শিলিগুড়ি: রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকালই দুই দেশের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন এক ভারতীয় পড়ুয়া। খবর দেশে আসার পরই রীতিমত ভয়ে-আতঙ্কে রয়েছেন আটকে পড়া পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। এই বোমাগুলির মধ্যেই কিয়েভ ছাড়ল সমস্ত ভারতীয়।
হাড়হিম করা মাইনাস তাপমাত্রা। তার মধ্যেই সীমান্তে ছুটছেন পড়ুয়ারা। শেষপর্যন্ত ফিরতে পারবেন ত সকলে? শিলিগুড়ির বাসিন্দা প্রীতম, রিয়ারা গতকাল রাতেই পারি দিয়েছেন সীমান্তে। প্রায় ১২০০ কিমি পথ। রাস্তায় মুহর্মুহ গোলাবর্ষণ। এসব পেরিয়ে এগোচ্ছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। অন্যদিকে শিলিগুড়িতে অধীর অপেক্ষায় রাত জাগছেন আর প্রহর গুনছেন ওদের পরিজনেরা।
শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ায় বাড়ি প্রীতম মালাকারের। গত ডিসেম্বরে প্রীতম ইউক্রেনের পোল্টাবায় গিয়ে ডাক্তারিতে ভর্তি হন। সেখানে গত কদিন সেভাবে যুদ্ধ হয়নি। নিরাপদেই বাড়িতে ছিল প্রীতম। কিন্তু ভারতীয় এক ছাত্রের মৃত্যুর খবর পেয়েই প্রীতম সিদ্ধান্ত নেয় এবার যেতেই হবে। পোল্টাবা থেকে সীমান্ত প্রায় বারশো কিলোমিটার পথ। গত রাতেই সীমান্তের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে সে। প্রায় তিরিশ ঘণ্টা সড়কপথে এগিয়ে আগামীকাল সকালে সীমান্তে পৌঁছনোর কথা। খাওয়ার নেই, রাস্তায় কার্ফু, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ম অধিকাংশ এলাকায়। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়িতে চোখের জল ফেলছেন প্রীতমের মা মৌসুমি মালাকার।
তিনি বলেন, “শিবরাত্রি গেল। রাতভর ঘুমাই নি। শুধুই ভগবানকে ডাকছি। আমার ছেলেকে অক্ষত শরীরে ফিরিয়ে দিক। আর কিছুই চাই না।” এরপরেই কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, “ছেলেকে শক্ত রাখতে নিজে শক্ত থাকার চেষ্টা করেও পারছি না। রাস্তায় বোমাবর্ষণ হচ্ছে। অক্ষত শরীরে ফিরতে পারবে ? সীমান্তে অত্যাচারের মুখে পড়তে হবে নাতো?”
প্রিতমের বাবা পিযুশ মালাকার বলেন, “ছেলেকে ডাক্তার হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলাম। এখন আর কিছু চাইছি না। এখন চাই আমার সন্তান অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসুক। ওর কাছে টাকাও ফুরিয়ে গেছে। টাকা পাঠাতেও পারছি না।” সীমান্তের দিকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিচ্ছে প্রীতম। রাস্তায় কি হবে সেই ভয়ে কার্যত গুটিয়ে আছি। যোগাযোগও করা যাচ্ছে না প্রতি মুহুর্তে।
আরও পড়ুন: Child Death: ‘হাসপাতালে যেতেই বাচ্চাটাকে ওরা ইঞ্জেকসন দিল, তারপর ঝিমিয়ে পড়ল, আর জাগল না…’