AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Bizarre Marriage: বট পাকুড়ের বিয়ে, টোপর মাথায় দিয়ে! ৫ হাজার লোক খেল উপহার দিয়ে

Jalpaiguri: বিয়ে উপলক্ষে শুরু হয় বাজার করা। কেনা হয় টোপর, সিঁদুর সহ বিয়ের অন্যান্য সামগ্রী। যৌতুক হিসেবে কেনা হয় সোনার দুল ও আংটি। কয়েকদিন ধরে নাওয়া খাওয়া ভুলে বাজার করতে ব্যস্ত ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা।

Bizarre Marriage: বট পাকুড়ের বিয়ে, টোপর মাথায় দিয়ে! ৫ হাজার লোক খেল উপহার দিয়ে
গাছের বিয়ে নিয়ে জলপাইগুড়িতে উৎসাহ চরমে
| Edited By: | Updated on: Jun 10, 2022 | 8:20 PM
Share

জলপাইগুড়ি: অভিনব বিয়ের সাক্ষী থাকল জলপাইগুড়ির সেবাগ্রাম। রীতি মেনেই হল বিয়ের অনুষ্ঠান। এসেছিল বরপক্ষ, কন্যাদান হয়েছে। যৌতুক হিসাবে সোনার গয়নাও দেওয়া হয়েছে। পাত পেড়ে খেয়ে গিয়েছেন প্রায় ৫ হাজার জন। কিন্ত এই বিয়ে মানুষের নয়। এমনকি গরু বা কুকুর বা হনুমানেরও নয়। এমনই ভাবে জলপাইগুড়িতে বিয়ে হয়েছে দুটি গাছের। একটি পাকুড় গাছ ও অপরটি বট গাছ। গাছের বিয়ে নিয়েই উৎসাহ চরমে উঠেছে ওই এলাকায়।

জলপাইগুড়ির সেবাগ্রাম এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সন্তোষ শীল। এলাকায় সুন্দর ছায়া পাবেন বলে বছর ২৫ আগে শখ করে রাস্তার ধারে একটি বট গাছ লাগিয়েছিলেন। নিয়ম করে সেই গাছে জল সার দিয়ে লালন পালন করতেন। এর পর সেই গাছের মধ্যেই জন্ম নেয় একটি পাকুড় গাছ। গাছের পরিচর্যা দেখে এলাকাবাসীরা বলতেন, “এটাই তোর মেয়ে।” দীর্ঘ ২৫ বছর পর সেই গাছ যথেষ্ট বড় হয়েছে। তাঁর ছায়ায় স্বস্তি পান এলাকাবাসী। এই গাছ নিয়ে সন্তোষবাবুকে এলাকার লোকেরা বলতেন, “মেয়ে তো বড় হয়ে গিয়েছে। মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও।” এই কথা তিনি শুনতেন আর ভাবতেন কী করা যায়।

বিষয়টি নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিজের ‘মেয়ের’ বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যান সন্তোষ। কিন্তু একটা বিয়ের খরচ তো কম নয়। বিয়ের সরঞ্জাম, লোক খাওয়ানো- সব মিলিয়ে প্রচুর খরচ। এছাড়াও লাগবে পাত্রপক্ষ। কিন্তু অত টাকা খরচের সামর্থ্য ছিল না তাঁর। তাই স্থানীয় ক্লাব ভক্ত সংঘের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের কাছে বিয়ের ব্যাপারে সাহায্য চান তিনি। বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ দেখান গ্রামবাসীরাও। বিয়ের খবর চাউর হতেই ঝন্টু ঘোষ নামের এক গ্রামবাসী পাত্র পক্ষ হতে রাজি হয়ে যান। এর পর ডাক পড়ে পুরোহিতের। পুরোহিত মানিক ব্যানার্জি ৯ জুন বিয়ের দিন ঠিক করেন। বিয়ের জন্য গ্রামবাসীদের থেকে টাকা তোলাও শুরু করেন ক্লাবের সদস্যরা। নতুন ধরনের বিয়ের কথা শুনে অনেকেই বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত।

বিয়ে উপলক্ষে শুরু হয় বাজার করা। কেনা হয় টোপর, সিঁদুর সহ বিয়ের অন্যান্য সামগ্রী। যৌতুক হিসেবে কেনা হয় সোনার দুল ও আংটি। কয়েকদিন ধরে নাওয়া খাওয়া ভুলে বাজার করতে ব্যস্ত ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় সমস্ত আচার অনুষ্ঠান। হলুদে তেল সিঁদুর গাছে মাখিয়ে বটগাছকে স্নান করাবার পর পুরোহিত বিয়ের কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যা নামতেই আসে বরযাত্রী। ব্যান্ড বাজিয়ে তাঁদের বরণ করে শুরু হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। পরে কন্যাদানের মাধ্যমে শেষ হয় বিয়ে। বিয়ে উপলক্ষ্যে  ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, ভাজা, পটলের ডালনা, পনিরের তরকারি, চাটনি, মিষ্টি ইত্যাদি। ভোজ খেয়েছেন প্রায় ৫ হাজার জন।

মেয়ের (বট) বিয়ে নিয়ে সন্তোষ শীল বলেছেন, “বিয়েতে যা যা নিয়ম করতে হয় সব করা হয়। রাতে বরযাত্রী এলো। কন্যাদান করলাম। আমি সবার কাছে সাহায্যের আবেদন রেখেছিলাম। সবাই পাশে দাড়িয়েছে। আজ আমার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। কান্নায় আমার চোখ ভেঙে জল আসছে।” পাত্রের বাবা ঝন্টু ঘোষ জানান, ছেলের বিয়ে দিয়ে খুব আনন্দিত তিনি। পুরোহিত মানিক ব্যানার্জি বলেন, “আমি বহু বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু গাছের বিয়ে কোনও দিন দিইনি। খুব ভালো লাগছে।”

বট পাকুড়ের বিয়ে নিয়ে জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাহুত বলেছেন, “এই বিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা। দূষণ কমানোর ক্ষমতা সব ধরনের গাছের চেয়ে এই গাছের বেশি। একটা পূর্ণ বয়স্ক বট গাছ সব চাইতে বেশি অক্সিজেন দিয়ে থাকে। এই গাছ প্রচুর পশু পাখির থাকার জায়গা করে দেয়। এক কথায় এই গাছ আমাদের প্রকৃতি কে যা রিটার্ন করে তা সব কিছুর ঊর্ধ্বে।”