রাখিবন্ধনে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে তৃণমূলের শোভাযাত্রা, নেপথ্যে অনুব্রত?

Visva Bharati University: রাখিবন্ধনের এই শোভাযাত্রা ঘিরেই নতুন করে তুঙ্গে বিতর্ক। রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি ঘটনায় প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও আশ্রমিকদের একাংশ।

রাখিবন্ধনে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে তৃণমূলের শোভাযাত্রা, নেপথ্যে অনুব্রত?
তৃণমূলের শোভাযাত্রা, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 22, 2021 | 2:39 PM

বীরভূম: ‘রাজনীতি-ভারতী’। কবিগুরুর মুক্ত বিশ্ব এখন শাসক-বিরোধী রাজনীতির মুক্তাঞ্চল! বিজেপির পর এ বার বিশ্বভারতীতে দলীয় কর্মসূচি পালন করল তৃণমূল।  রবিবার রাখিবন্ধন উপলক্ষে রতনপল্লী থেকে শুরু হয়ে তৃণমূলের শোভাযাত্রা উপাসনা গৃহ হয়ে পৌঁছয় শ্যামবাটিতে। শোভাযাত্রার শুরুতেই ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহার ছবি সম্বলিত ব্যানার। কিছুদিন  আগেই অনুব্রত হুমকি দিয়ে বলেছিলেন বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) ভেতরেই অনুষ্ঠান করে দেখাবেন। সেই কথাই সত্যি হল। রাজনীতি-মুক্ত হল না বিশ্বকবির ‘সাধের পাঠশালা’।

রবিবার, রাখিবন্ধনের এই শোভাযাত্রা ঘিরেই নতুন করে তুঙ্গে বিতর্ক। রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি ঘটনায় প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও আশ্রমিকদের একাংশ। ঘটনায়, বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) প্রাক্তন আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “বিশ্বভারতীতে কোনওদিন এমন রাজনীতি দেখিনি। এখনই নতুন নতুন এসব দেখছি। এখন, তৃণমূল করছে। এরপর যে দল আসবে তারা করবে!” আক্ষেপের সুরে আরও এক প্রাক্তনী বলেন, “বিশ্বভারতীতে  কোনওদিন রাজনীতির সরাসরি অনুপ্রবেশ হতে দেখিনি। এখন যা হচ্ছে তা নিয়ম বহির্ভূত, অন্যায়। রবীন্দ্রনাথ কি এমন বিশ্বভারতী চেয়েছিলেন!”

বিতর্কিত শোভাযাত্রার অন্যতম ব্যবস্থাপক তৃণমূল নেতা চন্দন মণ্ডলের কথায়, ” বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্য়ুত্‍ চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতির আখড়া বানিয়ে দিয়েছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজনৈতিক পতাকা নিয়ে কোনও আন্দোলন করিনি। এখানে কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁর দলের অনুগামীদের নিয়ে এসে অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন। সেখানে, আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল এবং চন্দ্রনাথ সিংহের মুখকে সামনে রেখে কোভিড বিধি মেনে মানবতার বার্তা দিয়েছি।”

তবে এই শোভাযাত্রার নেপথ্যে কি অনুব্রত? কিছুদিন আগেই তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, বিশ্বভারতীর ভেতরে দলের অনুষ্ঠান করে দেখাবেন। তাহলে কি সেই কথার জেরেই এই শোভাযাত্রা? উঠছে প্রশ্ন। যদিও, এ প্রসঙ্গে বীরভূম জেলা সভাপতি বলেন, “বিশ্বভারতীর নয়, পিডব্লুডির রাস্তায় শোভাযাত্রা করা হয়েছে। বিশ্বভারতীর ভেতরে যখন মন্ত্রী তাঁর দলের লোক নিয়ে অনুষ্ঠান করেন তখন! আর আমরা তো মানবতার বার্তা দিয়েছি। রবীন্দ্রনাথ তো রাখিবন্ধন নামের একটা বই লিখেছে। পাগল ভিসিকে আগে এসব শেখানো দরকার। আমরা বিজেপির মতো বলে বসি না যে রবীন্দ্রনাথ কালো ছিলেন বলে তাঁকে কেউ কোলে নেয়নি।” তৃণমূল নেতার এই মন্তব্যের পাল্টা বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, “অনুব্রত মণ্ডল দলের বিধায়ক বা সাংসদ নন। এইভাবে দলের একজন সভাপতি হয়ে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে রাজনীতি টেনে আনছেন এটা কাম্য নয়। সুভাষ সরকার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন, তাঁকে সম্মান জানাতে দলের কিছু সদস্য গিয়েছেন। তাতে সমস্যা কোথায়? তার অর্থ এই নয় যে কোনও রাজনৈতিক দল ভেতরে কোনও শোভাযাত্রা করবে।”

উল্লেখ্য, গত ১৮ অগস্ট বিশ্বভারতীতে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। বিশ্বভারতীর কাজে বিজেপিকে টেনে আনা হচ্ছে এমন অভিযোগ ওঠে উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। তখনই অনুব্রত পাল্টা হুঙ্কার দেন, বিশ্বভারতীর ভেতরেই অনুষ্ঠান করা হবে। তিনি বলেছিলেন, “কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী  কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেই পারেন। কিন্তু, কোনও বিশেষ দলের হয়ে কর্মসূচি পালন করা যায় না। তাহলে যে কেউ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। আমিও বিশ্বভারতীর ভেতরে অনুষ্ঠান করব। শিলচর লাইব্রেরির সামনেই করব। দেখি আমায় কী করে আটকায়! বিশ্বভারতীর পাগল ভিসির সামনে অনুষ্ঠান হবে।” তাত্‍পর্যপূর্ণভাবে এরপরেই, রাখিবন্ধন উত্‍সবকে কেন্দ্র করে বিশ্বভারতীতে  শোভাযাত্রার আয়োজন করে তৃণমূল। আরও পড়ুন: ‘ওঁর বউ ইনজেকশন দিয়ে শান্ত করায়’, ‘কেষ্টর’ কুমন্তব্য, দিলীপও দিলেন পাল্টা