West Bengal HS Result 2023: ‘অর্ধনারীশ্বর কী করতে পারে সমাজ দেখল’, সপ্তম হয়ে সদ্য রূপান্তরকামী শরণ্যার প্রত্যয়ী স্বর

West Bengal HS Result 2023: এ জয় তাঁর, তাঁর পরিবারের। আর সবচেয়ে বড় জয় সমাজের, বলছেন শরণ্যাই। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সৌরভ ও ঘরকন্যা সামলানো দেবস্মিতার প্রথম সন্তান শরণ্য। ছোট থেকে আর পাঁচটা ছেলের মতোই চলছিল শরণ্যের জীবন।

West Bengal HS Result 2023: 'অর্ধনারীশ্বর কী করতে পারে সমাজ দেখল', সপ্তম হয়ে সদ্য রূপান্তরকামী শরণ্যার প্রত্যয়ী স্বর
উচ্চ মাধ্যমিকে সপ্তম শরণ্যা ঘোষ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 25, 2023 | 10:09 AM

হুগলি: ‘অর্ধনারীশ্বর কী, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। আমরা তো সকলেই দেখতে পাচ্ছি। সমাজও দেখবে, তবে আর ভাবনা কী?’ কথাটা সদ্য রূপান্তরকামী শরণ্যা ঘোষের। যিনি উচ্চমাধ্যমিকে এবারে সপ্তম স্থানাধিকারী। ছোট থেকেই তিনি নিজের শরীরের পরিবর্তনটা বুঝতে পেরেছিলেন, বুঝেছিলেন ছেলের শরীরে জন্ম নিলেও তিনি মন মানসিকতার দিক থেকে একজন নারীই। বড় হওয়ার সঙ্গে তার বিকাশও ঘটে। একাদশ শ্রেণিতে রূপান্তরিত হন তিনি। শরণ্য থেকে শরণ্যার হওয়ার উত্তরণ। আর হুগলির জনাইয়ের রূপান্তরকামী শরণ্যাই এবার উচ্চ মাধ্যমিকে সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন। TV9 বাংলার মুখোমুখি হয়ে রূপান্তরকামী হয়ে ওঠার কাহিনি জানালেন উচ্চমাধ্যমিকে ৪৯০ নম্বর পাওয়া শরণ্য়া।

এ জয় তাঁর, তাঁর পরিবারের। আর সবচেয়ে বড় জয় সমাজের, বলছেন শরণ্যাই। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সৌরভ ও ঘরকন্যা সামলানো দেবস্মিতার প্রথম সন্তান শরণ্য। ছোট থেকে আর পাঁচটা ছেলের মতোই চলছিল শরণ্যের জীবন। হুগলির জনাই ট্রেনিং স্কুলের খাতাতেও তাঁর নাম ছিল শরণ্য। কিন্তু ষষ্ঠ সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই শরণ্য বুঝেছিলেন তাঁর শরীরী ভাষা। আসলে পুরুষের শরীরে জন্ম হলেও তিনি যে একজন নারী! সেকথা অবশ্য প্রথমেই তিনি তাঁর বাবা-মাকে জানান।

নিজের দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেছেন শরণ্যা

নাহ, সমাজের আর পাঁচটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো শরণ্যার বাড়িতে আকাশ ভেঙে পড়েনি কারোর মাথায়। শরণ্যার আবেগকেই প্রাধান্য দিয়েছিল শিক্ষক পরিবার। প্রমাণ দিয়েছিলেন, একজন শিক্ষক, সমাজ গড়ার কারিগরের ঠিক কী ভূমিকা পালন করতে হয়। এরপর শরণ্যের শুরু হয় শরণ্যা হয়ে ওঠার লড়াই।

একাদশ শ্রেণিতে রূপান্তর। তবে তার মাঝে পড়াশোনা চলেছে সমান গতিতে। মন উড়েছে আকাশে, আর মননও। রূপান্তরকামী হিসাবে আকাশের রামধনু ছোঁয়ার সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপ শরণ্যা পেরোলেন সাফল্যের সঙ্গে। এবার তাঁর আগামী দিনের লড়াই। শরণ্যার মুখে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-শিক্ষক, এহেন তথাকথিত কোনও পেশার কোথা শোনা গেল না এদিনও। শরণ্যা বললেন, “আমাদের মতো এমন তো অনেকেই রয়েছে। যারা ছোটো যারা নিজের মনের কথা বলতে পারে না, তাদের বোঝাতে হবে। আত্মপ্রকাশ ঘটাতে সাহস তো লাগেই।” সেই বীজটাই ওঁদের মতো সকলের মনে বপন করতে চান শরণ্যা।

ছেলে থেকে মেয়ে হয়ে ওঠার লড়াইটা উচ্চ মাধ্যমিকে সপ্তম হওয়ার লড়াইয়ের থেকে অনেক অনেক বেশি কঠিন। তা স্বীকার করছেন শরণ্যা নিজেও। কিন্তু সে পথ তিনি সহজেই উজিয়েছেন। পাশে পেয়েছেন শিক্ষক-অভিভাবক, স্কুলের বন্ধুদের।

আজ মেয়ের সাফল্যে স্ত্রীকেই সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিতে চাইছেন শরণ্যার বাবা। স্কুল শিক্ষক সৌরভ বললেন, “আমরা কোনওদিন ওর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করিনি। ওকে স্বাধীনচেতা বানিয়েছি। যা হতে চায়, সেটা ওর ওপরেই ছেড়েছি। তবে এটুকু বলব, আমিও আর পাঁচ জন বাবার মতো ব্যস্তই থাকতাম, যা করেছে ওর মা-ই।” জীবনটা মেয়ে-ছেলেকে সামলাতেই কেটে যাওয়া আর পাঁচ জন মায়ের মতোই শরণ্যার মা দেবস্মিতা বললেন, “আমাকে সামনাসামনি কেউ কখনই কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পাননি। হয়ত বা রাস্তা দিয়ে হাঁটলে ট্যারা চোখে দেখেছেন কেউ কেউ। একজন একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোর ছেলে না মেয়ে। আমি বলেছিলাম, দুটোই।” কথাগুলো বলার সময়ে অদ্ভুত একটা দীপ্তি ঝলমল করছিল শরণ্যার মায়ের চোখের তারায়।

শরণ্যার বাবার কথাই ঠিক, দেবস্মিতার সেই দীপ্তিই দেখা গিয়েছে শরণ্যার চোখেও। সেই একই আত্মবিশ্বাস, আর লড়াকু মন, হয়ত মায়ের থেকেই পাওয়া তাঁর। শরণ্যা বললেন, “এখন অনেকটা পথ চলা বাকি। সমাজকে সচেতন করতে চাই। আমরা তো দেখতেই পাচ্ছি অর্ধনারীশ্বর কী, তাহলে আর ভাবনা কী!”