Israel-India: ভারতে কেন অস্ত্র কারখানা সরিয়ে আনতে চাইছে ইজরায়েল?
পাকিস্তানের তথাকথিত ‘ট্রাম্প কার্ড’কে কূটনৈতিকভাবে ওভার ট্রাম্প করল ভারত। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে, ইজরায়েল তাদের একাধিক অস্ত্র কারখানা ভারতে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতে বসেই তৈরি হবে সর্বাধুনিক ড্রোন, মিসাইল, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, লাইট মেশিন গান ও অ্যাসল্ট রাইফেল। শুধু উৎপাদন নয়, প্রতিরক্ষা গবেষণায়ও যৌথভাবে কাজ করতে চায় দুই দেশ।
পাকিস্তানের তথাকথিত ‘ট্রাম্প কার্ড’কে কূটনৈতিকভাবে ওভার ট্রাম্প করল ভারত। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে, ইজরায়েল তাদের একাধিক অস্ত্র কারখানা ভারতে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতে বসেই তৈরি হবে সর্বাধুনিক ড্রোন, মিসাইল, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, লাইট মেশিন গান ও অ্যাসল্ট রাইফেল। শুধু উৎপাদন নয়, প্রতিরক্ষা গবেষণায়ও যৌথভাবে কাজ করতে চায় দুই দেশ।
সম্প্রতি ইজরায়েলে বৈঠকে বসে ভারত–ইজরায়েলের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশকুমার সিংহ। সেখানেই অত্যাধুনিক অস্ত্রের যৌথ উৎপাদন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়ে দুই দেশ একমত হয়। এই বিষয়ে মউ (MoU) সই হয়েছে বলেও সূত্রের খবর। পাশাপাশি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ও সাইবার সিকিওরিটি ক্ষেত্রেও যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তান তুরস্ক ও সৌদি আরবের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তুরস্ক পাকিস্তানে ড্রোন কারখানা খুলবে, আর পাকিস্তান আক্রান্ত হলে সৌদি আরব সামরিকভাবে পাশে দাঁড়াবে, এমন দাবিও করা হয়। যদিও সৌদি আরবের বিষয়টি বাস্তবে কতটা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তবে তুরস্কের ড্রোন উৎপাদনের পরিকল্পনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ভূমিকম্পের সময় ভারত ত্রাণ পাঠালেও, আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এর্দোগান একাধিকবার ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং পাকিস্তানের পক্ষে সুর চড়িয়েছেন। সেই তুরস্কের ঘোরতর শত্রু ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের এই প্রতিরক্ষা চুক্তিকে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।
দিল্লির এই কূটনৈতিক চালের একাধিক লাভ রয়েছে।
প্রথমত, ভারত–ইজরায়েল সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
দ্বিতীয়ত, ডিফেন্স সেক্টরে বড়সড় টেকনোলজি ট্রান্সফার হবে।
তৃতীয়ত, ভারত পাবে আধুনিক অস্ত্র, দেশেই উৎপাদনের ফলে খরচ কমবে।
চতুর্থত, ডিফেন্স ইকোনমি আরও শক্তিশালী হবে।
এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, পাকিস্তানের কৌশলগত সমীকরণে বড় ধাক্কা লাগবে, তুরস্কও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দু’বার ভাবতে বাধ্য হবে।
উল্লেখযোগ্য, ভারত–ইজরায়েলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি বারাক মিসাইল ২০১৬ সাল থেকেই দুই দেশ ব্যবহার করছে। সূত্রের খবর, ভারতে যে অস্ত্র কারখানাগুলি গড়ে উঠবে, সেগুলিও মূলত বারাক মডেলের প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করেই চলবে।
এখন প্রশ্ন, কেন ইজরায়েল তাদের প্রতিরক্ষা উৎপাদন কেন্দ্র ভারতে সরাতে চাইছে? কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সূত্র অনুযায়ী, এর পিছনে তিনটি বড় কারণ রয়েছে।
প্রথমত, গত কয়েক বছরে ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারে ইজরায়েলি অস্ত্রের অংশ ৩৫ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। তাই প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতে অস্ত্র বিক্রি বাড়াতে চাইছে ইজরায়েল।
দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার নীতি ছিল, পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েলের শত্রুদেশগুলিকে অত্যাধুনিক অস্ত্র দেওয়া হবে না। কিন্তু সেই নীতি থেকে সরে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে অসন্তুষ্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আমেরিকার উপর নির্ভরতা কমিয়ে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়াতে চাইছেন।
তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে ইরানি মিসাইল হামলার আশঙ্কা থেকে নিজেদের অস্ত্র কারখানাগুলিকে নিরাপদ রাখতে ইজরায়েল উৎপাদনের একটি বড় অংশ বিদেশে, বিশেষ করে ভারতে সরাতে আগ্রহী।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর চলতি মাসেই ভারতে আসার কথা ছিল। তবে সেই সফর পিছিয়ে জানুয়ারিতে নির্ধারিত হয়েছে। তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে এই প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সব খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হতে পারে।

