নন্দীগ্রামে মমতার নামে শুরু দেওয়াল লিখন, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সুব্রত বক্সী
নন্দীগ্রামে জোর প্রচার শুরু করে দিল তৃণমূল
পূর্ব মেদিনীপুর: এবারের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ও বিজেপির প্রেস্টিজ ফাইট নন্দীগ্রাম। কারণ এই আসন থেকেই লড়তে চলেছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই অনুযায়ী নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনকে পাখির চোখ করে ঝাঁপিয়ে পড়ল ঘাসফুল ব্রিগেড। বুধবার থেকে শুরু হয়ে গেল দলনেত্রীর নামে দেওয়াল লিখনের কাজ। এদিন নন্দীগ্রামের হাজরাকাটা, সামসাবাদ, রেয়াপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে পাঁচিল, দেওয়ালে দেওয়ালে শুরু হল মমতার (Mamata Banerjee) মুখ ও ঘাসফুলের ছবি আঁকা।
গত ১৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রামের সভা থেকে নিজের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দেন মমতা। ‘১৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রায় চারমাস আগে এই নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনেই প্রথম প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে নন্দীগ্রামের সেই প্রাক্তন বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এখন বিজেপিতে। শুধু তাই নয়, মমতার নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তাঁকে পঞ্চাশ হাজার ভোটে হারানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন শুভেন্দু। ফলে গোটা রাজ্যের চোখই এখন নন্দীগ্রামের দিকে। এদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের বাসিন্দার মন বুঝতে পয়লা ফেব্রুয়ারি আসার কথা ছিল রাজ্য়ের পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। পরিকল্পনা ছিল বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিস্থিতি বিচার করে দলনেত্রীকে রিপোর্ট দেবেন তিনি। কিন্তু কোনও কারণে সেই কর্মসূচি বাতিল হয়ে যায়। তবে সুব্রতর জায়গায় নন্দীগ্রামে পাঠানো হয় আর এক সুব্রতকে। তিনি তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা মমতার অনুগত সৈনিক সুব্রত বক্সি।
বুধবার যেভাবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রদের নিয়ে নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সুব্রত বক্সি, ওয়াকিবহাল মহল বলছে অতীতে এই বিধানসভা আসন নিয়ে এতটা তৎপর হতে দেখা যায়নি ঘাসফুল শিবিরকে। সৌমেন মহাপাত্র, সেখ সুফিয়ান, আবু তাহেরদের সঙ্গে সুব্রত বক্সির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নন্দীগ্রাম সহ পূর্ব মেদিনীপুরের ভোট প্রচারের রণকৌশল নির্ধারণ হয়। আর সেই বৈঠক শেষ হয়েছে কি হয়নি, তার মধ্যেই নন্দীগ্রাম জুড়ে মমতার (Mamata Banerjee) নামে দেওয়াল লিখন শুরু করে দেন তৃণমূল কর্মীরা।
আরও পড়ুন: বাংলায় রেল কী পেল! নির্মলার বাজেট থেকে কত টাকা বরাদ্দ হল?
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী তথা অধুনা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হুঁশিয়ারি ছিল তাঁর মতো নন্দীগ্রামের মাটি আর কেউ চেনেন না। ২০১৬ সালে তিনি নন্দীগ্রাম থেকে জিতেছিলেন ৮২ হাজারের বেশি ভোটে। কিন্তু গত ১৯ ডিসেম্বর অমিত শাহের হাত ধরে তৃণমূলের সঙ্গে তিনি একুশ বছরের সম্পর্কের ইতি টানেন। তাঁর পর নন্দীগ্রামই হয়ে উঠেছে যুদ্ধক্ষেত্র। আরও পরিষ্কার করে বললে মমতা বনাম শুভেন্দুর প্রেস্টিজ ফাইটের জায়গা। নন্দীগ্রামের সভা থেকে মমতা (Mamata Banerjee) বলেছিলেন, ভোটের সময় নন্দীগ্রামে তিনি বেশি সময় দিতে পারবেন না। কারণ, ২৯৪ আসনে তিনিই তৃণমূল প্রার্থী। তবে ভোট মিটলে নন্দীগ্রামের উন্নয়নের কাজ তিনি বুঝে নেবেন বলে মন্তব্য করেছিলেন মমতা। এদিকে বিজেপির টিকিটে নন্দীগ্রাম থেকেই ফের শুভেন্দু প্রার্থী পবেন কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে প্রার্থী যেই হোন বিজেপিই জয়ী হবে বলে আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গিয়েছে শুবেন্দুর গলায়। এই আবহে নন্দীগ্রামে শুরু হল তৃণমূলের দেওয়াল লিখনের কাজ।