মাউন্ট এভারেস্ট, যার উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার, হিমালয় পর্বতমালার সবচেয়ে উচ্চতম শৃঙ্গ। তবে এই পৃথিবীতে তার থেকেও উঁচু পর্বতমালা ছিল বলে দাবি করছেন গবেষকরা। পৃথিবীর বিবর্তনে সাহায্য করেছিল সেই পর্বতশ্রেণীগুলি। গবেষকরা এই পর্বতশ্রেণীগুলিকে বলছেন সুপারমাউন্টেন (Supermountains)। পৃথিবীর ইতিহাস জুড়ে এই সুপারমাউন্টেনগুলির গঠন ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। গবেষকরা দাবি করছেন, ৮,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত সুবিশাল এই পর্বতগুলি বর্তমান হিমালয় পর্বতমালার (২,৩০০ কিলোমিটার) দৈর্ঘ্যের প্রায় তিনগুণ ছিল এবং পৃথিবীর ইতিহাসে (Earth’s History) এরা দু’বার গঠিত হয়েছিল – প্রথমটি ২,০০০ থেকে ১,৮০০ মিলিয়ন বছর আগে এবং দ্বিতীয়টি ৬৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়নের মধ্যে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, সুপারমাউন্টেনের এই দুটি উদাহরণ এবং পৃথিবীর বিবর্তনের ইতিহাসের (Evolution In Earth’s History) দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্যে কোনও না কোনও সংযোগ রয়েছে।
জার্নাল আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্স-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। এই গঠনগুলি সনাক্ত করতে গবেষকরা কম লুটেটিয়াম সামগ্রী-সহ জ়িরকনের চিহ্ন ব্যবহার করেছেন, যা আসলে খনিজ এবং পৃথিবীর বিরল উপাদানগুলির সংমিশ্রণ শুধুমাত্র উচ্চ পাহাড়ের শিকড়গুলিতে পাওয়া যায়। তীব্র চাপের মধ্যে সেগুলি সেখানে তৈরি হয়।
সুপারমাউন্টেনের নিয়ে গবেষকরা ঠিক কী বলছেন
এই দুটি ঘটনা ছাড়া অন্য কোনও সুপারমাউন্টেন গঠনের প্রমাণ আজ পর্যন্ত মেলেনি, যা গবেষকদের আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-র পিএইচডি ক্যান্ডিডেট এবং এই গবেষণাপত্রের মূল লেখক জ়িয়ি ঝ়ু এই বিষয়ে বলছেন, “আজকে এই দুটি সুপারমাউন্টেনের মতো কিছুই নেই। এটি কেবল তাদের উচ্চতা নয়। আপনি যদি ২,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ হিমালয়কে তিন বা চার বার কল্পনা করতে পারেন, তবে আপনি এদের স্কেল সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পারবেন।”
প্রথম সুপারমাউন্টেনকে বলা হচ্ছে নুনা সুপারমাউন্টেন, যা ইউক্যারিওটস জীবের সম্ভাব্য চেহারার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে এবং পরবর্তীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্ম দিয়েছে। দ্বিতীয় যেটি ৬৫০ ও ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হয়েছিল, সেটিকে বলা হচ্ছে ট্রান্সগোন্ডাওয়ানান সুপারমাউন্টেন। এটি পৃথিবীর প্রথম বৃহৎ প্রাণীর আবির্ভাব এবং ৪৫ মিলিয়ন বছর পরে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সঙ্গে মিলে যায়, যে সময়কালে জীবাশ্ম রেকর্ডে প্রায় বেশিরভাগ প্রাণী গোষ্ঠীর উপস্থিতি মিলেছিল।
পৃথিবীর বিবর্তনে এদের অবদান কী
গবেষকরা বলেছেন, যখন পর্বতগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তখন তারা সমুদ্রে ফসফরাস এবং লোহার মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, জৈবিক চক্রকে সুপারচার্জ করে এবং বিবর্তনকে আরও জটিলতার দিকে নিয়ে যায়। সুপারমাউন্টেনগুলি বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়েছে এবং শ্বাস নেওয়ার সুবিধা করে দিয়েছে। এই গবেষণাপত্রের মূল লেখক জ়িয়ি ঝ়ু দাবি করছেন, “পৃথিবীর প্রথম দিকের বায়ুমণ্ডলে প্রায় কোনও অক্সিজেন ছিল না। বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেনের মাত্রা কয়েকটি ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হয়, যার মধ্যে দুটি সুপারমাউন্টেনের সঙ্গে একত্রিত হয়।”
গবেষণাপত্রের আর এক লেখক প্রফেসর জোসেন ব্রকস যোগ করে বলছেন, “আশ্চর্যজনক বিষয়টি হল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্বত নির্মাণের সমগ্র রেকর্ডটি পরিষ্কার। দুটি সুবিশাল স্পাইক দেখাচ্ছে এটি, তার একটি প্রাণীর উত্থানের সঙ্গে এবং অপরটি জটিল বড় কোষের উত্থানের সঙ্গে যুক্ত।” গবেষকরা এই সুপারমাউন্টেনগুলির অনুপস্থিতির জন্য ১,৮০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে গ্রহের বিবর্তনের হার হ্রাসকে দায়ী করেছেন। এই সময়কাল বোরিং বিলিয়ন হিসাবে পরিচিত। তাঁদের দাবি, “বিবর্তনের ধীরগতিকে সেই সময়কালে সুপারমাউন্টেনের অনুপস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়, যা সমুদ্রে পুষ্টির সরবরাহ হ্রাস করে।” এই নতুন আবিষ্কারটি আমাদের গ্রহ এবং জীবনের বিবর্তনের মূল অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে বলেই আশা করছেন গবেষকরা।
আরও পড়ুন: ফের সুবিশাল গ্রহাণু ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে! ধরা পড়েছে ছবিতেও, গ্রহাণুর ব্যাস প্রায় ১.৩ কিলোমিটার
আরও পড়ুন: ওমিক্রন রুখতে স্ব-জীবাণুমুক্তকারী বায়োডিগ্রেডেবল মাস্ক তৈরি করেছেন একদল ভারতীয় বিজ্ঞানী
আরও পড়ুন: ইঞ্জেকশন-ভীতি দূর করতে কচ্ছপ আকৃতির বড়ি নিয়ে এলেন ভারতীয় বিজ্ঞানী, কোভিড টিকাকরণের কার্যকর পিল!