্ত্ব অ্যাপল লোগো তৈরি করার সময় রব জ্যানফ ও স্টিভ জবস কতখানি মাথায় রেখেছিলেন তার সত্যতা এখনও বিচার্যের বিষয়। এদিকে ২০২২ সালের প্রথম অ্যাপল ইভেন্টটি গতকালই অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন ফোন, ম্যাকবুক-সহ আরও প্রডাক্ট সেখানে নিয়ে এসেছে কুপার্টিনোর এই টেক জায়ান্ট।
আরও পড়ুন: বলিহারি এসি! পকেটে নিয়েই ঘোরা যাবে, ১০,০০০ টাকারও কমে মুহূর্তে করবে সারা শরীর ঠান্ডা
আরও পড়ুন: আইফোন ফেলে দিয়ে নাগরিকদের ‘আইয়া টি ওয়ান’ ব্যবহার করতে বলছে রাশিয়া, ফোনের বিশেষত্ব কী?
আরও পড়ুন: অনলাইনে মেট্রোর স্মার্ট কার্ড রিচার্জ এখন আরও সহজ! এসে গেল ‘মেট্রো রাইড কলকাতা’ মোবাইল অ্যাপ