Dhupguri Leopard: সাতসকালে বাড়ির দরজা খুলতেই আঁতকে উঠলেন গৃহকর্তা! এ কী দেখলেন, বিশ্বাস হচ্ছিল না নিজের চোখকেও
Dhupguri: ধূপগুড়ি শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বসাকপাড়া এলাকায় শুক্রবার সকালে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়ায়।
ধূপগুড়ি: সাত সকালে দুয়ারে এসে হাজির চিতাবাঘ। এমন ঘটনায় চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হল ধূপগুড়িবাসীর। শুক্রবার সকাল থেকে তুলকালাম কাণ্ড। পরিস্থিতি এমন হয় যে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় শেষমেশ অবশ্য কাবু করা সম্ভব হয় চিতাবাঘটিকে। ঘুমপাড়ানি গুলি করে উদ্ধার করা হয় তাকে। তবে ধরা পড়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে এলাকার লোকজনকে। জাম গাছের মগডালে চুপচাপ ঘাপটি মেরে বসে মজা দেখেছে বাঘ বাবাজি! ধূপগুড়ি শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বসাকপাড়া এলাকায় শুক্রবার সকালে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়ায়। ঘন জনবসতিপূর্ণ এই এলাকারই এক বাসিন্দা সুকুমার বসাক চিতাবাঘটিকে প্রথম দেখতে পান। তিনি পড়ি কী মরি করে ছুটে গিয়ে সকলকে জানান। প্রথম দিকে কেউ অবশ্য বিষয়টি বিশ্বাস করেননি। পরে পথে নেমে গাছের ডালে চিতাবাঘটিকে দেখে শুরু হয় হইচই। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ধূপগুড়ি থানার পুলিশ। এদিকে শহরে চিতাবাঘ ঢোকার খবর পেয়ে রবাহুতের মতো সব ছুটে আসে ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। মুহূর্তে কয়েক শো মানুষের ভিড় জমে যায়।
এরপরই খবর দেওয়া হয় ধূপগুড়ি পুরসভায়। খবর যায় বনদফতরে। খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে একে একে আসতে থাকে বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণ স্কোয়াড, রামসাই রেঞ্জ, মোরাঘাট রেঞ্জ, নাথুয়া রেঞ্জ, ডায়না রেঞ্জ এবং দলগাঁও রেঞ্জের বনকর্মীরা। ঘটনাস্থলে আসেন জলপাইগুড়ি অনারারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী, জলদাপাড়ার ডিএফও দীপক এম, জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগের এডিএফও জন্মেঞ্জয় পাল, বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগের রেঞ্জার শুভাশিস রায়, মোরাঘাট রেঞ্জের এসিএফ বিপাশা পারুল, রেঞ্জার রাজকুমার পাল-সহ অন্যান্য বনাধিকারিকরা।
বাঘটি যেহেতু গাছের মগডালে আশ্রয় নিয়েছিল তাই সেই গাছের নিচে বাঘ ধরার জাল ফেলে বাঘটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করার সিদ্ধান্ত নেয় বনদফতর। কারণ, ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হলে বাঘটি নীচে জালের মধ্যে পড়ে এবং সহজেই তাকে ধরা যায়। যদিও স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায় তিনটি ঘুমপাড়ানি গুলি করা হলেও সে গুলি চিতাবাঘের গায়ে লাগেনি। গাছের ডাল, পাতার আড়ালে নিজেকে পটুত্বের সঙ্গেই লুকিয়ে রেখেছিল সে।
এরপরই দমকলে খবর দেওয়া হয়। দমকল কর্মীরা জল দিয়ে চিতাবাঘটিকে গাছের মগডাল থেকে কিছুটা নীচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এরপর ড্রোন ক্যামেরা উড়িয়ে চিতাটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টার পর চিতাবাঘ মগডাল থেকে কিছুটা নীচে নেমে আসতেই বনদফতরের কর্মীরা ঘুমপাড়ানি গুলি করে চিতাবাঘটিকে কাবু করে। এদিকে চিতাবাঘ দেখতে মানুষের এতই ভিড় ছিল যে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে নাকাল হতে হয় পুলিশকে। মৃদু লাঠিচার্জেরও অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি নামানো হয় র্যাফ।
বাঘটিকে উদ্ধারের পর নিয়ে যাওয়া হয় মাদারিহাটে। সেখানেই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। এরপর জলদাপাড়া জঙ্গলে ছাড়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার বসাক বলেন, “ঘুম থেকে উঠেই দেখি বাড়ির দরজার সামনে চিতাবাঘ। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে যখন ভাল করে নজর করি, দেখি বিরাট আকারের চিতাবাঘ জাম গাছে উঠেছে। দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। প্রচুর মানুষ সকাল থেকে ভিড় জমান বাঘ দেখতে। এই প্রথম শহরের প্রাণকেন্দ্রে চিতাবাঘ ঢুকে পড়ল। ফলে আমরা ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।”
অন্যদিকে একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, গভীর রাতে চিতাবাঘটি শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এলাকার বাসিন্দা হেলেন দে বলেন, “ঘরের পিছনে জাম গাছের উপরে চিতাবাঘ উঠেছে ভাবতেই পারছি না। যখন লোকের মুখে শুনতে পেলাম কাছে গিয়ে দেখতে পাই বিরাট আকারের চিতাবাঘ। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” এলাকার বহু বাড়িতে এদিন হাঁড়ি চড়েনি। সকলেই ‘বাঘবন্দির খেলা’ নিয়েই মেতে ছিলেন সকলে।
জলদাপাড়ার ডিএফও দীপক এম এদিন বলেন, পাশের কোনও জঙ্গল থেকে চিতাবাঘটি লোকালয়ে চলে এসেছিল। বনদফতরের কাছে খবর আসে। এরপর পাঁচটি রেঞ্জের বনকর্মীরা সেই চিতাবাঘকে উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালায়। পরে ঘুমপাড়ানি গুলি করে সেটিকে কাবু করা হয় এবং জালের সাহায্যে পেঁচিয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চিতাবাঘটি সুস্থ আছে।
আরও পড়ুন: Mala Roy on Russia-Ukraine: ভারতীয়দের নিরাপদে ফিরিয়ে আনুন, বিদেশমন্ত্রীকে চিঠি মালা রায়ের