২০ মিনিট থানায়, বিষ্ণুপুরের ‘কত্তাবাবু’-র সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাত্‍’ সৌমিত্রর!

BJP MP Soumitra Khan: সাংসদ আরও বলেন, "শ্যামবাবু একজন সিনিয়র সিটিজেন। ওঁঁর উপর পুলিশ যেভাবে নির্যাতন করেছে তা অকল্পনীয়। এমনটা মানা যায় না। শ্য়ামাপ্রসাদবাবু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।"

২০ মিনিট থানায়, বিষ্ণুপুরের 'কত্তাবাবু'-র সঙ্গে 'সৌজন্য সাক্ষাত্‍' সৌমিত্রর!
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 25, 2021 | 4:58 PM

বাঁকুড়া: বিষ্ণুপুর টেন্ডার দুর্নীতি কান্ডে গ্রেফতার প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায় ( Shyamaprasad Mukherjee) তথা বিষ্ণুপুরের ‘কত্তাবাবু’-র সঙ্গে থানায় সাক্ষাত্‍ করলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। প্রাক্তন মন্ত্রীর সঙ্গে এই সাক্ষাত্‍ কেবলই ‘সৌজন্য’ নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে তা নিয়ে চলছে জল্পনা। যদিও, বিজেপি সাংসদ স্পষ্টই জানিয়েছেন, রাজনীতির উদ্দেশ্যে নয়, সৌজন্যই মূল অভিপ্রায়।

বুধবার বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “সম্পূর্ণ সৌজন্য সাক্ষাতের অভিপ্রায়ে শ্যামবাবুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। ওঁ খুবই অসুস্থ। ওঁকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তা অন্যায়। আমি যখন তৃণমূল করতাম, তখন ওঁর হাত ধরেই রাজনীতি শিখেছি। তৃণমূলে থাকতে একসঙ্গে অনেকদিন কাজ করেছি। আজ যেসব তৃণমূল নেতারা ওঁর বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাঁরা প্রত্যেকেই শ্যামবাবুর হাতে তৈরি।”

এদিন সাংসদ আরও বলেন, “শ্যামবাবু একজন সিনিয়র সিটিজেন। ওঁঁর উপর পুলিশ যেভাবে নির্যাতন করেছে তা অকল্পনীয়। এমনটা মানা যায় না। দুর্নীতি হয়েছে তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু, শ্য়ামাপ্রসাদবাবু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। গ্রেফতার করার হলে, প্রাক্তন এসডিপিও, জেলাশাসককে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? তাঁদেরও তো গ্রেফতার করা উচিত।” বিজেপি সাংসদের এই মন্তব্যের পাল্টা বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলোক মুখোপাধ্য়ায় বলেন, “কোনও সৌজন্য সাক্ষাতের উদ্দেশ্য সৌমিত্রবাবুর ছিল না। তিনি এসেছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রীর জামিন করাতে। কিন্তু, জামিন করাতে না পেরে সৌজন্য সাক্ষাতের বাহানা দিচ্ছেন বিজেপি সাংসদ।”

গত ৩৪ বছর ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভায় চেয়ারম্যান ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ( Shyamaprasad Mukherjee)। সেসময় একাধিক প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্পগুলিতে কোনও কাজই হয়নি। মহকুমা শাসকের তরফে তদন্ত শুরু হয়। পরে রিপোর্ট জমা দেয় চিফ ভিজিল্যান্স অফিসার। তদন্তে দুর্নীতির একাধিক তথ্য উঠে আসছে। তবে গ্রেফতারি প্রসঙ্গে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেন গ্রেফতার করা হল, এখনও জানি না আমি।”

মঙ্গলবার সকালে প্রাক্তন মন্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়। আর বিকালে পুরসভায় হানা দেয় পুলিশ। বিষ্ণুপুর টেন্ডার দুর্নীতি কাণ্ডের নতুন নতুন কিছু তথ্য হাতে আসার পরই জোরকদমে এই মামলার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালেই প্রায় ১০ কোটি টাকা দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন পুর প্রশাসক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নজরদারি শুরু হয়। তারপর ওইদিন বিকালেই ফের বিষ্ণুপুর পুরসভায় হানা দেন পুলিশ কর্তারা। ইতিমধ্যেই বিষ্ণপুর পুরসভার প্রাক্তন ওভারশেয়ার দিলীপ গড়াইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টেন্ডার দুর্নীতিতে  তাঁর সক্রিয় যোগ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। বুধবার তাঁকে মহকুমা আদালতে তোলা হয়।

প্রায় তিন দশক ধরে মল্লগড় বিষ্ণুপুরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ‘মুকুটহীন সম্রাট’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘কত্তাবাবু’ নামেই পরিচিত। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভা চলত তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শ্য়ামাপ্রসাদ। ২০১১ সালে বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী হলে শ্যামাপ্রসাদের ক্ষমতা আরও বাড়ে। কিছুদিনের জন্য জেলাসভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে রাজ্যের বস্ত্র ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। মন্ত্রী থাকতেই চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নোটিস দিয়েছিল ইডি। তারপরেই ধীরে ধীরে ‘নিজ গড়ে’ ক্ষমতা হারাতে শুরু করেন শ্য়ামাপ্রসাদ। একুশের নির্বাচন আবহে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। বিজেপি-র অন্দরেও দলের একাংশের বিরোধিতার মুখে পড়ে প্রায় এককোণে হয়ে পড়েন প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর তৃণমূলে ফেরার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। গত রবিবারই টেণ্ডার দুর্নীতি কাণ্ডে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিষ্ণুপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরও পড়ুন: ‘দাড়ি কাটব না টুপি খুলব?’, সিপিএমের ‘স্বীকারোক্তি’-তে প্রশ্ন আইএসএফের