কলকাতা থেকে দুবাইয়ে সম্পত্তি বানিয়েছে রাজীব! মমতার আক্রমণের ‘যোগ্য জবাব’ দিতে তৈরি হচ্ছেন বিজেপি নেতা

"একটু ফরসা-টরসা, লম্বা-টম্বা, কী করে বুঝব তার মধ্যে এত প্যাঁচ লুকিয়ে আছে! অন্যকে বলবার আগে কলকাতায় কত সম্পত্তি করেছে, দুবাই থেকে কলকাতা কত সম্পত্তি, যাও মানুষকে জবাব দাও।''

কলকাতা থেকে দুবাইয়ে সম্পত্তি বানিয়েছে রাজীব! মমতার আক্রমণের 'যোগ্য জবাব' দিতে তৈরি হচ্ছেন বিজেপি নেতা
অলংকরণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Apr 08, 2021 | 8:51 PM

হাওড়া: জানুয়ারি মাসের শেষে রাজীব বন্দ্যোপধ্যায়ের (Rajib Banerjee) বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগের দিনটা মনে পড়ে? তৃণমূলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় রাজীবের হাতে ছিল তৃণমূল নেত্রীর ছবি! শীতের সেই পড়ন্ত দুপুরে ধরা গলায় বলেছিলেন, মমতা তাঁর কাছে ‘মাদার ফিগার’। যে দলেই যান মমতার ছবি তাঁর সঙ্গে আজীবন থাকবে। কিন্তু মার্চের এই বৃহস্পতিবার সেই সম্পর্কে বদলে গেল এক লহমায়। রাজীবের ‘মাদার ফিগার’ ডোমজুড়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে দুর্নীতি নিয়ে তীব্র আক্রমণ করে জানালেন টিকিট দিয়ে ভুল করেছিলেন। পাল্টা রাজীবও কম গেলেন না, হুঁশিয়ারি দিলেন হাটে হাঁড়ি ভাঙার!

বৃহস্পতিবার ডোমজুড়ের সভা থেকে মমতা (Mamata Banerjee) বলেন, ‘গদ্দারকে টিকিট দিয়েছিলাম। এর জন্য মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি।’ এখানেই থামেননি তৃণমূল নেত্রী। বলেন, “ডোমজুড়ের মানুষের কাছে আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই কারণে যে, একটা গদ্দার, মিরজাফরকে আপনাদের এখানে নমিনেশন দিয়েছিলাম। সেই গদ্দার, মিরজাফর জনগনের টাকা মেরে দিয়ে… আপনারা জানেন আমায় কী বলেছিল?” এর পর মমতার আরও বিস্ফোরক অভিযোগ, সেচমন্ত্রী থাকাকালীন রাজীবের বিরুদ্ধে কিছু ‘কমপ্লেন’ পান তিনি। তার পর তাঁকে সেচ দফতর থেকে সরিয়ে বন দফতরের দায়িত্ব দেন। কিন্তু তার পর রাজীব মমতার কাছে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট চান বলে অভিযোগ তাঁর। মমতার কটাক্ষ, “মানে ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর দিলে ভালো করে টাকাটা ঝাড়া যাবে আরকি। কমিশনটা বেশি করে খাবে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী আপনাদের কাছে। আমিও বুঝতে পারিনি।”

তৃণমূল ছাড়ার সময় রাজীব ব্যানার্জি অভিযোগ করেছিলেন দলের এক শ্রেণির নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে। তিনি এও দাবি করেছিলেন, তাঁকে বিনা নোটিসে সেচ দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দলের একজন সদস্য এবং রাজ্যের মন্ত্রী হয়েও সেই খবর তিনি পেয়েছিলেন টিভি দেখে। এদিকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফ দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে দেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে বন দফতরের কর্মী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যদিও এতদিন মমতা নিজের মুখে রাজীবকে নিয়ে তেমন কোনও মন্তব্য করেননি। বরং তিনি আক্রমণ শানিয়েছেন নন্দীগ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ডোমজুড়ের বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ ও ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁর গড়ে দাঁড়িয়েই।

মমতার কথায়, “একটু ফরসা-টরসা, লম্বা-টম্বা, কী করে বুঝব তার মধ্যে এত প্যাঁচ লুকিয়ে আছে! অন্যকে বলবার আগে কলকাতায় কত সম্পত্তি করেছে, দুবাই থেকে কলকাতা কত সম্পত্তি, যাও মানুষকে জবাব দাও।”

এদিকে মমতার এই অতর্কিত আক্রমণে কার্যত আশ্চর্য রাজীব। তাঁর প্রতিক্রিয়া ‘একটা নির্বাচনে জেতার জন্য এতটা নীচে নামতে পারেন উনি!’ যদিও তাঁর পাল্টা কটাক্ষ, এতদিন তাহলে কেন তাঁকে মন্ত্রী পদে রেখেছিলেন উনি? কেন আগে দু’বার যখন ইস্তফা দিতে গিয়েছিলেন তাঁকে আটকানো হয়েছিল? ডোমজুড়ের বিজেপি প্রার্থীর কথায়, “সত্যিটা হল আমি যখন সেচ দফতরে বিনয় মিশ্রকে পাঠিয়েছিল কাটমানি নেওয়ার জন্য। আমিই বলেছিলাম স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করি। এ জন্যই আমাকে সরে যেতে হয়েছিল।”

আরও পড়ুন: হাড়োয়ায় বিজেপি কর্মীর ওপর ‘হামলা, গাড়ি ভাঙচুর’

একইসঙ্গে রাজীবের চ্যালেঞ্জ, তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় জমা দেওয়া তথ্য়েরক বাইরে যদি কোনও সম্পত্তির হদিশ দিতে পারে কেউ, তবে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিলেন, আগামী দিনে এর যোগ্য জবাব দেবেন।