নদিয়া: অজানা জ্বরে (Unknown Fever) পর্যুদস্ত গোটা উত্তরবঙ্গ। জ্বরের (Fever) মানচিত্রে নতুন সংযোজন নদিয়া। জেলা জুড়ে জ্বরে আক্রান্ত প্রায় শতাধিক। কিন্তু, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এই জ্বর মরসুমি। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। প্রশাসনের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে এই জ্বরে কেবল শিশুরা নয়, আক্রান্ত মধ্যবয়সীরাও। তাহলে কী করে এতটা নিশ্চিন্ত হচ্ছে জেলা প্রশাসন, প্রশ্ন তুলছেন চিকিত্সকেরাই।
নদিয়া জেলা জুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা একাধিক। সকলেরই উপসর্গ কম-বেশি একই। জ্বর, বুকে ব্যথা, খিচুঁনি। অন্য়ান্য় জেলার মতো শয্য়া-সঙ্কট নদিয়াতে দেখা না গেলেও আক্রান্তের সংখ্য়া বিশেষভাবে কপালে ভাঁজ ফেলেছে চিকিত্সকদের। ইতিমধ্যেই, কল্যাণী জে এন এম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮৪ জন। কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ৫০জন। তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল ও রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে যথাক্রমে ৫জন ও ৭ জন আক্রান্ত। যদিও, হাসপাতালগুলির তরফে জানা গিয়েছে, যতদিন যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা তত বাড়ছে। অভিযোগ, জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না।
পাল্টা, স্বাস্থ্য দফতরের যুক্তি, যেসকল শিশুরা জ্বরে (fever) আক্রান্ত, তাদের সকলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু, কোনও অস্বাভাবিক তথ্য় মেলেনি। সাধারণ মরশুমি জ্বর বলেই উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এমনকী, প্রশাসন সূত্রে খবর, এই জ্বরের প্রকোপে কেবল শিশুরা নয়, আক্রান্ত হচ্ছেন মাঝবয়সী থেকে বৃদ্ধরাও। অনাক্রম্যতা কম থাকলেই শরীরে বাসা বাঁধছে এই ভাইরাস। সেখান থেকেই এই সংক্রমণ। এই জ্বর নিয়ে আপাতভাবে চিন্তার বিশেষ কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
যদিও, স্বাস্থ্য় দফতরের এই ‘গা-ছাড়া’ মনোভাব মানতে নারাজ চিকিত্সকেরা। তাঁদের দাবি, রাজ্য জুড়ে যখন একের পর এক জেলায় এইভাবে সংক্রমণ ক্রমবর্ধমান, তখন কী করে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ না করে দায় এড়াতে পারে? চিকিত্সকদের একাংশের আরও দাবি, যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, সেক্ষেত্রে হাসপাতালেকর পরিকাঠামোতে বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, বাড়ানো উচিত শয্যা সংখ্যাও। কিন্তু, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া তা সম্ভব নয়।
অজানা জ্বরে ধুঁকছে বঙ্গ। ইতিমধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ শিশুর। রাজ্য জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। শুক্রবারই উত্তরবঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য ভবনের চার সদস্যের বিশেষ প্রতিনিধি দল। সূত্রের খবর, চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন, চিকিত্সক পল্লব ভট্টাচার্য, চিকিত্সক বিকাশ মণ্ডল, মাইক্রোবায়োলজিস্ট অধ্যাপক রাজা রায়, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দীপ্তকান্তি মুখোপাধ্যায়, পেডিয়াট্রিস্ট ড. মিহির সরকার।
জ্বরের প্রাদুর্ভাব নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বছরের এ সময় প্রতিবারই শিশুদের মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। এ বছর সংখ্যাটা বেশি। তার মানে এই নয় যে কিছুই ঘটেনি। রোগ যখন হচ্ছে। শিশুদের আইসিইউয়ে ভর্তি যখন করতে হচ্ছে তখন কিছু একটা কারণও নিশ্চিত রয়েছে।” পাশাপাশি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কী কী পদক্ষেপ করতে চলেছে তাও স্পষ্ট করেন স্বাস্থ্য় অধিকর্তা।
রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ খুঁজতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভাইরাস প্যানেলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, উপসর্গের নিরিখে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করছে। দ্রুত তা জেলাস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভাইরাল প্যানেলে পরীক্ষা খরচসাপেক্ষ। তাই কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, স্ক্রাব টাইফাস ধরা না পড়লে ভাইরাস প্যানেল করতে বলা হয়েছে। পিএম কেয়ার্সে পাওয়া ভেন্টিলেটরকে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেন মাস্কে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাড়তি HFNO দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Murshidabad: অজানা জ্বরে আক্রান্ত ১৫০, মেডিক্যাল কলেজে মেঝেতেও শুয়ে শিশুরা!
আরও পড়ুন: Jalpaiguri: জাপানি এনকেফালাইটিসের সংক্রমণ নয়, অজানা জ্বর নিয়ে মুখ খুললেন জনস্বাস্থ্য আধিকারিক