Kamarhati: ছিদ্র ধরতে ব্যর্থ পুরসভা, নকশা না থাকায় পোয়াবারো কলেরার
Kamarhati Municipality: কামারহাটি পুরসভা সূত্রে খবর, এলাকায় কীভাবে পাইপলাইন বিস্তুত, কোথা থেকে কোথায় সেই পাইপলাইন গিয়েছে, কীভাবে সেই পাইপলাইন রয়েছে, কোন কোন জায়গা মেরামত করতে হবে তার সম্পূর্ণ নকশা হারিয়ে গিয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনা: এখনও অনিয়ন্ত্রিত কলেরা সংক্রমণ। রোজই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মঙ্গলবার ফের নতুন করে কলেরা (Cholera) আক্রান্ত হলেন আরও ২২ জন। কেন বাড়ছে সংক্রমণ? গোটা এলাকার পাইপলাইনে কোথায় ছিদ্র, কোথা থেকে কোথায় লাইন, পূর্ণাঙ্গ নকশাই নেই পুরসভার কাছে অভিযোগ কামারহাটির (Kamarhati) বাসিন্দাদের। ফলে মেরামতিতে বিস্তর সমস্যা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরসভার পক্ষ থেকে জলাধারগুলিতে ক্লোরিনের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তাতে লাভ হচ্ছে না বিশেষ। পাইপলাইনে ছিদ্র দিয়েই কলেরার জীবাণু প্রবেশ করছে। কিন্তু, পাইপলাইনে ছিদ্র কোথায় তা ধরতে অপারগ পুরসভা। ফলে, মেরামতিতে চলে যাচ্ছে বিস্তর সময়। বাড়ছে সংক্রমণও।
কামারহাটি পুরসভা সূত্রে খবর, এলাকায় কীভাবে পাইপলাইন বিস্তুত, কোথা থেকে কোথায় সেই পাইপলাইন গিয়েছে, কীভাবে সেই পাইপলাইন রয়েছে, কোন কোন জায়গা মেরামত করতে হবে তার সম্পূর্ণ নকশা হারিয়ে গিয়েছে। ফলে, পাইপলাইন মেরামতিতে যেখানে নকশা থাকলে তিনদিনে কাজ করা সম্ভব, সেখানে চলে যাচ্ছে সাতদিন। নকশা না থাকায় খানিক আন্দাজেই চলছে মেরামতির কাজ। পাশাপাশি, জীবাণুনাশে জলে ক্লোরিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু, তাতে কার্যত জীবাণুনাশ হচ্ছে না।
পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য় বিমল সাহা জানিয়েছেন, অতি দ্রুত নকশা খুঁজে বের করা হবে। পাইপলাইন মেরামতির কাজ যাতে আরও দ্রুত গতিতে হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। আগেই তিনটি অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল। সম্প্রতি আরও তিনটি স্বাস্থ্য়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। মোট ছয়টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আক্রান্তদের চিকিত্সা চলছে বলে জানিয়েছেন বিমল সাহা।
কামারহাটি পুরসভায় (Kamarhati Municipality) উপ-মুখ্য প্রশাসক তুষার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুরসভার তরফে কোনও গাফিলতি থাকলে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিকাশি ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে নজর দেওয়া হচ্ছে। সংক্রমণ যাতে আর না বৃদ্ধি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
কামারহাটিতে (Kamarhati) কলেরার উপসর্গ নিয়ে রোজই স্বাস্থ্য শিবিরে আসছেন একাধিক। এখনও সাগরদত্ত হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ২০০ জনের অধিক। কামারহাটি পৌরসভার ২ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সংক্রমণ কমলেও ১ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংক্রমণ (Cholera) এখনও নিয়ন্ত্রিত নয়। আক্রান্তদের মধ্যে বয়স্ক ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ কম তাঁরাই মূলত আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে, গুরুতর আক্রান্ত কেউ নন। সকলেরই মৃদু উপসর্গ দেখা গিয়েছে। অধিকাংশেরই মূলত পেট ব্যথা, বমি, জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছে। চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিরাময় সম্ভব।
গত শুক্রবার কলেরায় নতুন করে আক্রান্ত হন ১৮ জন। আক্রান্তদের জন্য তিনটি অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে। কামারহাটি (Kamarhati) পুরসভা সূত্রে খবর, নাইসেডের রিপোর্টে সম্প্রতি কলেরা সংক্রমণের খবর এসেছে। বৃহস্পতিবারই কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩জন। মূলত জল থেকেই এই সংক্রমণ বলছেন চিকিত্সকেরা। যে ১৮ জন আক্রান্ত চিকিত্সা করাতে আসেন তাঁদের প্রাথমিক চিকিত্সা করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুরসভার কর্মীরা পরিশোধিত জল পানের জন্য মাইকে প্রচার করে চলেছেন। জল শোধনের জন্য বিলি করা হচ্ছে হ্যালোজেন ট্যাবলেট, ওআরএস ও অ্যান্টিবায়োটিক। এছাড়াও কামারহাটির যে জলাধার থেকে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়, সেই জলাধারও ওষুধ দিয়ে পরিশোধনের কাজ চলছে এমনটাই খবর পুরসভা সূত্রে।
ঠিক কীভাবে এই সংক্রমণ বৃদ্ধি তা জানতে নাইসেডে নমুনা পাঠিয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। মোট ৯ জনের নমুনা পাঠানো হয় নাইসেডে। সেখানকার প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, ডায়ারিয়া নয়, কলেরার জীবাণু থেকেই সংক্রমণ বৃদ্ধি কামারহাটি পুরসভা এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা হলেই জল জমে যায় এলাকায়। প্রবল বৃষ্টিপাতে জল যন্ত্রণার সঙ্গে বাড়ে পেটের অসুখও। এই বৃষ্টির কারণেই কোনওভাবে পানীয় জলেও ডায়ারিয়ার জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ।
সম্প্রতি, কামারহাটির ১,২,৩,৪ নম্বর ওয়ার্ডে আচমকাই গত মঙ্গলবার থেকে ডায়ারিয়ার উপসর্গ নিয়ে একযোগে সাগরদত্ত হাসপাতালে ভর্তি হন প্রায় ৬৮ জন। তাঁদের মধ্যে ২ জন মারা যান। পরে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পরে জানা যায়, ২জনের জল থেকে সংক্রমণের জেরে মৃত্যু হলেও বাকি দুজনের মৃত্যু হয় কিডনিজনিত অসুখে।
আগেই কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra) জানিয়েছিলেন, “কামারহাটিতে স্বাস্থ্যদফতরের নির্দেশে বিশেষজ্ঞ দল পৌঁছেছে। আমাদের দলের স্বেচ্ছাসেবকরা তৈরি রয়েছেন। আমার বাড়ির ল্যান্ডলাইন নম্বর হেল্পলাইন হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক মুহূর্তে আমাদের দলের কর্মীরা কাজ করছেন। আশা করছি দ্রুত এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।”
আরও পড়ুন: পৌরসভায় গুপ্ত কক্ষ, ৬ফুটের আলমারি, জানেনই না পুরপ্রশাসক, শ্যাম-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য!
আরও পড়ুন: বাথরুমে ঝাঁটার আড়াল থেকে ক্যামেরার উঁকি! ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে গিয়ে পিলে চমকে গেল মহিলার