AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Durga Puja 2021: মহম্মদের হাতে তিল তিল করে গড়ে ওঠে দুর্গা প্রতিমা, এ বিদ্যে শিখেছিলেন ‘ঈশ্বরের’ কাছে

সামাজিক বয়কটের কারণে মা নূরজাহান বিবির মৃত্যুর পর তাঁকে কবর দিতে হয় বাড়ির পাশের লাগোয়া জমিতে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন তিনি। সেখানেও ছিল বাধা। কিন্তু পাশে পান শ্বশুরমশাইকে। তাই নিজের বাড়িতে নয়, তাঁর বিয়ে হয় শ্বশুরবাড়িতে।

Durga Puja 2021: মহম্মদের হাতে তিল তিল করে গড়ে ওঠে দুর্গা প্রতিমা, এ বিদ্যে শিখেছিলেন 'ঈশ্বরের' কাছে
| Edited By: | Updated on: Oct 08, 2021 | 7:32 PM
Share

পূর্ব মেদিনীপুর: বয়স আর কত, মাত্র ৫ কী ৭ বছর, শিশুর খেয়ালে একদিন কাদা মাটি নিয়ে খেলতে খেলতেই বানিয়ে ফেলা খেলনা প্রতিমা। আবার কখনও স্কুল যাওয়া আসার পথে স্থানীয় পুকুরে ভাসান দেওয়া প্রতিমার খড়ের ভূর বা মেড় দেখতে পেলেই তা তুলে বাড়িতে নিয়ে এসে খেলতে খেলতেই তাতে কাদামাটির প্রলেপ দেওয়া। তিনি নূর মহম্মদ চৌধুরী। নেহাত ছেলেবেলার ভালবাসার খেলাই আজ জীবিকা হয়ে উঠেছে নূরের। পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া মহকুমার আন্দুলিয়ার অঞ্চলের বছর পঞ্চান্নর নূর মহম্মদ পেশায় মৃৎশিল্পী। ছেলের ভালবাসায় কখনও বাধা দেননি বাবা শেখ জাভেদ।

স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনীদের নিয়ে সুখী এবং ভরা সংসার নূর মহম্মদের। এলাকায় শিল্পী হিসেবেও যথেষ্ট নামডাক তাঁর। হলদিয়ার বড় বড় মণ্ডপে শোভা পায় তাঁর গড়া দুর্গাপ্রতিমা। কিন্তু শুরুর দিনগুলি এতটা সহজ ছিল না। বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। স্কুলে পড়ার সময় একা একা শুরু করলেও তিনি মূর্তি গড়ার প্রথাগত প্রশিক্ষণ পান ঈশ্বর রাধাকৃষ্ণ সামন্তের কাছে। তারপর শুরু করেন নিজের ব্যবসা। সঙ্গে সঙ্গে রোষানলে পড়েন স্থানীয় কিছু ধর্মভীরু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের। ফতোয়া জারি হয় মুসলিম হয়ে গড়া যাবে না হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি। কিন্তু হার মানেননি নূর, বরং যত বাধা আসতে থাকে ততই তিনি ডুবে যেতে থাকেন মূর্তি গড়ার কাজে।

একটু একটু করে নাম হতে শুরু করে তাঁর। পাশাপাশি চলতে থাকে নিজের সম্প্রদায়ের মানুষের বাধার সঙ্গে লড়াই। এক সময় মুসলিম সমাজের বয়কটের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে। এমনকী সামাজিক বয়কটের কারণে মা নূরজাহান বিবির মৃত্যুর পর তাঁকে কবর দিতে হয় বাড়ির পাশের লাগোয়া জমিতে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন তিনি। সেখানেও ছিল বাধা। কিন্তু পাশে পান শ্বশুরমশাইকে। তাই নিজের বাড়িতে নয়, তাঁর বিয়ে হয় শ্বশুরবাড়িতে।

এখন মূর্তি গড়ার কাজে পাশে পেয়েছেন নিজের স্ত্রী এবং ছেলে রাজুকেও। নূরবাবুর কথায়, তিনি সারা বছর ধরে মূর্তি গড়লেও পুজোর সময়েই তার ব্যস্ততা প্রবল হয়ে ওঠে। তাঁর তৈরি মূর্তি যায় জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে। হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি গড়লেও নিজের ধর্মকে কখনও অবহেলা করেননি নূর মহম্মদ। নিয়ম করে নামাজ পড়েন তিনি। কাজের চাপে রমজানের রোজা রাখতে না পারলেও নিয়মিত মসজিদে যান তিনি। নূর মহম্মদের স্বপ্ন মানুষ সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে ভালবাসুক। আর সেই স্বপ্নপূরণে নিজের একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন হিন্দু বাড়িতে।

তাঁর মোবাইলের রিংটোন ‘আমার সাধ না মিটিল আশা না ফুরিল সকলই ফুরায়ে যায় মা’। সমাজে বেড়ে চলা বিভেদের আক্ষেপেই হয়ত মায়ের কাছে তাঁর এমন অভিযোগ। তবু স্বপ্ন দেখতে দেখতেই মূর্তি গড়ে চলেন রাধাকৃষ্ণ সামন্তের মনোযোগী ছাত্র। হয়ত তাঁর এই মূর্তি গড়ার সাধনায় তুষ্ট হয়েই একদিন স্বপ্নপূরণের বর দেবেন অশুভ দলনী দেবী দুর্গা।

আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে মনের শান্তি, আত্মবিশ্বাস ফেরাতে এই দেবীর আরাধনা করার নিয়ম!