
কোচবিহার: একজন প্রাক্তন, অন্যজন বর্তমান। কোচবিহারে তৃণমূলের অন্দরে এই দুইকে ঘিরে শোরগোল তুঙ্গে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের তিন দিন আগে প্রকাশ্য়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তাও আবার উত্তরবঙ্গের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে। এই বিতর্কের চক্রব্যূহ দু’জনকে ঘিরে। একজন প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। অন্যজন বর্তমান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। আর এদের মাঝে তৃতীয় শক্তি কোচবিহারের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক ওরফে হিপ্পি।
এখন আর মন্ত্রীত্ব নেই। তবে কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সম্প্রতি তাঁর নামে পাশে জুড়ে গিয়েছে ‘খুনের অভিযোগ’। ঘটনার সূত্রপাত গত অগস্ট মাসে। যুব তৃণমূল নেতা অমর রায়ের খুনের ঘটনায় দলের একাংশের দিকে আঙুল তুলেছিলেন মৃতের মা-বাবা। অমরের মা কুন্তলা রায় ডাউয়াগুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান। বাবা মহিম রায় পেশায় ব্যবসায়ী। ইতিমধ্য়েই এই ঘটনায় ৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে মৃতের মায়ের দাবি, মূল অভিযুক্তরা অধরা। তাঁর অভিযোগ, মূল অভিযুক্তদের মধ্যে কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অন্যতম।
অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। দলের নেতারাই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রীর কথায়, ‘চেয়ারম্যান পদ পাওয়ার থেকেই নানা জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে। কখনও বিক্ষোভ, কখনও সাদা কাগজে কাউন্সিলরদের চাপ দিয়ে সই করিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনছে। এখন আবার খুনের মামলাতেও ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এই সবের মূলে দু’জন রয়েছেন। একজন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। অন্যজন, জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক।’
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘আমার বিরুদ্ধে একটা চক্রান্ত চলছে। আমার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, কেরিয়ার শেষ করে দিতে চাইছে, মানুষের কাছে আমাকে ছোট করতে চায় ওরা। আমি পুরসভার চেয়ারম্য়ান পদে বসার পর প্রাক্তন সাংসদ পার্থ প্রতীম রায়ের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা তো মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর সেই দূরত্ব মিটিয়ে নিয়ে যে দিন থেকে দলকে আরও সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি, ঠিক সেদিন থেকেই আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত আরও তীব্র হয়েছে।’
দোরগোড়ায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এমন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাপে ফেলবে না তো ঘাসফুল শিবিরকে? বরাবরই উত্তরবঙ্গে রাশ ভারী বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে আগের তুলনায় অনেকটাই ভাল ফল করেছিল তৃণমূল। সামনেই আবার পরীক্ষা। তার আগে এমন ‘অস্বস্তি’ ঠিক নয় বলেই দাবি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। এমন সময় এই পরিস্থিতি ঠিক নয়। মুখ্যমন্ত্রীকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইছে। জেলা সভাপতি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে পদত্যাগ করতে বলছে। মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। সুযোগ পেলে কথা বলব। না পেলে চিঠি লিখব। আর এই সব কিছু না মিটলে এর একটা প্রভাব নির্বাচনেও পড়বে।’ রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে মন্ত্রী উদয়ন গুহ এবং জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকের প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। অবশ্য এই ঘটনায় পালে হাওয়া পেয়েছে বিজেপি। জেলা সভাপতি অভিজিৎ বর্মন জানান, ‘তৃণমূলের কোন্দলের জেরে এসব হচ্ছে। আজ যারা তৃণমূল করে তাঁরা কেউ তৃণমূলের শুরুর দিকে ছিলেন না।’