এর আগে চাঁদে ঘুরে বেড়িয়েছে নাসার পাঠানো ল্যান্ডার, রোভার এরকম অনেক কিছু। এবার প্রযুক্তির তত্ত্বাবধানে চাঁদে মোটরসাইকেল চালানোর সময় প্রায় এসে গেছে। খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না যখন মানুষ চাঁদের পৃষ্ঠে মোটরসাইকেল চালাতে সক্ষম হবে।
চাকার সংখ্যা কমলে সেই চন্দ্র-যান মোটরসাইকেলের চেহারাও রোভারের মতো বড় হবে না। ফলে, সেই মোটরসাইকেল নিয়ে চাঁদে যাওয়ার কাজটাও সহজ হয়ে যাবে। মহাকাশযানের ওজন কমবে। তার ফলে, জ্বালানি ও শক্তির খরচও প্রচুর পরিমাণে কমে যাবে। মহাকাশ ভ্রমণে জ্বালানির খরচ কমা সবচেয়ে জরুরি। কারণ মহাকাশে জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে ভরে নেওয়ার কোনওরকম সুযোগ আপাতত নেই। বেশি জ্বালানি বা বেশি ওজনের ব্যাটারি সঙ্গে নিয়ে গেলে আখেরে মহাকাশযানের ওজন অনেকটা বেড়ে যায়। অনেক দূরে পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে মহাকাশযানের ওজন সব সময় কম হওয়া প্রয়োজন। কারণ, মহাকাশযানের ওজন বেশি হলে বিপদের আশঙ্কাও অনেক বেশি হয়।
চাঁদের এই মোটরসাইকেলের নকশাটি বানিয়েছেন রুশ প্রযুক্তিবিদ অ্যান্ড্রু ফ্যাবিশেভ্স্কি। পেশাগত দিক দিয়ে তিনি মস্কোর অটোমোটিভ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনার। চাঁদের এই মোটরসাইকেল চলবে বিদ্যুৎশক্তিতে। সেই বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য মোটরসাইকেলের ভিতরেই থাকবে শক্তিশালী ব্যাটারি। প্রাথমিকভাবে এই যান সৌরশক্তিতে চালানোর কথাই ভাবা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে চাঁদের বুকে মোটরসাইকেল চালাতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনেরও কোনও খরচ পড়বে না। শুধু সোলার ব্যাটারি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। আর সঙ্গে থাকবে খুব সামান্য ওজনের কিছু যন্ত্রাংশ।
‘অ্যাপোলো-১৫’, ‘অ্যাপোলো-১৬’ এবং ‘অ্যাপোলো-১৭’, নাসার এই তিনটি চন্দ্রাভিযানে চাঁদের বুকে নামানো হয়েছিল যে তিনটি রোভার। তাদের আকার-আকৃতির কথা মাথায় রেখেই এই মোটরসাইকেল বানানোর কথা মাথায় আসে অ্যান্ড্রুর। তিনি এও জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে কীভাবে তিনি সেই ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। চাঁদের সেই মোটরসাইকেলের বেশ কয়েকটি নকশা এঁকে ফেলেন ফ্যাবিশেভ্স্কি। সেগুলি কার কেমন লাগছে জানতে, বুঝতে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন নকশাগুলি। অনেকের পাশপাশি জার্মানির ড্রেসডেনে মোটরসাইকেলের নকশা তৈরির বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘হুকি কো’-র এক পদস্থ কর্তার চোখে পড়ে সেই নকশাগুলি। তিনিই যোগাযোগ করেন ফ্যাবিশেভ্স্কির সঙ্গে। জানান, নকশাগুলি তাঁর খুবই পছন্দ হয়েছে। তাঁর সংস্থা হুকি কো সেগুলিকে আর শুধুই নকশায় বেঁধে না রেখে বাস্তব রূপ দান করতে চায়।
ফ্যাবিশেভ্স্কি জানিয়েছেন, চাঁদের মোটরসাইকেল যতটা সম্ভব হাল্কা করার চেষ্টা হচ্ছে। দু’টি চাকাই চলবে বিদ্যুৎশক্তিতে। থাকবে ইলেকট্রিক সাসপেনসনও। আর সেই মোটরসাইকেলের রং হবে ধবধবে সাদা। যাতে সূর্যালোকের যতটা সম্ভব প্রতিফলন ঘটানো যায়। তাতে চাঁদের পৃষ্ঠে বহু দূর পথ পাড়ি দিলেও গরম হয়ে পড়বে না এই মোটরসাইকেল। তবে মোটরসাইকেলকে কাঙ্খিত গতিতে চালানোর জন্য কিছুটা মসৃণ রাস্তার দরকার হবে। তাই চাঁদের যে অংশ কম অসমতল সেখানেই চালানো হবে এই মোটরসাইকেল।
আরও পড়ুন: Hubble Space Telescope: ফের প্রযুক্তিগত ত্রুটি এই স্পেস টেলিস্কোপে! রাখা হয়েছে ‘সেফ মোডে’
আরও পড়ুন- Blue Origin: ব্যক্তিগত স্পেস স্টেশন ‘অরবিটাল রিফ’ লঞ্চ করতে চলেছে জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন সংস্থা
আরও পড়ুন- Artemis 1: নাসা পিছিয়ে দিল Artemis- এর অভিযান, ২০২২ সালে হবে প্রথম উড়ান