আমরা খুব ভুলে যাই। ঘনঘন ভুলে যাই (Forgetting)। অফিসে কিছু না কিছু একটা ফেলে আসি, বাজারে গিয়ে কিছু না কিছু একটা আনতে ভুলে যাই – এসব যেন আমাদের রোজকার ঘটনা। তার উপরে আবার দোসর হয়েছে স্মার্টফোন, স্মার্ট ডিভাইস, যাদের ডিজিটাল মেমোরি মানুষের ভুলে যাওয়ার ক্ষমতাটা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের স্মৃতি এবং ধরে রাখার ক্ষমতা গত এক দশকে ব্যাপক ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। কারণ আমরা জেনে গিয়েছি, মনে রাখার দরকার নেই, ফোন আছে তো, তার ডিজিটাল মেমোরিতে সবই থাকবে। এখন সেই তালিকায় যদি আপনিও থাকেন, তাহলে জানবেন, আপনি একাই নন। আর তাতে কিছু ভুলও নেই। বিজ্ঞানীরা (Scientists) বলছেন, ভুলে যাওয়া আসলে আপনারই কোনও কিছু শেখার (Learning) একটা প্রক্রিয়া।
ভুলে যাওয়া আসলে শেখার একটা প্রক্রিয়া
নেচার রিভিউজ় নিউরোসায়েন্স জার্নালে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন, কিছু ভুলে যাওয়া আসলে শেখার একটি রূপ হতে পারে। এই জার্নাল নিয়েই নিউরোসায়েন্সনিউজ়-এর একটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ছোটবেলা থেকেই একটা বিষয় আমরা জেনে অভ্যস্ত যে, ভুলে যাওয়া আমাদের মস্তিষ্কের ত্রুটি। আসলে বিষয়টি কিন্তু তা নয়। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এটি আসলে মস্তিষ্কেরই একটি ‘কার্যকর বৈশিষ্ট্য।’
আমরা স্মৃতিতে কোনও বিষয় ধরে রাখব কি না বা সেগুলি হারাব কি না, তা আসলে আমাদের “পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া এবং পূর্বাভাসযোগ্যতার উপর” নির্ভর করে। নিউরোসায়েন্সনিউজ-এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে, আপনি যদি নিজেকে অন্যদের তুলনায় প্রায়শই ভুলে যেতে দেখেন তবে এর মানে হল যে, আপনার নমনীয় আচরণ এবং বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু লোক যাঁরা একটি নির্দিষ্ট মোবাইল অপারেটিং সফ্টওয়্যার উপভোগ করেন না, তাঁরা কখনও একটি খারাপ অভিজ্ঞতা ভুলে যান না। হতে পারে তাঁদের ফোনে কী মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে, সেটা তাঁদের মনে নেই। আসলে বিষয়টি খুবই সহজাত একটা প্রবৃত্তি মানুষের। কারণ ভবিষ্যৎে যাতে তেমনই কোনও খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে না হয়, তাই সেই অভিজ্ঞতা তাঁদের সামনে সবসময়ই জ্বলজ্বল করে ওঠে, মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমটি নয়।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, ভুলে যাওয়া ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য মনে রাখার মতোই অপরিহার্য। গবেষণা ইঙ্গিত দেয়, স্মৃতিশক্তি হ্রাসের পরিবর্তে, আমরা সেই স্মৃতিগুলির অ্যাক্সেস হারাই যা আমাদের জিনিসগুলিকে ভুলে যেতে দেয়।
এই বিষয়ে যে বিজ্ঞানী দল গবেষণা করেছে তাঁদের বক্তব্য, মানুষ ভুলে যায় কারণ তার ব্রেন সেলে ‘সার্কিট রিমডেলিং’ চলতে থাকে, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় ‘ইনগ্রাম সেলস’ বলা হচ্ছে আর সেখানেই মেমোরি স্টোর করা থাকে। মনে করুন, আপনার এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভটি হারিয়ে গিয়েছে। তাতে কিন্তু আপনার স্টোর করে রাখা সব জিনিসই রয়েছে, কেবল আপনি অ্যাক্সেস হারিয়ে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: বেঁচে যাওয়া রান্নার তেলে দ্রুততার সঙ্গে ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়, কী ভাবে?