Jitendra Tiwari: ‘এ রাজ্যে পিসিরই গুরুত্ব, তাই পিসি চাইছি’, হঠাৎ জিতেন্দ্রর গর্জনে নিশ্চুপ হয়ে যায় এজলাস

Asansol: আরও ছ'দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়েছে জানতে পেরেই কোর্টের মধ্যেই প্রতিবাদ করেন তিনি। বলেন যে, তিনি কোনও 'এন্টারটেইনার' নয়।

Jitendra Tiwari: ‘এ রাজ্যে পিসিরই গুরুত্ব, তাই পিসি চাইছি’, হঠাৎ জিতেন্দ্রর গর্জনে নিশ্চুপ হয়ে যায় এজলাস
(গ্রাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 27, 2023 | 5:46 PM

আসানসোল: আসানসোল কম্বলকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বারংবার বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলে আসছিলেন তিনি জামিন চান না। পুলিশি হেফাজতেই থাকতে চান। তবে তদন্ত যেন দ্রুত হয়। সোমবারও তাঁকে তোলা হয় আসানসোল সিজিএম আদালতে। দীর্ঘ আট দিনের পুলিশি হেফাজত শেষে বিজেপি নেতাকে তোলা হয় আদালতে। তবে এ দিন দেখা গেল অন্য ছবি। ভরা এজলাসেই পুলিশের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন জিতেন। আরও ছ’দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়েছে জানতে পেরেই কোর্টের মধ্যেই প্রতিবাদ করেন তিনি। বলেন যে, তিনি কোনও ‘এন্টারটেইনার’ নয়। টানটান উত্তেজনা ভরা এজলাসে এ দিনের মতো শেষ হয় জিতেন্দ্র মামলার শুনানি। আগামিকাল ফের তাঁকে আদালতে তোলা হবে। তবে আজকের সওয়ালে থামিয়ে রাখা যায়নি বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ও তাঁর মক্কেলকে। এজলাসে জিতেন্দ্র ও তাঁর আইনজীবী কী কী বললেন, তা তুলে ধরা হল।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি (বিচারকের সামনে): আমি জামিন চাইছি না আমাকে পিসি অর্থাৎ পুলিশ হেফাজতই দেওয়া হোক। কিন্তু এই ৮ দিনে অর্থাৎ ১৯২ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে মাত্র ২ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে। আমি পুলিশের এন্টারটেইনার নই। সারাদিন বসিয়ে রেখে রাতে দশ মিনিট শুধু জিজ্ঞাসাবাদ। শুধু আটকে রাখার জন্যই যেন পিসি অর্থাৎ পুলিশ কাস্টডি চাওয়া হয়েছে। এই ঘটনা তীব্র প্রতিবাদ করছি।”

জিতেন্দ্র তিওয়ারি (বিচারকের সামনে) : ছ’দিনের পুলিশি হেফাজত নিয়ে আমি আপত্তি জানাচ্ছি না। কিন্তু আমাকে যেন পুরোপুরি তদন্তের স্বার্থে কাজে লাগানো হয়। যদি মনে হয় তদন্তে আমাকে প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন তাও রাজি আছি। কিন্তু উপরতলার কোনও বাবুকে খুশ করার জন্য পুলিশ আমাকে এভাবে আটকে রেখেছে। এটা আমার কাছে বিড়ম্বনার।

জিতেন্দ্র তেওয়ারি (বিচারকের সামনে) : আমি আসানসোলের মেয়র ছিলাম। মেয়র থাকাকালীন এই আদালতেই নতুন বিল্ডিং তৈরির সময় এক শ্রেণির মাফিয়ারা তোলাবাজি চেয়েছিল। আদালত নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই আদালত নির্মাণের কাজ শেষ করিয়েছি। আজ ওই মাফিয়ারা পুলিশের বেষ্টনীতে রয়েছে। আর আমাকে থাকতে হচ্ছে জেলে। এটা আমার কাছে বিড়ম্বনা,আমার কাছে ব্যথার। এটা হয়ত কোনও আইনি কথা নয়। কিন্তু আমি আমার ব্যথা ও কষ্টের কথা জানালাম।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি ( আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র বিচারক তরুণ মণ্ডলের উদ্দেশে): আমি পলাতক ছিলাম না। আমি দিল্লিতে গিয়েছিলাম সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিনের আবেদনের জন্য। আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় দিল্লির বিভিন্ন ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন। এর মাঝে আমি আসানসোলে একাধিক মিছিল করেছি। কলকাতা বইমেলায় প্রোগ্রাম করেছি। বিচারপতি মান্থার ওখানে গিয়ে আমি দলের কাজ করেছি। সবই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা যেত। আমার নামে ১৫ মার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। এটা দেখিয়ে সেশন কোর্ট এবং হাইকোর্টের ৪৩৮ এ ধারায় আমার জামিন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু লার্নার কোর্টে পুলিশ তথ্য গোপন করেছে। সুপ্রিম কোর্টে যে এসএলপি (স্পেশাল লিভ পিটিশন) করা আছে, সেই তথ্য জানানো হয়নি আদালতকে। আমার এসএলপি গ্রহণ হয়েছে এবং ২০ তারিখ শুনানি রয়েছে। একথা জানলে নিশ্চয়ই লার্নার কোর্ট বিষয়টি বিবেচনা করত। কিন্তু তার আগেই এইভাবে আমাকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে দিল্লি থেকে। এই ৮ দিনে আমার বাড়ি থেকে একটি টেলিফোন শুধু সিজ করেছে পুলিশ। কম্বলকাণ্ডে পদপৃষ্ঠের দুর্ঘটনায় এই হচ্ছে তদন্তের অগ্রগতি।

শেখর কুণ্ড (জিতেন্দ্র তিওয়ারির আইনজীবী): ইতিমধ্যেই কাউন্সিলর গৌরব গুপ্তা এবং যুবনেতা তেজ প্রতাপ সিং আগাম জামিনের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। এই মামলার মূল অভিযুক্ত চৈতালিতে তেওয়ারি তিনিও অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশে রয়েছেন বা যাকে বলা হয় বিশেষ প্রটেকশনে। তাহলে জিতেন্দ্র কেন এভাবে আটকে থাকবেন ?

জিতেন্দ্র তিওয়ারি (ফের নিজেই বিচারককে বলেন): আমি জামিনের আবেদন চাইছি না। পুলিশ যখন পিসি চাইছে আমাকে পিসিই দেওয়া হোক। কিন্তু আমাকে যেন পরিপূর্ণভাবে তদন্তে ব্যবহার করা হয়। হেনস্থার উদ্দেশে পিসি বা পুলিশ কাস্টডি নয়।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি (ভরা এজলাসে কটাক্ষ): এখন তো “পিসিরই ” গুরুত্ব আছে বেঙ্গলে। তাই পিসিই দেওয়া হোক।

এ দিন আসানসোল উত্তর থানা থেকে যখন আদালতের পথে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে আনা হয় তখন তিনি থানা থেকে বেরিয়ে শহরবাসীকে রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানান। মলয় ঘটককে ইডির তলব প্রসঙ্গে বলেন,“আসানসলবাসী হিসেবে কারও অকল্যাণ হোক চাই না।” এ দিন বেলা আড়াইটা নাগাদ আদালতে তোলা হয় জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে। কোর্টে ঢোকার মুখে বলেন,“কলকাতার কাছে আসানসোল মাথা নত করবে না। আরও দশটা মামলা করুক। এক বছর জেলে রাখুক। তবু কলকাতার কাছে আসানসোল পরাজয় স্বীকার করবে না।”