মানুষের মল কি শক্তির সবথেকে বড় উৎস হতে পারে? কয়লার জায়গায় বিদ্যুৎের অন্যতম উৎস হওয়ার কি কোনও সম্ভাবনা রয়েছে মানুষের মলে? হেঁয়ালি মনে হলেও সম্প্রতি এক গবেষকদলের রিসার্চে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। ইজ়রায়েলের বেন-গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মানব মলত্যাগের শক্তি-প্রদান ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য সম্প্রতি একটি শৌচাগার স্থাপন করেছেন।
পোল্ট্রি বর্জ্য দিয়ে শুরু হওয়া গবেষণায় পরবর্তীতে মানুষের মল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়, যা জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করতে অটোক্লেভে উত্তপ্ত করা হয় এবং তারপর শুকনো আকারে পিষে ফেলা হয়। এর গুঁড়ো আকারের সঙ্গে গবেষকরা জল মিশিয়ে ছোট ছোট ব্যাচ তৈরি করেন এবং তার পর নয়টি ৫০ মিলিলিটার ল্যাব রিঅ্যাক্টরে লোড করেন যা উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপের অধীনে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। তার পর এই সব কিছু মিলিয়েই শুরু হয় রান্না।
১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা-সহ মল এবং বিভিন্ন রেসিপি কী ভাবে রান্না করা হবে তা দেখতে ব্যবহৃত হয়েছিল। মলের সমস্ত ব্যাচ জল দিয়ে রান্না করা হয়েছিল। তবে তাতে অক্সিজেনের অভাব ছিল। এই প্রক্রিয়ার নাম এইচটিসি বা হাইড্রোথার্মাল কার্বোনাইজেশন (HTC)। এই প্রক্রিয়া আসলে হাইড্রোচার প্রস্তুত করে – যা আসলে জল এবং পোড়া বায়োমাস কণা দিয়ে তৈরি একটি বাদামি পদার্থ।
হাইড্রোচার কী ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে?
হাইড্রোচার আসলে কয়লার মতো ব্যবহার করা যেতে পারে। জ্বলন বৈশিষ্ট্য-সহ এই হাইড্রোচার, কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি শিল্প চুল্লিতে পরিণত করা যেতে পারে। সংবাদমাধ্যম PopSci-এর একটি রিপোর্টে এমনই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। শক্তির জন্য গবেষক দলটির প্রথম ব্যবহৃত মল, পোল্ট্রি শিল্পের মলমূত্রের উপর নির্ভর করে। পোল্ট্রি থেকে প্রাপ্ত জঞ্জাল (হাঁস, মুরগি বা টার্কির সম্মিলিত মল) কার্বন এবং নাইট্রোজেন দিয়ে লোড করা হয়, যা শক্তি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। আর এই পদ্ধতিতেই হাইড্রোচার তৈরি করা হয়।
এই হাইড্রোচাররের সঙ্গে অনেকাংশেই কয়লার মিল রয়েছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্টে পাঠানো যেতে পারে। হাইড্রোচার গুঁড়ো আকারের বাইরে যেতে পারে এবং ইটগুলিতে চাপও দেওয়া যেতে পারে যা পরবর্তীতে রান্না এবং গ্রিলিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে দেয়। টার্কি, মুরগি ইত্যাদি পাখির মল ব্যবহার করে গবেষকরা টার্কি রোস্টও করতে চান এবং সেখানে যোগ করে দিতে চান তাঁদের নিজস্ব মলও। গবেষক দলটির অনুমান, জীবাশ্ম জ্বালানির চাপ কমাতে শিল্প উৎপাদনে ব্যবহৃত সমস্ত কয়লার ১০ শতাংশ পোল্ট্রির জঞ্জাল প্রতিস্থাপন করতে পারে।
তার পরও, পাখির মল-মূত্র থেকে শক্তি উৎপাদনের নিরিখে মানুষের মল আরও কার্যকরী হয়ে উঠেছে। আর তার সবথেকে বড় কারণ হল, এটি মানুষের বিভিন্ন খাদ্য, যার বেশির ভাগেই তেল উৎপন্ন হয় এবং দহনের সুযোগও তা তৈরি করে দেয়।
আরও পড়ুন: Disnosaur Skeleton Found In US: ৩০ ফুট লম্বা বিরল প্রজাতির ডাইনোসর কঙ্কালের হদিশ মিলল আমেরিকায়
আরও পড়ুন: Last Solar Eclipse of 2021: বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ কবে? ভারত থেকে কি দেখা যাবে এই গ্রহণ?