Web3: ওয়েব থ্রি কী? এলন মাস্ক এবং জ্যাক ডরসে এর বিরুদ্ধে কেন?
Web 3: ওয়েবথ্রি আসলে এমনই একটি নেটওয়ার্ক হতে চলেছে যা চালাতে কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই এবং যে কোনও সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবে। আপনার সার্ভিসের জন্য কারও অনুমতি বা কারও অ্যাকসেস দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
ওয়েব থ্রি (Web3) সম্পর্কে কিছু শুনেছেন? এটি আসলে পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট, যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন টেসলা সিইও এলন মাস্ক (Elon Musk) এবং টুইটারের প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডোর্সে (Jack Dorsey)। ইন্টারনেটের আসন্ন এই প্রজন্ম ওয়েব থ্রি আসলে কী আর তা নিয়ে এই টেক বিগউইগরা সন্দেহই বা কেন প্রকাশ করছেন, সেই সব তথ্য এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
ওয়েব থ্রি কী?
১৯৮৯ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) লঞ্চ করেছিলেন টিম বার্নার্স-লি। যদিও সেটিকে ওয়েব ওয়ান বলা হত না। তবে তা মানুষকে অনলাইনে থাকতে দিত। তার ঠিক পরের প্রজন্ম হল ওয়েব টু (Web 2)। ১৯৯৯ সালে লঞ্চ হওয়া এই আধুনিক প্রজন্মের ইন্টারনেটকে পোশাকি ভাষায় ওয়েব টু না বলা হলেও ইন্টারনেটের ধারণা কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে বদলে দিয়েছিল। ২০১৪ সালে গেভিন উড ওয়েব থ্রি-র ধারণা নিয়ে আসেন। প্রসঙ্গত ইথেরিয়ামের উদ্ভাবক হিসেবে গেভিন উডের নামই উঠে আসে। এই ওয়েব থ্রি আসলে ইন্টারনেটকে তার বর্তমান অবস্থাতেই রেখে দেয় এবং তার সর্বক্ষেত্রে ব্লকচেন যোগ করে। ওয়েব থ্রি-র মূল ধারণাটি হল ইন্টারনেটকে সম্পূর্ণ রূপে বিকেন্দ্রীকরণ করা এবং গুগল-এর জায়ান্টদের সরিয়ে দেওয়া। এই ব্লকচেনের উপরে ভিত্তি করে ইন্টারনেটের বিকেন্দ্রীকরণের অর্থই হল, ইউজারদের হাতে ‘মালিকানা’ তুলে দেওয়া।
ওয়েব থ্রি ঠিক কী ভাবে কাজ করবে?
ইথেরিয়াম, যা আসলে একটি বিকেন্দ্রীকৃত ওপেন-সোর্স ব্লকচেন, যাকে ওয়েব থ্রি বা বিকেন্দ্রীকৃত কিছু অ্যাপ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে তা মূলত ব্লকচেনের মাধ্যমে চালিত হবে। ইথেরিয়ামের তত্ত্ব অনুযায়ী, ওয়েবথ্রি আসলে এমনই একটি নেটওয়ার্ক হতে চলেছে যা চালাতে কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই এবং যে কোনও সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবে। আপনার সার্ভিসের জন্য কারও অনুমতি বা কারও অ্যাকসেস দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অন্য কোনও টোকেনের মাধ্যমে ব্লকচেন ব্যবহার করে পেমেন্ট করা যাবে। এই তত্ত্ব অনেকের কাছেই ইউটোপিয়ান বা র্যাডিক্যাল হিসেবে মনে হতে পারে কিন্তু পরক্ষণেই আবার তার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বা NFT-র মাধ্যমে পেমেন্ট সেই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভাবে নাকচ করে দেবে।
যে ভাবে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, সেই পদ্ধতি বদলে যাবে?
যাঁরা প্রথম বার ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন এবং শুরুতেই যাঁদের কাছে ওয়েব থ্রি আসবে, তাঁদের কাছে আগামী প্রজন্মের এই ইন্টারনেট ইউটোপিয়ান বলেও মনে হতে পারে। খুব সহজ করে বলতে গেলে, আপনি এখন যেমন ইন্টারনেটে যা কিছু করতে যাবেন, তাতেই গুগলের শরণাপন্ন হতে হয়। ওয়েব থ্রির ক্ষেত্রে এমন কিছু হবে না। ব্লকচেন নিয়ে এখন অনেক কথা শোনা গেলেও তা আসতে অনেক দেরি। ওয়েব থ্রি আসলে সব দিক থেকে ওয়েব টু-র মতোই হবে। তবে মালিকানা তুলে দেওয়া হবে ইউজারের হাতেই।
ওয়েব থ্রি নিয়ে জ্যাক ডরসে এবং এলন মাস্ক সন্দেহপ্রবণ কেন?
এলন মাস্ক সম্প্রতি টুইট করেছিলেন যে, “ওয়েব থ্রি কি কেই দেখেছেন? আমি তো এখনও পর্যন্ত খুঁজেই পেলাম না।” মাস্ক আরও বলছেন, “আমি মনে করি না যে, ওয়েব থ্রি বাস্তব এবং মার্কেটিং দুনিয়ায় এর কোনও অস্তিত্ব থাকতে পারে। কেবল মাত্র একটা গুঞ্জন সৃষ্টি করেই এই ওয়েব থ্রি নিয়ে বেশি মাতামাতি করা হচ্ছে।”
এদিকে আবার জ্যাক ডরসে মনে করেন যে, সাধারণ মানুষ ইন্টারনেটের মালিক হতে পারবেন না বরং ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা হবেন। গত সোমবার রাতেই একটি টুইট করে জ্যাক ডরসে বলেছেন, “ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের ইনসেনটিভ ছাপিয়ে যেতে পারবে না ওয়েব থ্রি এবং এর ফলে তাঁরাই সবথেকে বেশি লাভবান হবেন। এটি আসলে একটি ভিন্ন ধরনের কেন্দ্রীভূত সত্ত্বা হতে চলেছে। এখন মানুষকেই ঠিক করে নিতে হবে, তাঁরা কোনটা বেছে নেবেন।”
একটা ইউটোপিয়ান ধারণা বা সন্দেহপ্রবণ কোনও বিষয় যে অনেক সময় যুগান্তকারী হয়ে উঠতে পারে, সেটআ আমরা আগেই দেখেছি। তবে ওয়েব থ্রি নিয়ে মার্কেটে যে সব ধারণা ও গুঞ্জন এখনও পর্যন্ত ঘোরাফেরা করছে, তার সব কিছুই কতটা বাস্তবায়িত হতে পারে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান বিশেষজ্ঞ মহল। কিন্তু নয়ের দশকে কখনও কী ভেবে দেখেছিলেন যে, একটা মুঠোফোনই আপনার জীবনের সব কাজ করে ফেলতে পারে। সেই সম্ভাবনার কথা কেউ বললে আপনি হেসে উড়িয়ে দিতেন! কে বলতে পারে, ওয়েব থ্রি-র ক্ষেত্রেও তো এমনটা হতে পারে।
আরও পড়ুন: এবার মহাকাশে খাবার পৌঁছে দিল উবর ইটস, কী কী অর্ডার করছিলেন মহাকাশচারীরা?
আরও পড়ুন: ভারতেও এসে গেল বীভৎস ১৮জিবি র্যামের এই স্মার্টফোন, কবে থেকে কিনতে পারবেন, জেনে নিন এখনই
আরও পড়ুন: বিরল আবিষ্কার! জীবাশ্ম ডিমের ভিতর পাওয়া গিয়েছে ডায়নোসরের ভ্রূণ, অবাক জীবাশ্মবিদরাও