AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘বিরুদ্ধস্বর হলেই …’, সাসপেন্ড হওয়া ৩ পড়ুয়াকে সরাসরি বরখাস্ত! প্রশ্নের মুখে বিশ্বভারতীর উপাচার্য

Visva Bharati University: বরখাস্তের নোটিস প্রাপ্ত ওই তিন পড়ুয়া সোমনাথ সৌ, ফাল্গুনী পান ও রূপা চক্রবর্তীকে আগেই নিলম্বিত করেছিল বিশ্বভারতী। এ বার সরাসরি তিন বছরের জন্য বরখাস্ত করায় প্রশ্নের মুখে উপাচার্য বিদ্য়ুত্‍ চক্রবর্তীর ভূমিকাও।

'বিরুদ্ধস্বর হলেই ...', সাসপেন্ড হওয়া ৩ পড়ুয়াকে সরাসরি বরখাস্ত! প্রশ্নের মুখে বিশ্বভারতীর উপাচার্য
ফের বিতর্কে বিশ্বভারতী, ফাইল চিত্র
| Edited By: | Updated on: Aug 23, 2021 | 11:48 PM
Share

বীরভূম:  ফের বিতর্কের কেন্দ্রে গুরুদেবের শিক্ষাঙ্গন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (VBU) সাসপেন্ড হওয়া ৩ পড়ুয়া ফাল্গুনী পান, সোমনাথ সৌ এবং রূপা চক্রবর্তীকে ৩বছরের জন্য বরখাস্ত করে দিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি,পদার্থবিজ্ঞানের দুই অধ্যাপক পীযুষকান্তি ঘোষ ও অরণি চক্রবর্তীকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাসপেন্ড করল বিশ্বভারতী।

সোমবার বিশ্বভারতীর (VBU) তরফে ওই তিন পড়ুয়াকে নোটিস দিয়ে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত তদন্ত কমিটির পেশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী ওই তিন পড়ুয়াকে শৃঙ্খলাভঙ্গ, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধাচারণ-সহ একাধিক বিষয়ে বিরুদ্ধ মত পোষণ করার অভিযোগে সরাসরি তিন বছরের জন্য বরখাস্ত করা হল। যদি এর প্রেক্ষিতে পড়ুয়াদের পাল্টা কোনও বক্তব্য থেকে থাকে তবে আগামী ২৭ অগস্টের মধ্যে তা লিখিত কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে।

বরখাস্তের নোটিস প্রাপ্ত ওই তিন পড়ুয়া সোমনাথ সৌ, ফাল্গুনী পান ও রূপা চক্রবর্তীকে আগেই নিলম্বিত করেছিল বিশ্বভারতী। এ বার সরাসরি তিন বছরের জন্য বরখাস্ত করায় প্রশ্নের মুখে উপাচার্য বিদ্য়ুত্‍ চক্রবর্তীর ভূমিকাও। বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, উপাচার্যের বিরুদ্ধে বারবার ‘বিরুদ্ধস্বর’ হওয়ার জন্যই ‘শাস্তিস্বরূপ’ উপাচার্য এমন পদক্ষেপ করেছেন। শুধু, ছাত্ররাই নন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘রুষ্মার’ কবলে দুই অধ্যাপকও। নিলম্বনের চিঠি পাওয়া অধ্যাপক অরণি চক্রবর্তীর কথায়, “এটা হওয়ারই ছিল। ভাল হয়েছে এক দিক থেকে। কিছু মানুষের শিরদাঁড়া বিক্রি করার থেকে যে আলাদা হতে পেরেছি, এতেই আমি গর্বিত।” অন্যদিকে, বরখাস্তের নোটিসপ্রাপ্ত পড়ুয়া সোমনাথ সৌ-এর অভিযোগ, উপাচার্যের বিরুদ্ধাচারণ করার জন্যই তাঁদের  এই ‘শাস্তি’ পেতে হচ্ছে। তবে, এর বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামবেন তাঁরা। প্রয়োজনে আইনের পথ ধরতেও পিছপা হবেন না তাঁরা।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্বভারতীর এক পড়ুয়ার কথায়, “উপাচার্য এখানে স্বৈরতন্ত্র চালাচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কথা বললেই হয় জুটছে সাসপেনশন, নয়তো শোকজের নোটিস। বাদ যাননি অধ্যাপকেরাও। বিরুদ্ধস্বর হলেই হয় বদলি নয় বাতিলের খাতায়। আমরা অধ্যাপক ও পড়ুয়াদের পাশে রয়েছি। প্রয়োজনে আইনের পথ অনুসরণ করা হবে।”

উল্লেখ্য, অর্থনীতির অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন সোমনাথ-ফাল্গুনীরা। ফলস্বরূপ, অভিযুক্তদের তিনমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু তিনমাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের ক্লাস করতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের তরফে ‘ভুয়ো মেইল’ করে সাসপেনশন (suspension) আরও তিনমাস বাড়ানো হয় বলে অভিযোগ করেন পড়ুয়ারা। সেইসময় থেকেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। পরে,  ইউজিসির কাছেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। ইউজিসির তরফ থেকে পাল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে নোটিস দিয়ে সাসপেনশনের কারণ জানতে চাওয়া হয়। তারপরেই তড়িঘড়ি বেশ কিছু সিদ্ধান্তে বদল কর্তৃপক্ষ বদল আনলেও ফাল্গুনীদের সাসপেনশন রদ হয়নি।

গুরুদেবের শিক্ষাঙ্গনে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে, একাধিকবার বিভিন্ন সময়ে বিতর্কে জড়িয়েছে রবি ঠাকুরের ‘সাধের পাঠশালা’। সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী শিবিরের দলীয় কর্মসূচি পালনকে ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন খোদ উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তী। কিন্তু, ববরাবরেই মতোই বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এছাড়াও, পড়ুয়াদের ‘মাওবাদী’ তকমা দেওয়া থেকে শুরু করে অধ্য়াপকদের একের পর এক শোকজ নোটিস পাঠানো বা সাসপেন্ড করা, কখনও বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী বা আধিকারিকদের বদলি করা একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে হাইকোর্ট পর্যন্ত বিতর্কের জল গড়িয়েছে। চিঠি গিয়েছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য নরেন্দ্র মোদীর দরবারেও। কিন্তু, বিতর্কের রেশ মুছে যায়নি রবিভূম থেকে। বরং দিনের পর দিন তা বেড়েই ক্রমবর্ধমান।

বিশ্বভারতীর উপাচার্যের এই ‘স্বৈরতন্ত্রের’ প্রতিবাদে পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের পাশে দাঁড়িয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, জেএনইউয়েপর মতো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রাজ্যশ্বর সিনহা জানিয়েছেন, উপাচার্য যা করছেন তা অন্যায়। কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনও সিদ্ধান্ত এভাবে উপযুক্ত তথ্য় প্রমাণ ছাড়া চাপিয়ে দিতে পারে না। ‘স্বৈরতন্ত্রের নামান্তর’ বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থাকে তুলনা করেছেন অধ্যাপক।  আরও পড়ুন: রাখিবন্ধনে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে তৃণমূলের শোভাযাত্রা, নেপথ্যে অনুব্রত?