AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফিরে দেখা ২০২৪: ছাপোষা মহিলাদের পথে নামা থেকে বাঘ ‘বন্দি’ খেলা, ফিরে দেখুন সেই সন্দেশখালি

Sandeshkhali: বাঙালি যখন ব্যস্ত রাজনীতির চর্চায়, সেই সময় বাংলা তোলপাড় হল সন্দেশখালির ঘটনায়। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার ছোট্ট এই গ্রাম হঠাৎ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল। না শুধু এ রাজ্য নয়, গোটা দেশের একাংশ মানুষের মুখে-মুখে শুধু সন্দেশখালির উদাহরণ।

ফিরে দেখা ২০২৪: ছাপোষা মহিলাদের পথে নামা থেকে বাঘ 'বন্দি' খেলা, ফিরে দেখুন সেই সন্দেশখালি
ফিরে দেখা সন্দেশখালিImage Credit: Tv9 Bangla
| Updated on: Dec 17, 2024 | 9:03 PM
Share

তখন বছর প্রায় শুরু হয়েছে। চায়ের দোকান, পাড়ার অলিগলিতে একটাই আলোচনা। লোকসভা ভোটে রেজাল্ট কী হবে? তৃণমূল কত পাবে নাকি বিজেপি টেক্কা দেবে…। বাঙালি যখন ব্যস্ত রাজনীতির চর্চায়, সেই সময় বাংলা তোলপাড় হল সন্দেশখালির ঘটনায়। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার ছোট্ট এই গ্রাম হঠাৎ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল। না শুধু এ রাজ্য নয়, গোটা দেশের একাংশ মানুষের মুখে-মুখে শুধু সন্দেশখালির উদাহরণ। গ্রামের ছাপোষা মহিলারা মশাল নিয়ে, লাঠি ঝাঁটা হাতে নামলেন পথে। অভিযোগ করলেন হেনস্থা-নিগ্রহের। সেখানকার ‘স্বঘোষিত’ বাঘ তথা তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের ‘কুকীর্তির’ কথা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করলেন। আর যেন ঠিক এই ‘টোপ’ খাওয়ার জন্যই বসেছিল বিরোধী দলগুলি। লোকসভা ভোটের আগে ‘দিল্লির লাড্ডু’-র মতো লুফে নিয়েছিল তারা। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে পথে বাম-বিজেপি সকলেই। তৃণমূলও তখন ব্যস্ত টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দিতে। চারিদিকে মাছের ভেরি, সুবজে ঢাকা সেই গ্রাম বছরের শুরুতে পরিণত হয়েছিল যেন জতুগৃহে। ইডি-সিবিআই-এর ভারী বুটের আনাগোনা থেকে রাজনৈতিক নেতাদের কর্মসূচি সে সময়ে সন্দেশখালি দখল করে নিয়েছিল সংবাদপত্রের শিরোনাম। এক নজরে ফিরে দেখা যাক সেই ঘটনা….

সূত্রপাত…

রেশন দুর্নীতির তদন্তে তখন গ্রেফতার হচ্ছেন একের পর এক তাবড় তৃণমূল নেতা। বাকিবুর রহমান থেকে শুরু করে প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গরাদের পিছনে। তদন্ত করছে ইডি। সেই সময় নাম উঠে আসে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান ইডি আধিকারিকরা। অভিযোগ, শাহজাহানের এক ফোনে সংঘবদ্ধ হয় তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এরপর মাঝরাস্তায় ইডি আধিকারিকদের উপর হামলা। রক্ষা পাননি জওয়ানরা। নিন্দা পড়ে যায় সব মহলে। সেই প্রথম জানা যায় শেখ শাহজাহানের নাম। এ দিকে, যাঁর বিরুদ্ধে এত মারাত্মক অভিযোগ, সে কিন্তু ততক্ষণে বেপাত্তা। কিছুতেই খোঁজ মিলছিল না তার। কখনও পুলিশ তো কখনও কেন্দ্রীয় এজেন্সি বারবার শাহজাহানকে ধরা দেওয়ার কথা বলেন।

মশাল হাতে মহিলারা নামলেন ময়দানে…

শাহজাহান যখন বেপাত্তা। সেই সময় শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের পোলট্রি ফার্ম জ্বালিয়ে দেওয়া হল আগুনে। বাড়িতেও ধরিয়ে দেওয়া হল আগুন। কারণ, তখন তেঁতে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, গ্রামে অত্যাচার চালান শিবু-উত্তমরা। জোর খাঁটিয়ে গ্রামবাসীদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জমির জবরদখল থেকে শুরু করে একাধিক অত্যাচারের অভিযোগ তুলে পথে নামেন তাঁরা। এরপর এগিয়ে আসেন গ্রামের মহিলারা। মুখ খোলেন শেখ শাহজাহানের  বিরুদ্ধে। লাঠি ঝাঁটা হাতে গ্রামের নিপাট সাধারণ মহিলাদের ‘রণরঙ্গিনী’ মূর্তি সে সময় দেখেছিল গোটা বাংলা। কেউ  বললেন, “শাহজাহান পার্টি অফিসে রাতের বেলা মিটিং করতে ডাকে।”  কেউ আবার বললেন, “ওর দলবদল আমার ছেলেকে মেরেছে। জোর করে জমি দখল করেছে।” শুধু শাহজাহান একা নয়, দখলদারিতে নাম জড়ায় তাঁর ভাইদেরও।

রাজনীতির চর্চায় সন্দেশখালি

গ্রামের মহিলারা যে সময় পথে, সেই এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে শাসকের  বিরুদ্ধে সরব বিরোধীরা। সিপিএমের বৃন্দা কারাত, মহম্মদ সেলিম, দীপ্সিতা ধর, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা যখন এই নিয়ে সরব। সেই সময় মাটি কামড়ে সেখানে পড়ে বিজেপিও। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার আন্দোলনের রাশ ধরে রাখতে সেখানে নিলেন ঘরভাড়া। অপরদিকে, তখন ব্যাকফুটে শাসকদল। কিন্তু হাল ছাড়েননি তারাও। সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পরিস্থিতি সামাল দিলে এলাকায় ছুটলেন পার্থ ভৌমিক সুজিত বসুরা। আশ্বাস দেওয়া হল জমি হারাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার। সেই সঙ্গে কেড়ে নেওয়া হল শাহজাহান, উত্তম, শিবুদের  পদ।

গ্রেফতার শাহজাহান…

যে সময় বিক্ষোভ আন্দোলনে সন্দেশখালি জ্বলছে। সেই সময় বেপাত্তা শাহজাহান। প্রায় ৫১ দিন পর রাজ্যপুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় সন্দেশখালির বাঘ। তারপর তাকে হেফাজতে নেয় কেন্দ্রীয় এজেন্সি। বর্তমানে জেলেই রয়েছে সে।

লোকসভা ভোটে সন্দেশখালি…

সন্দেশখালি রেশ কাটতে না কাটতেই এগিয়ে আসে লোকসভা ভোট। বিজেপি সেই সময় প্রার্থী করে  রেখা পাত্রকে। কে এই রেখা? সন্দেশখালির ভূমিকন্যা। মহিলাদের আন্দোলনের নেত্রী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, তৃণমূলকে হঠাতে রেখাকে প্রার্থী করার একটাই কারণ, তিনি ‘হাওয়া’ বোঝেন সন্দেশখালির। ছেড়ে দেওয়ার  পাত্র নয় তৃণমূলও। পাল্টা চাল দিল তারা। দাঁড় করাল প্রবীণ নেতা হাজি নুরুল ইসলামকে। আর সিপিএম নিজের জমি ফিরে পেতে প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের উপর ভরসা রাখল। কিন্তু এবারও দুর্নীতি কোনওভাবেই দাগ কাটতে পারল না। ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন হাজি নরুল।

একের পর এক ভিডিয়ো…

এ দিকে, ভোট মিটতেই প্রকাশ্যে আসতে থাকল একের পর এক ভিডিয়ো। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতে ফের শুরু আলোচনা। ভিডিয়োর সারবস্তু কী? জানা গেল, গ্রামের মহিলাদের দিয়ে টাকার  বিনিময়ে বিজেপি নাকি এই আন্দোলন করিয়েছে। নাম জড়াল শুভেন্দুরও। যদিও, সবটাই তৃণমূলের চাল বলেই দাবি করেছিল পদ্মশিবির।