
চুঁচুড়া: দু’জনেই রাজ্যের শাসকদলের জনপ্রতিনিধি। একজন বিধায়ক। অন্যজন সাংসদ। একটি স্কুলে স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরিকে কেন্দ্র করে দু’জনের দ্বন্দ্ব সামনে এল। চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত অসিত মজুমদারকে নিশানা করলেন হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলেরই বিধায়ককে কটাক্ষ করে সাংসদ বললেন, “ওঁর বয়স হয়েছে তো। মাথা কাজ করছে না।” সাংসদের কথার উপর তিনি কিছু বলতে চান না বলে জানালেন প্রবীণ বিধায়ক। তবে সাংসদের মতো তিনিও বিষয়টি যেখানে জানানোর সেখানে জানাবেন বলে স্পষ্ট করে দিলেন।
বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া বালিকা বাণীমন্দির স্কুলে হঠাৎ পরিদর্শনে যান হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকা ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান। রচনার সাংসদ তহবিল থেকে ওই স্কুলে মেয়েদের জন্য স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি হচ্ছে। এই নিয়ে চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদারের রোষের মুখে পড়েন প্রধান শিক্ষিকা। কয়েকদিন আগে স্কুলে গিয়ে বিধায়ক অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষিকা সাংসদকে আরও জানান, কার অনুমতি নিয়ে স্মার্ট ক্লাসরুম হচ্ছে, তা জানতে চান বিধায়ক। কারা বরাত পেয়েছে, কেন বিধায়ককে জানানো হয়নি, তা নিয়েও বিধায়ক দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ।
প্রধান শিক্ষিকার কাছ থেকে এই কথা শোনার পর রচনা বলেন, “আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। আশ্চর্যজনক ঘটনা। স্মার্ট ক্লাসরুম প্রয়োজন ছিল। বাণীমন্দির স্কুল চেয়েছিল। আমি দিয়েছি। আরও অনেক স্কুলে দেব। তৃণমূল বিধায়ক শিক্ষিকাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। শিক্ষিকাদের একটা সম্মান আছে। এইরকম মন্তব্য কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়।”
এরপরই তিনি বলেন, “আগামী দিনেও কাজ করব। স্কুলের উন্নতি করব। স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করব। কার কত দম আছে দেখব। এই ঘটনা যাঁকে জানাবার, তাঁকে জানাব। আগামী দিনে যাতে না হয়, সেটা দেখব। উনি বোধহয় চাইছেন না স্মার্ট ক্লাসরুম হোক। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। আমার সাতজন বিধায়কের একজনই হয়ত দলের বদনাম করছেন। ৬ জন দলের কথা ভাবেন।” প্রবীণ বিধায়ককে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “ওঁর বয়স হয়েছে। মাথা কাজ করছে না।”
সাংসদের কাছে বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেও সংবাদমাধ্য়মের কাছে মুখ খুলতে চাইলেন না স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তিনি বলেন, “যা বলার সাংসদকে জানিয়েছি।”
সাংসদের মন্তব্য নিয়ে বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, “উনি আমার দলের সাংসদ। উনি যেটা বলতে পারেন আমি সেটা পারি না। আমি সাংসদের কথার উপর কোনও কথা বলবো না। যা বলার দলকে বলব।” প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ নিয়ে বিধায়ক বলেন, “প্রধান শিক্ষিকা থানায় লিখিত অভিযোগ করুন। প্রধান শিক্ষিকা কিছু অভিযোগ করলে, যা বলার তাঁকে বলব। আমি ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। পড়ুয়া, অভিভাবকদের দেখার দায়িত্ব আমার।”
এর আগেও অসিত ও রচনার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে চুঁচুড়ায়। রচনার কর্মসূচিতে অসিতকে দেখা যায়নি। আবার বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রভবনে এক অনুষ্ঠানে অসিত থাকলেও রচনাকে দেখা যায়নি। যদিও তিনি চুঁচুড়াতেই ছিলেন। শাসকদলের বিধায়ক ও সাংসদের লড়াই বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের বিড়ম্বনা বাড়াতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।