গবেষকরা বেশ কিছুদিন আগেই ম্যাগনেটোইলাস্টিক ইফেক্ট আবিষ্কার করেছিলেন। যখন অনেকগুলো ছোট ছোট চুম্বকের ক্রমাগত ধাক্কা এবং যান্ত্রিক চাপের কারণে একটা বস্তু আস্তে আস্তে ম্যাগনেটে বদলে যায়, সেই এফেক্টকেই ম্যাগনেটোইলাস্টিক বলা হয়। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে এই এফেক্টটা শুধুমাত্র অনমনীয় কোনও জায়গাতেই এফেক্ট করে না, এটা নরম জায়গার ক্ষেত্রেও কার্যকর। এই ধারণাটি প্রমাণ করার জন্য, দলটি একটি কাগজের মত পাতলা সিলিকন ম্যাট্রিক্সে মাইক্রোস্কোপিক চুম্বক ছড়িয়ে দিয়েছিল। এগুলি ঐ ম্যাট্রিক্সে একটা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে যা ম্যাট্রিক্সে একটা অস্থির শক্তির তৈরি করে। চৌম্বক ক্ষেত্রের এই শক্তি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় যে বিদ্যুৎ তৈরি হয়েছে।
ইউসিএলএ স্যামুয়েলির বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক জুন চেন বলেন, “আমাদের গবেষণায় ব্যবহারিক শক্তি, সেন্সিং এবং থেরাপিউটিক প্রযুক্তির জন্য একটি নতুন পথ খোলা হয়েছে। এগুলি প্রত্যেকটিই মানবদেহ কেন্দ্রিক।” এই প্রযুক্তিকে যে বিষয়টি অনন্য করে তোলে তা হল এটি মানুষই এই ইলেকট্রিক ওয়েভগুলো তৈরি করতে পারবে। ত্বকের ওপর যখন যন্ত্রটি চাপানো হয় তখন আমাদের ত্বকে বেশ আরাম হয়। কারণ এটি বিদ্যুতের চেয়ে ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ওপর নির্ভর করে। সেই কারণে আমাদের ঘাম এই যন্ত্রের কার্যকারিতায় কোনও প্রভাব ফেলতে পারে না।”
চেন এবং তাঁর দল একটি প্ল্যাটিনাম-ক্যাটালাইজড সিলিকন পলিমার ম্যাট্রিক্স এবং নিওডাইমিয়াম-আইরন-বোরন ন্যানোম্যাগনেট দিয়ে তৈরি একটি ছোট আকারের ম্যাগনেটোলাস্টিক জেনারেটর তৈরি করেছিল। তারপর তাঁরা এটি একটি নরম, স্ট্রেচেবল সিলিকন ব্যান্ডের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে মানুষের কনুইতে লাগিয়ে দেয়। তাঁরা যে ম্যাগনেটোইলাস্টিক এফেক্ট পর্যবেক্ষণ করেছিল তা ছিল অনমনীয় সেটআপের চেয়ে চারগুণ বেশি। ফলস্বরূপ, ডিভাইসটি প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ৪.২৭ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের বৈদ্যুতিক স্রোত তৈরি করতে থাকে। যা পরবর্তী তুলনামূলক সেরা প্রযুক্তির চেয়ে ১০,০০০ গুণ ভাল।
প্রকৃতপক্ষে, এই ছোট আকারের ম্যাগনেটোলেস্টিক জেনারেটর এতটাই সংবেদনশীল যে এটি মানুষের স্নায়ুর তরঙ্গকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করতে পারে। যার ফলে এটি স্ব-চালিত এবং ওয়াটারপ্রুফ হার্ট-রেট মনিটর হিসাবে কাজ করতে পারে। এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যান্য পরিধানযোগ্য ডিভাইস, যেমন ঘাম সেন্সর বা থার্মোমিটার তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।।
এই পরিধানযোগ্য জেনারেটর তৈরির জন্য প্রচেষ্টা এখনও চলছে। এটি মানুষের শরীরের চলাচল থেকে শক্তি সংগ্রহ করে বিভিন্ন সেন্সর এবং অন্যান্য যন্ত্রগুলিতে সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের জিনিসের কতটা ব্যবহার হবে সেই ভাবনাই এই প্রযুক্তির গতি থামিয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: Jupiter’s Great Red Spot: বৃহস্পতির গ্রেট রেড স্পটে ক্রমশ বাড়ছে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ!
আরও পড়ুন: Fossil: সাড়ে ১১ কোটি বছর আগে আফ্রিকায় রাজ করত এই ‘অদ্ভূত’ ডায়নোসর! জীবাশ্ম দেখে অবাক বিজ্ঞানীরা