
শিলিগুড়ি: ভোটের আগেই মন্দির রাজনীতিকে কেন্দ্র করে নতুন করে সরগরম শিলিগুড়ি। শিল্পের জন্যে রাখা সাতশো কোটির সরকারি জমি ৯৯ বছরের লিজে মাত্র ১ টাকায় ট্রাস্টকে বিলি! শিলিগুড়িতে সবচেয়ে বড় মহাকাল মন্দির নিয়ে সরব বামেরা। সুর চড়াচ্ছেন সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। সিপিএম আবার পাশে পাচ্ছে বিজেপিকেও। বিরোধীদের আভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে এসজেডি’র হাতে থাকা শিল্পের জন্য রক্ষিত জমিতে রাজ্যের সবচেয়ে বড় মহাকাল মন্দির গড়ে তোলা হচ্ছে। এসজেডিএ’র হাতে থাকা জমি বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীকে পাইয়ে দিতে চেষ্টা করছে একটি চক্র। এই অভিযোগ সামনে আসতেই নতুন করে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গে।
কী বলছে বামেরা?
বাম আমলে দীর্ঘদিন এসজেডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন অশোক ভট্টাচার্য। অশোকের অভিযোগ, ওখানে আইটি পার্ক তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বামেরা ক্ষমতা হারানোর পর সেই পার্ক আর গড়ে ওঠেনি। বামেরা যে বিদেশি সংস্থাকে এনেছিল তাঁকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় মমতার জমানায়। সূত্রের খবর, এবার উজানু মৌজায় প্রায় বিশালাকার এলাকা মাত্র ১ টাকায় একটি ট্রাস্টকে দিচ্ছে এসজেডিএ।
আগে উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে এই মহাকাল মন্দির তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঘোষণার সঙ্গে তাল মিলিয়েই কয়েকদিন আগে জমি বরাদ্দ করে দেয় সরকার। সদ্য নবান্ন থেকে এ কথা জানান রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি এই মন্দির তৈরি হলে গোটা উত্তরবঙ্গেই ধর্মী পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
সূত্রপাত কোথা থেকে?
মাটিগাড়া থানা এলাকায় ২৫.১৫ একরের ওই যে জমি এতদিন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের (এসজেডিএ) হাতে ছিল। ওই পুরো এলাকার মধ্যে বর্তমানে ১৭.৪১ একর জমি পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাই এখন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর হয়ে এসজেডিএ’র কাছে আসবে। তারপর তা পর্যটন দফতরের কাছে আসবে। মন্দির তৈরির জন্যই রাজ্যের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে জেলার পুলিশ, প্রশাসন, শিল্পোদ্যোগী, সমাজসেবী-সহ একাধিক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ট্রাস্ট তৈরি হবে বলেও জানা যাচ্ছে। তারাই পুরো বিষয়টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখবেন।
কিন্তু যে জমির মুল্য প্রায় সাতশো কোটি টাকা, শিল্পের সেই জমিতে ১ টাকার লিজে কেন মন্দির তৈরি হবে? শিল্প ও কর্মসংস্থান দরকার না মন্দির দরকার? প্রশ্ন তুলছেন প্রবীণ বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। কটাক্ষের সুরেই তিনি বলছেন, শিল্প হলে কর্মসংস্থান হলে আইটি পার্কে কাজ পেত তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু সেসব ভুলে ভোটের আগে সরকার মন্দির বানাচ্ছে সরকার। বামেরা সুর চড়াচ্ছে হিডকোর বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, একাধিক টাউনশিপ গঠনের নামে এসজেডিএ’র জমি প্রথমে হিডকোকে দেওয়া হচ্ছে। তারপর তা হিডকো মোটা টাকায় বিভিন্ন শিল্প সংস্থাকে দিচ্ছে। কিন্তু এই কাজ সরাসরি এসজেডিএ-র মাধ্যমে হলে তারা আর্থিকভাবে আরও উন্নতির সুযোগ পেত। কিন্তু এখন সরকার যা করছে তা আদতে এসজেডিএ-র ঝাঁপ বন্ধ করার চেষ্টা বলেই মত তাঁদের।
কী বলছে বিজেপি?
অন্যদিকে শিল্পের জমিতে মন্দির কেন তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিজেপিও। বিজেপির তরফে নান্টু পাল বলেন আমি মন্দিরকে স্বাগত জানাব। কিন্তু শিল্পের জমিতে মন্দির কেন? আমাদের জেলায় la পাহাড়ে একটি মহাকাল মন্দির রয়েছে। তাহলে পাহাড় ও সমতলে পৃথক মন্দিরের কী প্রয়োজন? বামেদের মতো তাঁদেরও সাফ কথা, সামান্য অর্থে সরকারি জমি শিল্পপতিদের পাইয়ে দিতে সচেষ্ট রয়েছে এসজেডিএ।