Village of Bengal: বছরখানেক আগে এসেছিল মৃত্যু! বিচ্ছিন্ন ‘দ্বীপে’ জীবন কাটাচ্ছে প্রায় পাঁচশো পরিবার, কী হয়েছে বাংলার এই গ্রামে?
Village of Bengal: ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। প্রশাসনের এই উদাসীনতার জন্য শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের গড়িমসিকেই দূষছে বিজেপি। যদিও শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের দাবি, গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা তাঁদের অজানা নয়। টাকা এলেই কাজ হবে।

রানিবাঁধ: গ্রামে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা পাকা হয়েছে, কিন্তু সেই রাস্তার মাঝেই কালভার্ট দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো জীবন কাটাচ্ছে গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার। কালভার্টের দু’প্রান্তে দফায় দফায় কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হয়েছে অনেকদিন আগেই। কিন্তু, রাস্তার মাঝে থাকা একমাত্র কালভার্ট ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকায় আস্ত গ্রামের অবস্থা কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। গ্রামের মানুষ বারংবার দ্বারস্থ হয়েছেন প্রশাসনের। কিন্তু, কালভার্টের হাল ফেরেনি। অগত্যা নিত্যদিন স্কুল কলেজে যাতায়াত হোক বা অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সব ক্ষেত্রেই বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের কুল্যাম গ্রামের বাসিন্দাদের ভরসা জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে ভাঙাচোরা মাটির ঘুরপথ।
রানিবাঁধ ব্লকের কুল্যাম গ্রামের বাঁধপাড়া, তেঁতুলডাঙ্গা, নীমপাড়া, শবরপাড়া-সহ পাঁচ থেকে ছ’টি পাড়ায় সবমিলিয়ে বাস পাঁচ শতাধিক পরিবারের। শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য এমনকি দৈনন্দিন বাজার হাট করতেও গ্রামের মানুষকে ছুটতে হয় স্থানীয় রুদড়া বাজারে। একসময় গ্রামের রাস্তা কাঁচা থাকলেও কুল্যাম পাল পাড়া ও শবর পাড়ার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া জোড়খালের উপর কালভার্ট দিয়ে স্বচ্ছন্দে গ্রামের মানুষ যাতায়াত করত। বছর ছয়েক আগে গ্রাম সড়ক যোজনার বরাদ্দে দফায় দফায় গ্রামে যাওয়ার রাস্তা কংক্রিটের তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু, ততদিনে মুখ থুবড়ে পড়েছে কালভার্টটি।
বর্তমানে কালভার্টের একাংশ কার্যত অপর অংশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নিত্যদিন জোড় খাল পারাপার করে স্কুল কলেজে যাতায়াত এমনকি অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এখন গ্রামবাসীদের কাছে বিভীষিকার আরেক নাম। বছরের অন্যান্য সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ ভেঙে পড়া কালভার্টের উপর দিয়ে যাতায়াতের দুঃসাহস দেখালেও বর্ষায় কালভার্টের আশপাশ মাড়ানোর সাহস দেখান না প্রায় কেউই। বছর খানেক আগে ভাঙাচোরা এই কালভার্ট দিয়ে জোড়খাল পারাপার করতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে একজনের। বছরভর লেগেই থাকে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। অগত্যা ঝুঁকিপূর্ণ ওই কালভার্টের উপর দিয়ে যাতায়াত এড়াতে অনেকেই পাকা রাস্তা ছেড়ে ঘুরপথে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ভাঙাচোরা কাঁচা রাস্তায় যাতায়াত করেন। স্থানীয়দের দাবি, বিষয়টি তাঁরা বারংবার স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ সর্বস্তরে জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিছুই হয়নি।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। প্রশাসনের এই উদাসীনতার জন্য শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের গড়িমসিকেই দূষছে বিজেপি। যদিও শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের দাবি, গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা তাঁদের অজানা নয়। ওই কালভার্ট নতুন করে তৈরির জন্য পরিকল্পনাও করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে। কিন্তু কবে শুরু হবে সেই কাজ? কবেই বা ফের স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারবেন মানুষ সেদিকেই তাকিয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রাম কুল্যাম। শেষ পর্যন্ত হাল কবে ফেরে সেটাই দেখার।
